পরিবেশরক্ষায় অরণ্য – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

পরিবেশরক্ষায় অরণ্য

ভূমিকা:-

“জীবন সুন্দর হয়, পরিবেশ গুণে,
মানুষ মানুষ হয়, পরিবেশ জ্ঞানে।” 

আমাদের চারদিকে প্রাকৃতিক ও মানবিক প্রেক্ষাপটই হল পরিবেশ। গাছপালা, নদীনালা, কীটপতঙ্গ থেকে শুরু করে মানুষ, সকলেই সেই পরিবেশের শরিক। এর মধ্যেই জীবনের সৃষ্টি-বিস্তার-পরিণাম। সেই কারণেই মানবজীবনে প্রকৃতির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। 

বাস্তরীতির ভারসাম্য:-  আমাদের এই পরিবেশ কোনাে বিচ্ছিন্ন ব্যাপার নয়। এটি পারস্পরিক সহযােগিতার নিবিড় সূত্রে বাঁধা একটির সহযােগিতা না-থাকলে অপরটি পঙ্গু। বৈজ্ঞানিকরা এই বিচিত্র সহযােগিতার নাম দিয়েছেন, ‘বাস্তুরীতি’। এই ‘বাস্তুরীতির’ সূত্রে পৃথিবীর আবহমণ্ডল, তার বায়ুস্তর, তার পাহাড়-নদী-সাগর-মহাসাগর, মরুভূমি এবং তার অরণ্যানী যেমন আছে, তেমনি আছে এই পৃথিবীর তাবৎ জীব ও প্রাণীরা। বাস্তুরীতির’ ভারসাম্য বিঘ্নিত হলেই সর্বনাশ—সমগ্র পরিবেশ বিষময় হয়ে উঠবে। 

বায়ুস্তর ও আবহমণ্ডল:-  পৃথিবীর বায়ুস্তর হল মায়ের আঁচলের মতাে। মহাকাশের নানান ঝামেলা থেকে এই বায়ুস্তর প্রতিনিয়তই আমাদের বাঁচিয়ে আসছে। মহাজাগতিক ভয়ংকর উষ্ণতা এবং শৈত্যও বায়ুস্তরে আটকে যায়। বায়ুস্তরের উপর দিকে রয়েছে ‘ওজোন’, এই ওজোনস্তর আটকে দেয় মহাজাগতিক অতিবেগুনি রশ্মি। তাই পৃথিবীর টিকে থাকবার পক্ষে  এই বায়ুস্তর খুবই জরুরি। এটি গেল বাইরের দিক, পৃথিবীর ভিতরেও এই বায়ুস্তরের আর একটি রূপ আমরা দেখি। এই বাতাস-সমুদ্র আমাদের পৃথিবীকে বাসযােগ্য করে সুন্দর এক আবহমণ্ডল তৈরি করেছে। শীত, গরম উভয়ের মাঝামাঝি আবহাওয়া বিরাজ করে। যার কারণে পৃথিবীতে ঋতুপরিবর্তন ঘটে।

অরণ্যের প্রয়ােজন:-  এই বায়ুস্তর, আবহমণ্ডল এবং পরিবেশ পৃথিবীকে মানুষের এবং জীবজগতের বাসযােগ্য করেছে, তাকে ঠিকমতাে বজায় রাখতে অরণ্য সহযােগিতা করেছে । এই পৃথিবীতে জীব সৃষ্টি সম্ভব হত না, যদি-না পৃথিবীর আদি সৃষ্টির যুগে গাছপালা থাকত। অরণ্য আছে বলেই এই পৃথিবী আজও সবুজ রয়েছে। অরণ্য আছে বলেই অন্ন-রিক্তা বসুন্ধরার ভয়ংকর রূপ আমরা দেখতে পাই না। অরণ্য আছে বলেই আকাশ মেঘে ছায়া, বৃষ্টি নামে, নদীনালা ভরে যায় জলে। অরণ্য আছে বলেই এই পৃথিবীতে সভ্যতার বিকাশ হয়েছে। পৃথিবীতে সামগ্রিকভাবে পরিবেশ পরিসেবায় অরণ্যের ভূমিকা অসাধারণ। 

অরণ্যের পরিসেবা:-  ভারতে অরণ্যভূমি থাকলেও তা যথেষ্ট নয়। মাত্র ২২.৭ শতাংশ জমিতে অরণ্য আছে। প্রয়ােজন আরও ৭.৩ শতাংশ অরণ্যভূমি। না-হলে ভারতের আবহমণ্ডলের ভারসাম্য বিঘ্নিত হবে এবং শুকিয়ে যাবে শস্যভূমি।

ভারতে অরণ্যভূমি:-  অতীতে আমাদের এই ভারতবর্ষের এমন অবস্থা কিন্তু ছিল না। ভারতীয় সভ্যতা ‘আরণ্যক’ পরিবেশের মধ্যেই বিকাশলাভ করেছিল। এখানেই প্রথম ‘সামগান’ রচিত হয়েছিল। তপােবনে প্রচলিত হয়েছিল বিদ্যাশিক্ষার পাঠশালা। পৃথিবীর আদি মন্ত্র ধ্বনিত হয়েছি নদী ও সবুজে ঘেরা ভারতের প্রাকৃতিক পটভূমিতে।

পরিবেশ পরিসেবায় অরণ্য:- পরিবেশ পরিসেবায় অরণ্য কেবল ‘ইকোলজিক্যাল’ ভারসাম্য আনে না—আমাদের দেহ ও মন উভয়কেই গড়ে তােলে অরণ্য। অরণ্য তাই প্রাণমন্ত্র, সুস্থতার চাবিকাঠি । তাই অরণ্য সংহার আত্মহননেরই শামিল। এর ফলে শরীর ও মন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

উপসংহার:- পরিবেশ’ কোনাে একটি বিচ্ছিন্ন ব্যাপার নয়। এটি হল একটি সামগ্রিক সহযােগিতার নাম। আর এই সহযােগিতায় প্রধান ভূমিকা হল অরণ্যের। এটিই হল পরিবেশ ও প্রকৃতির মূল শিকড়। এটিকে সর্বতােভাবে রক্ষা করার শপথ নিতে হবে।

আরো পড়ুন

আমাদের পরিবেশ : সমস্যা ও প্রতিকার – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

গাছ আমাদের বন্ধু – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

অরণ্য, অরণ্য প্রাণী সংরক্ষণ ও মানবজীবন – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

বিশ্ব উষ্ণায়ন – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

একটি গাছ একটি প্রাণ – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

Read More »

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment