শক্তির সন্ধানে মানুষ – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রবন্ধ রচনা

প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা, এখানে আমরা শক্তির সন্ধানে মানুষ – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রবন্ধ রচনা নিয়ে আলোচনা করলাম। খুব সুন্দর করে গুছিয়ে এই প্রবন্ধ রচনাটি লেখা হয়েছে। আশা করি তোমাদের সবারই ভালো লাগবে। ধন্যবাদ

শক্তির সন্ধানে মানুষ

শক্তি সভ্যতার মাপকাঠি। আর, প্রচলিত এবং প্রায়োগিক অর্থে মানবসভ্যতার শক্তির মূল উৎস হল জীবাশ্ম-জ্বালানি। কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং খনিজ তেল অর্থাৎ পেট্রোলিয়ামই হল জীবাশ্ম-জ্বালানি । কিন্তু বর্তমানে শক্তির এই প্রচলিত উৎসটি মানবসভ্যতাতে দুটি প্রধান সমস্যা তৈরি করেছে। প্রথমত, এইসব উৎস পোড়ানোর সময় সেই জ্বালানি থেকে নির্গত হয় সালফার, নাইট্রোজেন অক্সাইড, কার্বন ডাইঅক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড এবং অন্য নানাপ্রকার রাসায়নিক পদার্থ। এইসব ক্ষতিকারক পদার্থ ব্যাপকহারে পরিবেশদূষণ ঘটায়। দ্বিতীয়ত, কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং খনিজ তেলের ভাণ্ডার যেমন সীমিত, তেমনি মানুষের শক্তির চাহিদা ক্রমবর্ধমান। একারণেই, জীবাশ্ম-জ্বালানির ওপর কেবল নির্ভর করে থাকলে অচিরেই মানুষের শক্তির উৎস নিঃশেষিত হয়ে যাবে। তাই নতুন কয়লাখনির সন্ধানে বা নতুন তেলের উৎসের সন্ধানে কেবল না ছুটে মানুষ আজ নতুন শক্তির সন্ধানে রত।

তাই বিকল্প হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশ পারমাণবিক শক্তিকেন্দ্র বসিয়েছে। কিন্তু পারমাণবিক শক্তিরও বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। পারমাণবিক শক্তিকেন্দ্রে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয় ইউরেনিয়াম। এই খনিজ পদার্থটির ভাণ্ডারও সীমিত। তা ছাড়া, এই খনিজটি কয়েকটি মাত্র দেশে পাওয়া যায় ব’লে ইউরেনিয়াম আমদানি অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক কারণে সমস্যার সৃষ্টি করে। পারমাণবিক জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রেও নানাবিধ সমস্যা রয়ে গেছে। পারমাণবিক চুল্লি জীবাশ্ম-জ্বালানি থেকেও অনেক বেশি পরিবেশদূষণ ঘটায় ।

পৃথিবীর বর্তমান প্রযুক্তিবিদ্যার স্তরে একমাত্র যে শক্তির উৎস আশার সার করেছে, তা হল সৌরশক্তি। জীবাশ্ম-জ্বালানি বা পারমাণবিক শক্তির মতো সৌরশক্তি মূলধনী সামগ্রী নয় বলে অনন্তকাল ধরে এই শক্তিকে মানুষ কাজে লাগাতে পারবে। তা ছাড়া, এই শক্তি পরিবেশসহায়কও বটে। আর, ভারতের মতো রৌদ্রপূর্ণ দেশে তো এই শক্তি প্রয়োগের সুযোগ অফুরন্ত।

বিশেষ ধরনের তাপগ্রাহকের সাহায্যে সৌরতাপ সংগ্রহ করে জলীয় বাষ্প উৎপাদন করা হয়। সেই বাষ্পের সাহায্যে জেনারেটর চালিয়ে উৎপাদন করা হয় বিদ্যুৎ। আজকাল অন্য বিভিন্ন পদ্ধতিতেও সৌরশক্তিকে কাজে লাগানো হচ্ছে।

বর্তমানে সৌরশক্তি ছাড়াও অন্যান্য বিভিন্ন পরিবেশ সহায়ক শক্তির সন্ধান করছে মানুষ। বায়ুশক্তিকে কাজে লাগিয়ে হাওয়া-কলের দ্বারা বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। সমুদ্রের উপরিতল ও গভীর অংশের তাপমাত্রার পার্থক্যকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদনের চেষ্টা চলছে। জীবাণুর সাহায্যে জৈববস্তু পচিয়ে তা থেকেও জ্বালানি গ্যাস এবং জ্বালানি তেল উদ্ভাবনের পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে। শর্করা-জাতীয় ফসল থেকে উৎপন্ন বায়োইথানল জ্বালানি আমেরিকা ও ব্রাজিলে গাড়ি চালাতে ব্যবহৃত হচ্ছে। ভোজ্য তেল এবং প্রাণীজ চর্বি থেকে তৈরি বায়োডিজেল ব্যবহার ইউরোপে ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে। নির্দিষ্ট শৈবাল তথা উদ্ভিদ থেকে তৈরি গ্রিন ডিজেল ব্যবহৃত হচ্ছে আয়ারল্যান্ডে।

এভাবেই বিকল্প শক্তির সন্ধানে এগিয়ে চলেছে মানুষ। এক্ষেত্রে বর্তমান বিশ্বের শক্তি বিষয়ক বিজ্ঞানীরা দুটি লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে চলেছেন৷ প্রথমত, তাঁরা এমন সব শক্তির উৎসের সন্ধানে গবেষণা করছেন, যার ভাণ্ডার কখনও শেষ হওয়ার নয়। দ্বিতীয়ত, সেইসব শক্তি উৎপাদন ও ব্যবহার করতে পরিবেশদূষণও ব্যাপকহারে হবে না। এইসব শক্তির মধ্যে সৌরশক্তির ভবিষ্যৎই সবচেয়ে উজ্জ্বল। একারণেই, ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দের ৩ মে তারিখটিকে রাষ্ট্রপুঞ্জ ‘সূর্য দিবস’ হিসাবে ঘোষণা করেছিল।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment