১৯২০ খ্রিস্টাব্দের পর শ্রমিক আন্দোলনের প্রসার কীভাবে ঘটেছিল

প্রশ্ন – ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের পর শ্রমিক আন্দোলনের প্রসার কীভাবে ঘটেছিল Class 10 | 8 Marks

উত্তর: ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাস প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও তার পরবর্তী সময়কাল ছিল সংগঠিত শ্রমিক আন্দোলনের সময়কাল।

প্রসারের কারণ : ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের পর শ্রমিক আন্দোলনের প্রসারের কারণগুলি হল –

প্রথমত, প্রথম বিশ্বযুদ্ধজনিত কারণে শ্রমিক ছাঁটাই, মজলি হাস, অর্থনৈতিক সংকট শ্রমিকদের মধ্যে দুরাবস্থার সৃষ্টি করে।

দ্বিতীয়ত, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী দু’বছরে (১৯১৮-২০ খ্রি.) ভারতে বেশ কিছু শ্রমিক সংগঠন গড়ে ওঠে এবং এগুলির মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযােগ্য ছিল লালা লাজপত রায়ের উদ্যোগে গঠিত নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস বা AITUC

তৃতীয়ত, ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে রুশ বিপ্লব এবং ১৯২০-র দশকে ভারতের অভ্যন্তরে মুজাফফর আহমদ, এস এ ডাঙ্গে, শওকত ওসমানী প্রমুখ কমিউনিস্ট নেতাদের নেতৃত্ব শ্রমিক আন্দোলনে উৎসাহের সঞ্চার করে।

শ্রমিক আন্দোলনের প্রসার : ১৯২০-২২ খ্রিস্টাব্দের ধর্মঘট : সহযােগ আন্দোলনের সময়কালে ভারতের বিভিন্ন শিল্প-কারখানা, রেলওয়ে, ট্রাম, খনি, চা বাগান প্রভৃতির শ্রমিক ও কুলিরা যােগদান করেছিল, যেমন— 

১) বাংলা : কলকাতার উৎপাদন শিল্প, পাট শিল্প ও বাংলার চটকলগুলিতে ১৩৭ টি ধর্মঘট হয় এবং এগুলির অধিকাংশের সঙ্গেই জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের যােগ ছিল।। 

২) আসাম : আসামের চা-বাগিচা, আসাম-বাংলা রেলওয়ের শ্রমিকদের ধর্মঘট ছিল খুব উল্লেখযােগ্য। 

৩) বােম্বাই : অসহযােগ আন্দোলনকালে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে প্রিন্স অফ ওয়েলস-এর ভারত সফরকালে দেশজুড়ে শ্রমিক ধর্মঘট হয়। শুধুমাত্র বােম্বাইয়ের সুতিকলগুলির ১,৪০,০০০ শ্রমিক ধর্মঘটে যােগ দেয়।

৪) বিহার : জামসেদপুরের টাটা ইস্পাত কারখানা এবং স্বামী বিশ্বানন্দ ও স্বামী দর্শনানন্দের নেতৃত্বে রানিগঞ্জের কয়লাখনিতে ব্যাপক ধর্মঘট হয়।

১৯২৭ খ্রিস্টাব্দের ধর্মঘট : শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দ ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ওই বছর খড়গপুরের বেঙ্গলনাগপুর রেলের ২৫ হাজার শ্রমিক ২৬ দিন ধরে ধর্মঘট করেছিল।

১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ধর্মঘট : সাইমন কমিশন বিরােধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে জাতীয় রাজনীতিতে উদ্দীপনার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে লিলুয়ার ইস্ট ইন্ডিয়ান ও সাউথ ইন্ডিয়ান রেলে ধর্মঘট হয়। এ ছাড়া ওই বছর বােম্বাইয়ের বস্ত্র শিল্প শ্রমিকরা ব্যাপক ধর্মঘট করে এবং পরের বছর বস্ত্রকল শ্রমিকদের ‘গিরনি কামগার ইউনিয়ন’-এর নেতৃত্বে ধর্মঘট ছিল খুব উল্লেখযােগ্য।

১৯২৯-৩০ খ্রিস্টাব্দের ধর্মঘট : ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মহামন্দা দেখা দিলে বােম্বাইয়ের বস্ত্রশিল্পের শ্রমিকধর্মঘটে নামে। সেই বছরেই কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার শ্রমিক ধর্মঘট ছিল উল্লেখযােগ্য। 

উপসংহার : শ্রমিক আন্দোলনের ব্যাপকতা লক্ষ করে ব্রিাট সরকার শ্রমিক নেতা সহ কমিউনিস্টদের দমনের জন্য সারা ভারত জুড়ে ৩২ জন শ্রমিক নেতাকে গ্রেপ্তার করে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা। শুরু করে। এর ফলে শ্রমিক আন্দোলন আপাতত শ্লথগতি সম্পন্ন হয়ে পড়ে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment