শীতের সকাল – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

শীতের সকাল

ভূমিকা : কুয়াশার আলতাে আবেশমাখা প্রিয় অস্পষ্ট স্মৃতির মতাে। শীতের সকাল হাতছানি দিয়ে ডাকে। পাখিদের দল ঝাপসা আকাশের হলুদ আলােয় উড়ে উড়ে চলে। সবুজ ঘাসে শিশিরের স্পর্শ, সর পড়া পুকুরের জল, ভিজে হিম রাস্তার ঝরা পাতার ধুসর চাহনি আর কনকনে উত্তরে হাওয়ার শীতল কাপুনি বলে, ওঠো, জাগাে! কম্বলের উয় ওম সরিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসি। বেরিয়ে এসে দেখি এক অন্য ধরনের পরিবেশ।

সকালের রূপ : সকলেই জেগে উঠেছে। গােবর জল দিয়ে নিকানাে উঠোন। শিশিরে টলমল করে গাছের পাতা। এসময় কবির ভাষায় বলতে ইচ্ছা হয়—

“ঘাসের আগায় মানিক ঘনায়, দুর্বা দলে দ্বীপ জ্বলে।”

শিশির স্নাত গাছের পাতা সূর্যের আলাে আর হাওয়ায় লুটোপুটি খেয়ে হীরকবিন্দুর মতাে টলমল করে। হাঁসগুলাে প্যাক প্যাক করতে করতে পুকুরের দিকে এগিয়ে যায়। চোখে পড়ে গাছে বাঁধা খেজুর রসের কলশি। আগের দিন শিউলিরা গাছ কেটে কলশি ঝুলিয়ে রেখে গেছে। ঠান্ডা কনকনে খেজুর রসের স্বাদ অতুলনীয়। তার সঙ্গে পাটালি গুড় আর মােয়ার কথাও মনে পড়ে যায়। মাঠে মাঠে পাকা সােনালি ধান। সেই ধানের খেতে বিচিত্র রঙের ফড়িং আর প্রজাপতির মেলা, যেন এক মােহময় রূপ। চাষিরা মাঠে মাঠে পাকাধান কাটতে নামে। কেউ আবার গেয়ে ওঠে—‘পৌষ তােদের ডাক দিয়েছে, আয়রে ছুটে আয়।” খেতে খেতে দেখা যায় নানা শাকসবজির সমারােহ। ফুলকপি, ওলকপি, বাঁধাকপি, মটরপুঁটি, বেগুন, টম্যাটো—যেন বর্ণময়তার খেলা। ইচ্ছে হয় টাটকা শিশিরভেজা সবজি তুলে ঝাকায় নিয়ে বাজার ও হাটের উদ্দেশে পাড়ি দিতে। শীতের আমেজ গায়ে মেখে রাস্তায় কুকুরগুলােও কুণ্ডলী পাকিয়ে রােদে শুয়ে আরাম উপভােগ করে। তাদের মানুষের মতাে কাজকর্মের তাড়া নেই, তাই অলসভাবে শুয়ে থাকে। একটু দুরে মাঠে খেজুর রস জ্বাল দেওয়ার মিষ্টি গন্ধ নাকে ভেসে আসে। ভােজনরসিকের কাছে এই ঋতুর মতাে ভাল ঋতু আর হয় না।

শহরের সকালের রূপ সম্পূর্ণ আলাদা। কুয়াশার চাদরে অস্পষ্ট রাস্তাঘাট। ঝাপসা আলােয় ল্যাম্পপােস্টের আলােগুলি যেন কেরােসিনের বাতির মতাে টিমটিম করতে থাকে। রাস্তায় গাড়ি চলাচল শুরু হয়ে যায়। লরি, ভ্যান করে বাজারে শাকসবজি আসতে থাকে। আবছা অন্ধকারে চায়ের দোকানে ইতিউতি ভিড় চোখে পড়ে। খবর-কাগজওয়ালারা বাড়ি বাড়ি কাগজ দিয়ে বেড়ায়। একটু দেরিতে ভাঙে শহরের ঘুম। তাই রাস্তাঘাটে ভিড় কম। আস্তে আস্তে সূর্য দৃশ্যমান হয়। হইহই করে কেউ কেউ কোনাে নদীর ধারে, কোনাে জঙ্গলের মধ্যে, অথবা কোনাে বাংলাে বাড়িতে বনভােজনের উদ্দেশ্যে দলবেঁধে বেরিয়ে পড়ে। তাদের সারাদিন মজা। রােজকার জীবনের গণ্ডিবদ্ধতা ভেঙে এ-এক আশ্চর্য স্বাদবদল।

উপসংহার : বাংলার ঋতুর বদল দু-মাস অন্তরই। ঋতুবদলের অনুভূতি তাই সাধারণ মানুষজনের ওপর প্রভাব খুব কমই বিস্তার করে। তাদের মনের দরজায় শুধু কড়া নেড়ে যায় গ্রীষ্ম ও শীত। ফলে শীতের আগমনে শুধু গ্রামবাংলা নয়, শহরও চঞ্চল হয়ে ওঠে। উপভােগ করে শীতের উপঢৌকন। আর শীতের সকাল অন্যান্য যে-কোনাে ঋতুর সকালের থেকে যে স্বতন্ত্র, আপন বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বলতা বলার অপেক্ষা রাখে না।

আরো পড়ুন

আমার চোখে আমার দেশ – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

একটি ফুটবল ম্যাচের স্মৃতি – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

তোমার প্রিয় ঋতু  – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

বইপড়া – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

Read More »

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment