মিলের পদ্ধতিগুলির মূল কাজ কী? মিলের পদ্ধতি মােট কয়টি ও কী কী? এদের মধ্যে মৌলিক পদ্ধতি কয়টি? Class 12 | Philosophy (মিলের পরিক্ষণমূলক পদ্ধতি) 8 Marks
উত্তর:-
মিলের পদ্ধতিগুলির মূল কাজ
তর্কবিদ জন স্টুয়ার্ট মিল (J. S. Mill) আরােহ অনুমানের ক্ষেত্রে কার্যকারণ সম্বন্ধ নির্ণয় করার জন্য পাঁচটি পদ্ধতির প্রবর্তন করেছেন। পরপর দুটি ঘটনার মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক আদৌ আছে কি না—তা এই পাঁচটি পদ্ধতির সাহায্যে আবিষ্কার ও প্রমাণ করা যেতে পারে। এই পদ্ধতিগুলি একত্রিতভাবে মিলের পরীক্ষণমুলক পাচটি পদ্ধতি নামে পরিচিত। আরােহ অনুমানের ক্ষেত্রে কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ের এই সমস্ত পদ্ধতিগুলিকে বিভিন্ন নামে উল্লেখ করা হয়। অনেকে এই সমস্ত পদ্ধতিগুলিকে আরােহমুলক অনুশাসন বা সূত্র (inductive canons) রূপে অভিহিত করার পক্ষপাতী। কিন্তু যে নামেই অভিহিত হােক না কেন, এটা অত্যন্ত স্পষ্ট যে, এই সমস্ত পদ্ধতিগুলির মূল উদ্দেশ্য হল—কার্যকারণ সম্বন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্তে একটি সামান্য সংশ্লেষক বচন প্রতিষ্ঠা করা।
মিলের পদ্ধতির সংখ্যা
কার্যকারণ সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে মিল (Mill)-এর পদ্ধতি বা সূত্র হিসেবে যেগুলিকে উল্লেখ করা যায়, সেগুলি সংখ্যায় মােট পাঁচটি। এগুলিকে তাই বলা হয় পঞ্চপরীক্ষণমূলক পদ্ধতি। এই পাঁচটি পদ্ধতি হল—[1] অন্বয়ী পদ্ধতি [2] ব্যতিরেকী পদ্ধতি [3] মিশ্র বা অন্বয়-ব্যতিরেকী পদ্ধতি [4] সহপরিবর্তন পদ্ধতি এবং [5] পরিশেষ পদ্ধতি।
মৌলিক পদ্ধতিরূপে দুটি পদ্ধতি
মিল প্রবর্তিত এই পাঁচটি পদ্ধতির মধ্যে প্রথম দুটি পদ্ধতি তথা অন্বয়ী পদ্ধতি ও ব্যতিরেকী পদ্ধতি-কে মৌলিক পদ্ধতিরূপে উল্লেখ করা হয়। এই দুটি ছাড়া, আর বাকি যে তিনটি পদ্ধতির উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলি মূলত ওই প্রথম দুটি পদ্ধতিরই অবস্থাভেদে পরিবর্তিত রূপ মাত্র। যেমন বলা যায়, অন্বয়ী পদ্ধতিটির একটি পরিবর্তিত রূপ হল অন্বয়-ব্যতিরেকী পদ্ধতি। আবার সহপরিবর্তন পদ্ধতিটি হল ভিন্ন ভিন্ন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে অন্বয়ী পদ্ধতির পরিবর্তিত রূপ ও কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে ব্যতিরেকী পদ্ধতির পরিবর্তিত রূপ। পরিশেষ পদ্ধতিটিকে ব্যতিরেকী পদ্ধতিরই একটি রূপান্তরিত আকাররূপে গণ্য করা হয়। সুতরাং দেখা যায় যে, মৌলিক বা মূল পদ্ধতি হল দুটি—অন্বয়ী পদ্ধতি এবং ব্যতিরেকী পদ্ধতি। এই দুটি মৌলিক পদ্ধতির ওপর বাকি পদ্ধতিগুলি নির্ভরশীল বলে বাকি তিনটি পদ্ধতিকে গৌণ পদ্ধতিরুপে উল্লেখ করা হয়।
পর্যবেক্ষণমূলক পদ্ধতি হিসেবে অন্বয়ী পদ্ধতি আর পরীক্ষামূলক পদ্ধতি হিসেবে ব্যতিরেকী পদ্ধতি
অন্বয়ী পদ্ধতি এবং ব্যতিরেকী পদ্ধতি — এই দুটির মধ্যে আবার অপেক্ষাকৃতভাবে ব্যতিরেকী পদ্ধতিটিই অন্য পদ্ধতিটির তুলনায় অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই পদ্ধতিটি যেহেতু পরীক্ষামূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পাওয়া, তাই এর সাহায্যে আমরা সুনিশ্চিতভাবে কার্যকারণ সম্পর্ককে আবিষ্কার ও প্রমাণ করতে পারি। সেজন্য এই ব্যতিরেকী পদ্ধতিটিকেই একমাত্র প্রমাণের পদ্ধতিরুপে দাবি করা হয়। অপরদিকে, অন্বয়ী পদ্ধতিটি মূলত পর্যবেক্ষণের ওপর নির্ভরশীল বলে, তা কার্যকারণ সম্পর্ক সম্বন্ধে একটা ইঙ্গিত দেয় মাত্র, কিন্তু তাকে নিশ্চিতভাবে কখনােই প্রমাণ করতে পারে না। অন্বয়ী পদ্ধতির মাধ্যমে প্রাপ্ত সিদ্ধান্তটি তাই সবসময়ই সম্ভাবনামুলক, কখনােই নিশ্চিত নয়। এরুপ পদ্ধতিটি তাই কার্যকারণ সম্পর্ককে আবিষ্কার করে মাত্র, কখনােই তাকে প্রমাণ করতে পারে না। সেইজন্যই অন্বয়ী পদ্ধতিকে আবিষ্কারের পদ্ধতিরূপে গণ্য করা হয়।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।