তপশিলি জাতি ও তপশিলি উপজাতি কাদের বলা হয় | এদের সামাজিক অন্তর্ভুক্তিকরণে শিক্ষার ভূমিকা

উত্তরঃ-

ভূমিকাঃ 

ভারতের সংবিধানে তফশিলি জাতি ও তফশিলি উপজাতির কোনো সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা দেওয়া নেই। রাষ্ট্রপতি সরকারি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নির্ধারণ করে দেন কারা তফশিলি জাতি ও তফশিলি উপজাতির তালিকাভুক্ত হবেন। সংবিধানে তফশিলি জাতি ও তফশিলি উপজাতি বলতে কাদের বোঝায় তা নিম্নে আলোচনা করা হল- 

তফশিলি জাতিঃ

সংবিধানের ৩৬৬ (২৪) নং ধারায় বলা হয়েছে যে, তফশিলি জাতি বলতে বোঝাবে সেই সমস্ত জাতি, বংশ বা উপজাতির কোনো অংশ বা গোষ্ঠীকে যারা এই সংবিধানের প্রয়োজনার্থে ৩৪১নং ধারা অনুসারে রাষ্ট্রপতি কোনো রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে অবস্থিত কোনো জাতি, বর্ণ, উপজাতি অথবা জাতি, বর্ণ, উপজাতিভুক্ত কোনো অংশ বা গোষ্ঠীকে সরকারি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কোনো সংশ্লিষ্ট রাজ্য অথবা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের তফশিলি জাতি নামে চিহ্নিত রতে পারেন। রাজ্যের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতিকে সংশ্লিষ্ট রাজ্যপালের সঙ্গে আলোচনা করেই তফশিলি জাতি সম্পর্কিত বিজ্ঞপ্তি দিতে হয়। আবার ৩৪১ (২) নং ধারা অনুসারে পার্লামেন্টে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রচারিত বিজ্ঞপ্তির তালিকায় কোনো নতুন জাতি, বর্ণ এবং উপজাতি বা তাদের অন্তর্ভুক্ত কোনো অংশ বা. গোষ্ঠীর নাম অন্তর্ভুক্ত করতে পারে বা কোনো নাম বাদ দিতে পারে। পারিয়া, চামার, মাহার, ভাঙ্গি প্রভৃতি সকলকেই তপশিলি জাতি নামে অভিহিত করা হয়।

তফশিলি উপজাতিঃ

সংবিধানের ৩৬৬ (২৫) নং ধারায় বলা হয়েছে যে তপশিলি উপজাতি বলতে বোঝাবে সেই সমস্ত উপজাতি বা উপজাতিভুক্ত সম্প্রদায় বা তাদের কোনো অংশ বা গোষ্ঠীকে যারা এই সংবিধানের প্রয়োজনার্থে ৩৪২ নং ধারা অনুসারে তপশিলি জাতি হিসাবে গণ্য হয়। ৩৪২ (১) নং ধারা অনুসারে রাষ্ট্রপতি কোনো রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে বসবাসকারী কোনো উপজাতি অথবা উপজাতীয় সমাজ অথবা তাদের কোনো অংশ অথবা উপজাতি বা উপজাতীয় সমাজের অন্তর্ভুক্ত কোনো গোষ্ঠীকে সংশ্লিষ্ট রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের তফশিলি উপজাতি হিসাবে চিহ্নিত করে সরকারি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারেন। ৩৪২(২) ধারা অনুসারে রাষ্ট্রপতি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তফশিলি উপজাতির যে তালিকা প্রকাশ করেন সেই তালিকায় পার্লামেন্টে আইন প্রণয়ন করে নতুন উপজাতি বা উপজাতিভুক্ত সম্প্রদায় কিংবা তাদের কোনো অংশ বা গোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। আবার ঐ তালিকা থেকে কোনো নাম বাদ দিতে পারে। তবে পূর্বোক্ত বিজ্ঞপ্তিকে নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করে পরিবর্তন করা যাবে না। কোল, ভীল, নাগা, সাঁওতাল প্রভৃতি সকলেই তপশিলি উপজাতি নামে অভিহিত করা হয়।

সামাজিক অন্তর্ভুক্তিতে শিক্ষার ভূমিকা:

শিক্ষা ও সমাজের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তাই সামাজিক অন্তর্ভুক্তিতে শিক্ষার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা কিভাবে অন্তর্ভুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে পারে তা নিম্নে আলোচনা করা হল –

ভালো ও মন্দ (সু ও কু) এই দুই ভাব বা প্রবৃত্তি আমাদের মনোজগতে সদা বর্তমান। যেহেতু জন্মলগ্ন থেকেই আমরা এই দুটি প্রবৃত্তির বাহক, সুতরাং শৈশবকাল থেকেই এগুলি সম্পর্কে সচেতন হয়ে কুপ্রবৃত্তিকে জয় করে বা দমন করে আমাদের সুপ্রবৃত্তির দ্বার খুলে দিতে হয়। আর এ জন্যই প্রয়োজন উপযুক্ত শিক্ষাগ্রহণ। উপযুক্ত শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে মানুষের অন্তঃকরণ পরিশুদ্ধ হয়। সৎকর্ম প্রবৃত্তি আসে এবং তার চিন্তায়, কর্মে, চলনে বলনে এর প্রতিফলন ঘটে। উপযুক্ত শিক্ষালাভের মাধ্যমে আমাদের মধ্যে থাকা সুপ্রবৃত্তিগুলি বিকশিত হয় এবং পরবর্তীতে এগুলোরই প্রভাবে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবন এমনকি রাষ্ট্রীয় জীবনও সুনিয়ন্ত্রিত হয়ে ওঠে এবং সুপ্রবৃত্তি বিকশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কুপ্রবৃত্তিগুলি অবদমিত হয় বা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। এসবের কোনো প্রভাব তখন আর থাকে না ফলে অন্তর্ভুক্ত সমাজ গড়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি হয়।

শিক্ষা শব্দটি বিশ্লেষণ করলে আমরা পাই শিষ্টাচার আর তা অর্জনের ক্ষমতাই শিক্ষা। আবার শিষ্টাচার বলতে তাই বোঝায় যা সর্বকালে, সর্বস্থানে সবার কাছে গ্রহণীয় বলে স্বীকৃত এক প্রকার কলাকৌশল বিশেষ, যার মাধ্যমে আমাদের মধ্যে থাকা অন্তর্নিহিত পূর্ণত্বের বিকাশ ঘটে। শিক্ষা মানুষকে সত্য ও সুন্দরের দিকে আকৃষ্ট করে, মানবিক মূল্যবোধ তাকে জাগিয়ে তোলে। প্রকৃত শিক্ষার প্রভাবে ব্যক্তি মানুষের মধ্যে আসে স্নেহ-প্রীতি-ভালোবাসার প্রবৃত্তি ও ভ্রাতৃত্ববোধ আর অপগত হয় হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-লালসা ইত্যাদি। যার ফলে অন্তর্ভুক্ত সমাজ গড়ে ওঠার পথ প্রশস্ত হয়।

আধুনিকতার নামে আজ আমরা নানা অপসংস্কৃতির অনুকরণ করে আত্মপ্রসাদ লাভে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তথাকথিত আধুনিকতার মায়াবী ছলনায় স্বকীয় কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে বিসর্জন দিয়ে আধুনিকতার ধ্বজাধারীরূপে গৌরব অনুভব করছি। আর এরই অবশ্যম্ভাবী পরিণতি সামাজিক অবক্ষয়। তাই দেখা যায় সমাজজীবনে স্নেহ-প্রীতি-ভালোবাসা প্রায় অবলুপ্ত, শ্রদ্ধা-বিনয় অদৃশ্য, দুর্নীতি ও ভ্রষ্টাচারে সামাজিক পরিমণ্ডল কলুষিত। হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি, খুন, ধর্ষণ, অপহরণ ইত্যাদি

স্বাভাবিক জীবনকে ছন্দহীন করে তুলেছে। অপকর্মে লিপ্ত থাকাটা যেন নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরই কুপ্রভাবে আমাদের শিশু-ছাত্র-যুবারা দিন দিন মানকিসভাবে আহত হয়ে বিপথগামী হতে চলেছে। সত্বর এদের নৈতিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ করতে না পারলে সার্বিক অবক্ষয়ের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আর এ কাজের জন্য শিশু-ছাত্র ও যুবা সমাজের মধ্যে শিক্ষার ব্যাপক প্রচার ও প্রসার ঘটানো আবশ্যক। এতে মানসিক ও চারিত্রিক বিশুদ্ধতা আসবে। আর এই কারণেই অন্তর্ভুক্ত সমাজ গঠনে শিক্ষা অপরিহার্য।

Read Also

শান্তি শিক্ষা কি | শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য শিক্ষার ভূমিকা

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment