গণশিক্ষার মাধ্যম হিসেবে দূরদর্শনের ভূমিকা আলােচনা করাে | এর সীমাবদ্ধতা বা ত্রুটিগুলি লেখাে Class 11 | Education (শিক্ষার বিভিন্ন রূপ) 8 Marks
উত্তর:
গণশিক্ষার মাধ্যম হিসেবে দূরদর্শনের ভূমিকা :
আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার একটি অনন্য অবদান হল দুরদর্শন। এটি সিনেমা বা রেডিয়াে-র থেকে অনেক বেশি জনপ্রিয় জনসংযােগ মাধ্যম। এতে ব্যক্তি একই সাথে দেখতেও পায় এবং শুনতেও পায়। বর্তমানে দূরদর্শনের সম্প্রসারণ আমাদের দেশের দুরদুরান্ত অঞ্চলেও পৌঁছে গেছে। যদিও শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে এটি আমাদের দেশে এখনও খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি। তবু গণশিক্ষার মাধ্যমে হিসেবে এর ভূমিকা কম নয়। নীচে দূরদর্শনের শিক্ষামূলক ভূমিকাগুলি আলােচনা করা হল :
[1] শ্রাব্য দৃশ্যধর্মী অভিজ্ঞতাদানে সহায়তা : দূরদর্শনে ব্যক্তি চোখ এবং কান দুটি ইন্দ্রিয়ের যৌথ ব্যবহারের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন জ্ঞান এবং তথ্য সংগ্রহ করতে পারে, যা বিষয়বস্তু মনে রাখার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়।
[2] মানসিক বিকাশে সহায়তা : দূরদর্শনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ব্যক্তির সামাজিক চাহিদার ওপর ভিত্তি করে দৃশ্যপট প্রস্তুত করা হয়। ফলে এর থেকে ব্যক্তির চিন্তাশক্তি, বিশ্লেষণ শক্তি প্রভৃতির বিকাশ ঘটে।
[3] প্রথাগত শিক্ষার মাধ্যম : দুরদর্শন নিয়মিত প্রথাগত শিক্ষাদান করে থাকে। নানান ধরনের শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ে অনুষ্ঠিত হয়। এর মাধ্যমে দূরদূরান্তের প্রথাগত শিক্ষাদান সম্ভব হয়। আমাদের দেশে বর্তমানে এই জাতীয় শিক্ষার ব্যাপক আয়ােজনের প্রয়াস চলছে।
[4] প্রথাবর্জিত শিক্ষার মাধ্যম : প্রথাগত শিক্ষাদানের পাশাপাশি দূরদর্শন প্রথাবর্জিত মাধ্যম হিসেবেও বিভিন্ন ভূমিকা পালন করে। কারণ দুরদর্শনে যেসব অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়, তা ব্যক্তিকে নতুন জগতের সঙ্গে পরিচিত করে এবং তার সার্বিক বিকাশের ক্ষেত্রেও সহায়ক হয়।
[5] শিক্ষার উপযুক্ত মাধ্যম : দুরদর্শনের নানান শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান ব্যক্তিকে বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা লাভে সহায়তা করে। এর মাধ্যমে ব্যক্তির সাধারণ জ্ঞান অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়, যা অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর পাঠক্রমের জ্ঞানকেও সমৃদ্ধ করে তােলে। এ ছাড়া ভাষা, বিজ্ঞান প্রভৃতিও দুরদর্শনের থেকে সহজে শেখা যায়।
[6] জনমত গঠন : জনমত গঠনের ক্ষেত্রে দুরদর্শন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কুসংস্কার দূরীকরণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তিদের মতামত জনগণের সামনে তুলে ধরে, তার ভালাে দিক ও মন্দ দিক নিয়েও আলােচনা করে।
[7] জনশিক্ষার প্রসার : জনশিক্ষার ক্ষেত্রেও দূরদর্শন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর মাধ্যমে জনসাধারণ বিভিন্ন রােগ, ব্যাধি এবং সেগুলির নিরাময় পদ্ধতি ও প্রতিষেধক সম্পর্কে অবহিত হতে পারে। এ ছাড়া নিরক্ষরতা দূরীকরণ, সাক্ষরতা প্রসারের ক্ষেত্রেও দূরদর্শন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
[8] বাস্তবধর্মী অভিজ্ঞতা দান : দূরদর্শনের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে বাস্তবধর্মী অভিজ্ঞতা দানের ব্যবস্থা করা হয়। দূরদর্শনের মাধ্যমে যেসকল অনুষ্ঠান সম্প্রচারের ব্যবস্থা করা হয় সেগুলির সঙ্গে জীবনের যােগ রয়েছে। বিভিন্ন নাটক, সিরিয়াল, আলােচনাচক্র, খবর ইত্যাদির মাধ্যমে বাস্তব জীবন ও জগতের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নানান তথ্য পরিবেশন করা হয়। তা থেকে আমরা বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা লাভ করে থাকি।
[9] নান্দনিক বিকাশে সহায়তা : দূরদর্শন কেবলমাত্র খবর পরিবেশন বা সামাজিক সমস্যাই তুলে ধরে না, এর নান্দনিক দিকও আছে। দূরদর্শনের মাধ্যমে নাটক, গানবাজনা ইত্যাদি যা পরিবেশিত হয়, তার থেকে ব্যক্তির নান্দনিক দিকের বিকাশও ঘটে থাকে।
[10] পরিবর্তনশীল জগতের সঙ্গে পরিচয় ঘটানাে : দূরদর্শনের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হল এটি ব্যক্তিকে পরিবর্তনশীল জগতের সঙ্গে পরিচিত হতে সাহায্য করে। দূরদর্শনের অগণিত চ্যানেল বিশ্বের নতুন নতুন ঘটনা ও জগৎ সম্পর্কে পরিবর্তনশীল পৃথিবীর সঙ্গে আমাদের যােগাযােগ করিয়ে দিচ্ছে। এর ফলে জনসাধারণের মধ্যে নিজেকে প্রকাশ করার এবং নিজের সমস্যাকে সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করার সুযােগ ঘটছে।
দূরদর্শনের সীমাবদ্ধতা বা ত্রুটি :
আধুনিক জীবনযাত্রায় বা সমাজব্যবস্থায় দুরদর্শনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ এবিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই ঠিকই কিন্তু দুরদর্শনের বহু অনুষ্ঠান শিক্ষার্থীদের মনে বিরূপ প্রভাবেরও সৃষ্টি করে। নীচে এবিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলােচনা করা হল :
[1] বিকৃত মনােভাব গঠন : ব্যাবসায়িক ভিত্তিতে পরিচালিত হওয়ার জন্য দূরদর্শনে অনেক সময় অপসংস্কৃতিমুলক অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়। এর ফলে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিকৃত মনােভাব গড়ে ওঠে। তারা নানা ধরনের খারাপ আচরণ আয়ত্তকরণে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে।
[2] পড়াশােনার ক্ষেত্রে ব্যাঘাত সৃষ্টি : দুরদর্শনে অধিকাংশ সময়ই চিত্তবিনােদনমূলক অনুষ্ঠানই সম্প্রচার করা হয়। এগুলি শিক্ষার্থীর পড়াশুনাের ক্ষেত্রে যথেষ্ট ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। তাদেরকে অনেক সময় কুশিক্ষার পথে ঠেলে দেয়।
[3] একমুখী মাধ্যম : দূরদর্শনের বেশির ভাগ অনুষ্ঠানই একমুখীভাবে প্রচার করা হয়। তাই এতে শ্রোতা এবং সম্প্রচারকারীর মধ্যে ভাবের আদানপ্রদান হওয়ার উপায় থাকে না। কোনাে ভুল তথ্য পরিবেশিত হলে, সেটি সংশােধনের সুযােগও থাকে না।
[4] অসত্য তথ্য প্রকাশ : দূরদর্শনে সম্প্রচারিত বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে দেখা যায় বহু বিজ্ঞানপনদাতা নিজেদের সামগ্রীর বিক্রয় বাড়ানাের জন্য ক্রেতাদের প্রলুব্ধ করার উদ্দেশ্যে অতিরঞ্জিত, অসত্য তথ্য প্রচার করে থাকে। এর ফলে অপরিণত শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেক ক্ষেত্রে অবাঞ্ছিত ফল সৃষ্টি হয়।
[5] বিচারবুদ্ধি লােপ : দূরদর্শনের বহু অনুষ্ঠান এমনভাবে প্রচার করা হয় যে, এর প্রভাবে ব্যক্তির নিজস্ব বিচারবুদ্ধি ও বিশ্লেষণ ক্ষমতা সাময়িকভাবে স্তব্ধ হয়ে যায়।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।