বেতার-এর শিক্ষামূলক উপযােগিতা এবং এর সীমাবদ্ধতা বা ত্রুটিগুলি লেখাে

বেতার-এর শিক্ষামূলক উপযােগিতা এবং এর সীমাবদ্ধতা বা ত্রুটিগুলি লেখাে Class 11 | Education (শিক্ষার বিভিন্ন রূপ) 8 Marks

উত্তর:

বেতার-এর শিক্ষামূলক উপযােগিতা : 

গণশিক্ষার একটি শক্তিশালী মাধ্যম হল বেতার। বর্তমান যুগে বেতার একটি জনপ্রিয় শ্রুতিধর্মী জনসংযােগ মাধ্যম। সাধারণ সংবাদ সরবরাহ ছাড়াও রাজনৈতিক, সামাজিক, দৈনন্দিন ঘটনা, প্রাকৃতিক ও দুর্যোগ ইত্যাদি নানান বিষয়ে বেতারে খবর পরিবেশিত হয়। বেতারে গানবাজনা, নাটক, যাত্রা, কবিগান ইত্যাদি চিত্তবিনােদনমূলক অনুষ্ঠানও প্রচারিত হয়। এ ছাড়া বেতারে শিশুমহল, গল্পদাদুর আসর, মহিলা মহল, পল্লিমঙ্গল প্রভৃতি অনুষ্ঠানও প্রচারিত হয়। নীচে বেতারের শিক্ষামূলক উপযােগিতাগুলি আলােচনা করা হল : 

[1] সর্বজনগ্রাহ্য অনুষ্ঠান প্রচার : বেতারের মাধ্যমে সর্বজনগ্রাহ্য অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়। আমাদের দেশের প্রায় 30 শতাংশ মানুষ যেখানে নিরক্ষর সেখানে শিক্ষিত এবং নিরক্ষর উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের কথা স্মরণ রেখে বেতার সহজ-সরল ভাষায় বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান পরিবেশন করে। সেই কারণে বেতার এত জনপ্রিয়। 

[2] সকল বয়সস্তরের জন্য অনুষ্ঠান প্রচার : বেতারের মাধ্যমে ছােটো থেকে বড়াে, শিশু, মহিলা ও বিভিন্ন পেশার কর্মীদের জন্য অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়ে থাকে। এইসব অনুষ্ঠানের মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযােগ্য অনুষ্ঠান হল : শিশুমহল, গল্পদাদুর আসর, মহিলা মহল, পল্লিমঙ্গল, বিদ্যার্থীদের অনুষ্ঠান, খেলার ধারাবিবরণী ইত্যাদি। এগুলি ছাড়াও থাকে বিজ্ঞান বিষয়ক আলােচনা। সাহিত্য বিষয়ক আলােচনা, বিনােদনমূলক অনুষ্ঠান ইত্যাদি। 

[3] বাস্তবধর্মী অনুষ্ঠান প্রচার : বেতারের মাধ্যমে যেসব অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়, তা খুবই বাস্তবধর্মী। ফলে সব ধরনের মানুষ ওইসব অনুষ্ঠানের সঙ্গে একাত্ম হয়ে আনন্দ উপভােগ করে। মােটকথা, অনুষ্ঠান বাস্তবধর্মী হওয়ায় মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করতে পারে। 

[4] সমাজ-সচেতনতা গড়ে তােলার সহায়ক : বেতারে প্রচারিত বিভিন্ন অনুষ্ঠান শ্রোতাদেরকে সমাজ-সচেতন করে তােলে। এ ছাড়া পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধির বিষয়ে বেতারে বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়। 

[5] দ্বিমুখী ব্যবস্থা : বর্তমানে বেতারের বিভিন্ন অনুষ্ঠানকে দ্বিমুখী করার ব্যবস্থা হয়েছে। অনেক অনুষ্ঠান চলাকালীন টেলিফোনের সাহায্যে শ্রোতাদের কাছ থেকে অভিমত আহ্বান করা হয়। ফলে শ্রোতারা সক্রিয়ভাবে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে আনন্দ উপভােগ করে।

[6] উভয় ধরনের শিক্ষা : বেতারের মাধ্যমে প্রথাগত এবং বিধিমুক্ত উভয় ধরনের শিক্ষাই দেওয়া হয়। কতকগুলি চ্যানেলে প্রথাগত শিক্ষার আয়ােজন করা হয়। আবার কতকগুলি চ্যানেল বিভিন্ন বিষয়ের ওপর শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের আয়ােজন করে। বিভিন্ন মুক্ত বিদ্যালয়, মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেও প্রথাগত শিক্ষার পাঠ বেতারের মাধ্যমে পরিবেশন করা হয়। 

[7] সর্বগ্রাসী ব্যবস্থা : বেতার একটি ক্ষুদ্র যন্ত্র। এটিকে নিয়ে যে-কোনাে জায়গায় পৌঁছােনাে যায়। এর জন্য কোনাে বিদ্যুৎ সংযােগের দরকার হয় না। ক্ষুদ্র ব্যাটারির সাহায্যেই বেতার শােনা যায়। 

[8] দৃষ্টিহীনদের জন্য সহায়ক মাধ্যম : যারা চোখে দেখতে পায় না, সেই সকল মানুষরাও বেতারের মাধ্যমে অনেক তথ্য জানতে পারে। এই ক্ষেত্রে বেতারের গুরুত্ব শুধু অনস্বীকার্য তাই নয়, এটি অদ্বিতীয় বটে। 

[9] সাংস্কৃতিক বিকাশে সহায়ক : বেতারের অনুষ্ঠান শ্রোতাবর্গের সাংস্কৃতিক বিকাশেও সহায়ক হয়। দেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য প্রভৃতিকে কেন্দ্র করে বেতারে প্রচারিত অনুষ্ঠানগুলি শ্রোতার সাংস্কৃতিক বিকাশে সহায়তা করে। এ ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাবিদ বা প্রসিদ্ধ ব্যক্তির কণ্ঠে পরিবেশিত অনুষ্ঠান শ্রোতার মনে বিশেষভাবে রেখাপাত পরে।

[10] চিত্তবিনােদনে সহায়ক : বেতারের একটি চিত্তবিনােদনমূলক দিকও আছে। গানবাজনা, নাটক, বিভিন্ন বিষয়ে আলােচনা, বিভিন্ন যন্ত্রসংগীতের ব্যবহার শ্রোতার মনকে আনন্দে ভরিয়ে তােলে ও তাদের প্রক্ষোভমূলক তৃপ্তিদান করে।

বেতারের সীমাবদ্ধতা বা ত্রুটি : 

শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বেতারের সীমাবদ্ধতা বা ত্রুটিগুলিও সর্বজনস্বীকৃত। 

[1] কেবল শােনা যায়, দেখা যায় না : বেতারে প্রচারিত অনুষ্ঠানে কথা ও ধ্বনি কেবলমাত্র কানে শােনা যায়। বক্তা বা শিল্পীকে চোখে দেখা যায় না। সুতরাং, একাধিক ইন্দ্রিয়কে ব্যবহার করে শেখার যে সম্পূর্ণতা থাকে, বেতার সেই সুযােগদানে অপারগ। 

[2] একমুখী সংযােগ স্থাপন : বেতারের ক্ষেত্রে একমুখী সংযােগ স্থাপিত হয়। এতে বক্তা বা সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের সঙ্গে সরাসরি যােগাযােগের সুযােগ থাকে না। প্রচারিত বিষয়বস্তু সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে না পারলে পুনরায় জিজ্ঞাসা করে বুঝে নেওয়ার সুযােগ থাকে না। 

[3] শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের পরিমাণ কম : বেতারে বিদ্যার্থীদের জন্য খুবই কম অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়। অধিকাংশ সময়ই বিনােদনমূলক অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়। তাই যথার্থ অর্থে বেতারকে শিক্ষামাধ্যম বলা যায় না। 

[4] সঠিক পরিচালনার অভাব : সঠিক পরিচালনার অভাবের কারণে বর্তমানে বেতার তার জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে। বিদ্যালয়গুলির সময়তালিকার সঙ্গে সংগতি রেখে বিদ্যার্থীদের জন্য অনুষ্ঠানও সঠিকভাবে প্রচারের ব্যবস্থা করা হয় না।। এমন এমন সময়ে বিদ্যার্থীদের জন্য অনুষ্ঠান প্রচার করা হয় যে, ওই সময় বিদ্যার্থীরা অন্য কাজে ব্যস্ত থাকে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment