Bengali Bangla Prabandha Rachana একটি ফুটবল ম্যাচের স্মৃতি – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

একটি ফুটবল ম্যাচের স্মৃতি – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

একটি ফুটবল ম্যাচের স্মৃতি

ভূমিকা: ছেলেবেলা থেকেই খেলার মাঠের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা। খুব একটা খেলতে যে পারতাম তা নয়, তবে খেলার উত্তেজনাটা মাঘের শীতে আগুন পােহাবার মতােই ভালাে লাগত। হাই স্কুলে ভরতির পর সুযােগটা একটু বেড়েও গেল। কারণ স্কুলে খেলার ক্লাস থাকত। স্যার খেলার পিরিয়ডে একটা ফুটবল দিয়ে চলে যেতেন; আমরা দল করে খেলতাম। তা ছাড়া বিভিন্ন স্কুলের সঙ্গে আমাদের স্কুলের খেলা থাকলে তাে খেলা দেখার জন্য স্কুল ছুটি হয়েও যেত। এমনই একটা খেলার কথা। আমার বেশ মনে আছে।

বিবরণ : ম্যাচটা ছিল আন্তঃমহকুমা স্কুল ফুটবলের গুরুত্বপূর্ণ সেমিফাইনাল ম্যাচ। ইতিমধ্যেই ফাইনালে উঠে বসে আছে একদা সুব্রত কাপ বিজয়ী মধ্যমগ্রাম হাই স্কুল দল। কাজেই এ ম্যাচের বিজয়ী দল ফাইনালে মধ্যমগ্রাম স্কুলের মুখােমুখি হবে। সেদিনের খেলায় দুই মুখােমুখি দল হল বারাসতের গান্ধি মেমােরিয়াল স্কুল এবং বিরাটি হাই স্কুল। উভয় দলের কাছেই ম্যাচটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তবে আগের তিন দিন টানা বর্ষা হয়েছে। প্রবল বর্ষণের জন্য খেলা পরিত্যক্ত হওয়ার সম্ভাবনাও ছিল। তবে খেলা হয়েছিল।

আমরা বিরাটি স্কুলের ছাত্ররা রেল ময়দানে পৌছে গিয়েছিলাম। দুপুর দুটোয় খেলা শুরু হল। রেফারি বাঁশি বাজিয়ে খেলার সূচনা করলেন। ছােটো ছােটো পাসে খেলে প্রথমেই আমাদের স্কুল চেপে ধরেছিল মহাত্মা গান্ধি স্কুলকে। কিন্তু ওদের স্টপার যে ছেলেটি খেলছিল ওকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন চিনের প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন সুধীর কর্মকার। ওকে এড়িয়ে আমাদের ছেলেরা গােলে বল প্রায় মারতেই পারছিল না। আমাদের ফরােয়ার্ড লাইনের ব্যর্থতা বারবার ধরিয়ে দিচ্ছিল ওই ছেলেটি। কখনও ছােটো পাসে, কখনও লম্বা পাসে, কখনও-বা মাথায় মাথায় খেলা বেশ জমে উঠেছিল। রেফারি বাঁশি বাজিয়ে খেলার হাফ টাইম ঘােষণা করলেন। গােলশূন্য অবস্থাতেই কেটে গেল খেলার প্রথমার্ধ।

খেলার দ্বিতীয়ার্ধে সেন্টার ফরােয়ার্ড বিশ্বজিৎকে বসিয়ে তরুণকে মাঠে নামানাে হল। এবারে কিন্তু খেলার গতি অনেকটা কমে এসেছে। মূলত বৃষ্টিভেজা মাঠের সবুজ ঘাসের তলার কাদা অংশটা এবার সামনে উঠে এসেছে। বল মাটিতে পড়ে গতি পাচ্ছে না। ছেলেরাও তাদের শরীরের ভারসাম্য ঠিকমতাে রাখতে পারছিল না। বলের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছিল বারবার। তবু এরই ফাঁকে তরুণ কাজের কাজটি করে বসল। মাঝমাঠ থেকে লম্বা পাস বাড়িয়ে দিয়েছিল অভিরূপ। সেই পাসেই বিন্দুমাত্র সময় ব্যয় না-করেই তরুণ ডানদিকের বারপােস্টের একেবারে কোণ ঘেঁষে সােজা বল জালে ঢুকিয়ে দিল। গােলকিপার অত দ্রুত ঘটনাটির জন্য প্রস্তৃতও ছিল না। ওই এক গােলেই জিতে ফিরল আমাদের ছেলেরা। রেফারি বাঁশি বাজিয়ে খেলা শেষ করলেন।

উপসংহার : অদ্ভুত সৌভ্রাতৃত্বময় পরিবেশে খেলাটি দারুণ উপভােগ্য হয়েছিল। আশ্চর্যের বিষয় বৃষ্টিভেজা মাঠ, তবু একটাও ফাউল হয়নি। এমন খেলা সত্যিই ভােলার নয়; কবির ভাষায় বলতেই হয়— “স্মৃতি তুমি থাকবে মেদুর হয়ে।” আসতে আসতে ভাবছিলাম আমাদের কলকাতার মাঠের বড়াে খেলােয়াড়রা যদি একবার দেখতেন তবে হয়তাে মাঠের গােলমাল গ্যালারিতে ছড়িয়ে পড়ত না।

আরো পড়ুন

শীতের সকাল – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

তোমার প্রিয় ঋতু  – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

বইপড়া – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

লেখাপড়ার অবসরে খেলা আর গল্পের বই – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

Read More »

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment