চরিত্রগঠনে খেলার উপযোগিতা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

চরিত্রগঠনে খেলার উপযোগিতা

ভূমিকা : গীতা পাঠ অপেক্ষা ফুটবল খেলিলে তােমরা স্বর্গের সমীপবর্তী হইবে।”—স্বামী বিবেকানন্দের এই বহু চর্চিত উক্তিটির মধ্যে সুস্থসবল দেহমনের পরিপূর্ণ বিকাশের জয়ধ্বনি ঘােষিত হয়েছে। সভ্যতার জন্মলগ্ন থেকেই আনন্দ উজ্জ্বল পরমায়ু এবং সাহস বিস্তৃত বক্ষপটের অধিকারী মানুষের দৈনন্দিনতার সঙ্গী হল খেলাধুলা। আমরা জানি শিশু-কিশােরদের বেড়ে ওঠার পথে জ্ঞানচর্চা ও খেলা পরস্পরের পরিপূরক ভূমিকা পালন করলে মানবমন সুন্দরভাবে বিকশিত হবে। কারণ পরিপূর্ণ দৈহিক এবং মানসিক বিকাশের ফলেই কোনাে মানুষের পূর্ণাঙ্গ চরিত্রগঠন সম্ভব হয়।

প্রাচীন যুগের খেলা : প্রাচীন কাব্য বা পুরাণের গল্প পড়লে খেলার কথা পাওয়া যায়। দ্রোণাচার্যের সঙ্গে পাণ্ডব ও কৌরবদের খেলতে খেলতেই সাক্ষাৎ ঘটেছিল। তাদের অস্ত্রশিক্ষার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ চিল শরীরচর্চা। নীহাররঞ্জন রায়ের বাঙালির ইতিহাস’ বইয়ে নানা মল্লযুদ্ধ ও শারীরিক কসরতের উল্লেখ পাওয়া যায়। রাজদরবারে পাশাখেলা মগজাস্ত্রের অনুশীলন ছাড়া আর কিছুই নয়। এ ছাড়া অনেককাল আগে থেকেই কুস্তি, লাঠিখেলা প্রভৃতির প্রচলন ছিল। এইভাবে মহরমের ক্রীড়াকৌশল, শরীরচর্চারই এক উৎকৃষ্ট নিদর্শন।

বর্তমানে খেলাধুলার চর্চা : খেলাধুলার প্রতি শিশুর আকর্ষণ সহজাত। জন্মের পর হাত-পা ছোঁড়ার মধ্য দিয়ে যে খেলা শুরু, তা ক্রমশ ঘরে এবং ঘর থেকে বাইরে মাঠে তাকে টেনে নিয়ে যায়। এই মুক্তি তার চরিত্রকে উন্মুক্ত ও প্রসারিত করে। তাই আধুনিক শিক্ষার অপরিহার্য অঙ্গ হল খেলাধুলা ও শরীরচর্চা। স্কুলের পাঠক্রমে বাধ্যতামূলকভাবে এসেছে দৌড়, হা-ডু-ডু, খাে-খাে, ব্যায়াম, যােগাসন, জিমন্যাস্টিকস, টেবিল টেনিস, ব্যাডমিন্টন, ফুটবল, ক্রিকেট প্রভৃতি নানান ধরনের ব্যক্তিগত ও দলগত খেলা। উল্লেখ্য পরাধীন ভারতে শরীরচর্চার জন্য ব্রতচারী শিক্ষা শুরু করেছিলেন গুরুসদয় দত্ত। বর্তমানে চরিত্রগঠনের উপায় হিসেবে ব্রতচারীকে বিদ্যালয় পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

খেলাধুলা ও চরিত্রগঠন : শরীরের সঙ্গে মনের আনন্দের জন্যও খেলাধুলার প্রয়ােজন। খেলা আমাদের জানবার বাসনাকে বাড়িয়ে দেয় এবং ক্লান্তি দূর করে। খেলার মধ্য দিয়ে মানুষ যেমন নিয়মের অনুবর্তী হয় তেমনি সময় সম্পর্কে সচেতন হতে শেখে। কেননা খেলায় যেমন আনন্দ আছে, তেমনই তার মধ্যে শৃঙ্খলা ও ঐক্যবােধের শিক্ষাও আছে। এমনকি অপরের নেতৃত্ব মেনে চলা কিংবা অন্যকে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায় খেলার মাধ্যমে। যূথবদ্ধ জীবনের আনন্দ মানুষ খুঁজে পায় দলগত খেলার প্রাণবন্ততার মধ্য ব্যক্তিস্বার্থের গণ্ডিতে আঁটকে না-থেকে খেলার মধ্য দিয়েই শিশু-কিশাের অর্জন করে বিপদকে জয় করার শক্তি। খেলার হাত ধরে সকলেই আত্মবিশ্বাসী হতে শেখে।

উপসংহার : খেলাধুলায় সংযম ও শৃঙ্খলার চর্চা থাকায় চারিত্রিক দৃঢ়তা এবং মানসিক বলিষ্ঠতার জন্ম হয়। খেলার সাফল্য এবং ব্যর্থতা আমাদের জীবন সম্পর্কেও গভীর প্রত্যয়ী করে তােলে। ধৈর্য, সাহস, দক্ষতা, একাগ্রতা, সহ্যশক্তি, উদারতা ও সর্বোপরি মানুষকে ভালােবাসার গভীর উপলব্ধি জন্মায় খেলার মধ্য দিয়ে। এসমস্ত কারণেই একজন সফল খেলােয়াড় কোনাে দেশ বা জাতি তথা এ পৃথিবীর আদর্শ বা আইকন হয়ে উঠতে পারেন, যাকে অন্যরা অনুসরণ করতে ভালােবাসে। তাই এ দরিদ্র দেশে সম্ভাবনাময় অজস্র শিশু-কিশাের যেন খেলার সুযােগসুবিধা থেকে বঞ্চিত না-হয় সেই দিকে সরকারকে সতর্ক হতে হবে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment