প্রাকৃতিক বিপর্যয় : সমস্যা ও প্রতিকার – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

প্রাকৃতিক বিপর্যয় : সমস্যা ও প্রতিকার

ভূমিকা:- মন্বন্তরে মরিনি আমরা, মারি নিয়ে ঘর করি’—খরা, বন্যা, মহামারি মানুষের জীবনে ওতপ্রােতভাবে জড়িয়ে আছে। বিজ্ঞান সভ্যতাকে উন্নতির চরম শিখরে পৌছে দিয়েছে, কিন্তু মানুষের জীবনের আঘাতকারী প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে বশ করতে পারেনি। এখানেই বিশ্বপিতার অদৃশ্য শক্তির মাহাত্ম্য লুকিয়ে আছে। এখানে মানুষ অসহায়, বড়াে নিরুপায়। বিজ্ঞানের ঔদ্ধত্য বিশ্বপিতার রুদ্ররূপের কাছে হার মানে।

প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের স্বরুপ:-  প্রাকৃতিক বিপর্যয় বিভিন্ন রূপে আত্মপ্রকাশ করে। ভূমিকম্প, খরা, বন্যা, মহামারি, আয়লা, সুনামি—কত নাম, কত রূপ। এক এক ধরনের বিপর্যয়ের স্বরূপ দেখে তাদের নামকরণও  হয়েছে। তবে যে-নামেই তাকে ডাকা হােক-না-কেন, তার নাম ধ্বংস। ভূমিকম্পে বারবার কেঁপে উঠেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে সভ্যতার ইমারত। স্বজন হারানাের আকুলতা আকাশ-বাতাসকে মুখর করে তুলেছে। খরা মানুষের জীবনের স্বাচ্ছন্দ্য কেড়ে নিয়েছে। অনাবৃষ্টির আকাশের আগুন ফুটিফাটা করে মানুষের বুকে ফাটল ধরিয়েছে। ক্ষুধার অন্ন, তৃষার জল—সবই দুষ্প্রাপ্য হয়ে ওঠে খরাক্লিষ্ট এলাকায়। বন্যার জলের উদ্দাম তাণ্ডবে কখনও-বা ভেসে গেছে মানুষের ঘরবাড়ি, মানুষ, গবাদিপশু। আয়লা, আমফান কিংবা সুনামির রূপও ভয়ংকর। এই সমস্ত প্রাকৃতিক বিপর্যয় মানবজীবনে সমস্যা সৃষ্টি করেছে। সেই সমস্যা থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে মানুষের কেটে গেছে বহু সময়। কিন্তু এই সমস্ত প্রাকৃতিক বিপর্যয় মানুষের কৃতকর্মের ফলেই ঘটে এবং মানুষ নিজেই এগুলিকে ডেকে আনে। সমস্ত কাজের পিছনে নানান কারণ বর্তমান—সেইসব কারণ অনুসন্ধান এবং তার প্রতিকারের ভাবনা ভাবার দিন হয়তাে এসেছে।

প্রতিকার:- বিশ্বের প্রকৃতিজগতে দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে, ফলে নানারকম প্রাকৃতিক অঘটন ঘটার ক্ষেত্র প্রস্তুত হচ্ছে। মানুষ প্রকৃতির ওপর নানাভাবে আঘাত হানছে, তাই প্রকৃতি তার প্রতিশােধ নিচ্ছে। বিশ্বে জনসংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু গাছপালা বাড়ছে না। যুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য নানারকম পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে, যুদ্ধ চলছে—সবই প্রভাব ফেলছে প্রকৃতির ওপর। সবক্ষেত্রে।  ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি। অথচ সেই ভারসাম্য রক্ষার বিষয়ে আমরা কেউ ভাবি না। ভূগর্ভস্থ জল নির্বিচারে তুলে নেওয়ায় ভূগর্ভে শূন্যতার সৃষ্টি হচ্ছে, ভূমিকম্প হচ্ছে। ভৌগােলিক কোনাে বিশেষ কারণেও এটি ঘটে থাকে। বিশ্বউষ্ণায়ন এখন একটি পরিচিত কথা। কিন্তু তা রােধ করার কোনাে প্রয়াস আমাদের নেই। পর্বতশিখর ও মেরুপ্রদেশে বরফ গলার ফলে সমুদ্রের জলস্তর বাড়ছে, স্বাভাবিক কারণেই নীচু স্থলভাগ প্লাবিত হচ্ছে। জলাধারে জল সংরক্ষণের অভাবে খরা মানুষের জীবনে অভিশাপ হয়ে নেমে আসছে। সম্প্রতি আমফান বিপুলসংখ্যক মানুষের ক্ষতিসাধন করেছে। যাই হােক, প্রাকৃতিক বিপর্যয় মানুষের জীবনে যাতে না-আসতে পারে, তার জন্য মানুষের সচেতন হওয়া উচিত।

উপসংহার:-  দুঃখ-সুখের এই ছােট্ট জীবনে সবাই চায় সুখস্বাচ্ছন্দ্য পেতে, কিন্তু বারবার ঝড়ে ঘর ভাঙে। প্রকৃতিকে শান্ত করতে পারলে সুখের ঘরে স্বাচ্ছন্দ্যে বাস করা যাবে। বাস্তব প্রকৃতিকে স্থির করতে গেলে মানবপ্রকৃতিকে আগে স্থির করা জরুরি। আমরা আর কবে বুঝব যে, এ পৃথিবী তােমার-আমার। আমাদের কণ্ঠে ধ্বনিত হােক—

“এ পৃথিবীকে এ শিশুর বাসযােগ্য করে যাব আমি। 
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।”

আরো পড়ুন

প্রাত্যহিক জীবন জল – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

আমাদের পরিবেশ : সমস্যা ও প্রতিকার – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

পরিবেশরক্ষায় অরণ্য – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

গাছ আমাদের বন্ধু – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

অরণ্য, অরণ্য প্রাণী সংরক্ষণ ও মানবজীবন – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

Read More »

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!