১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন সম্পর্কে লেখ

উত্তরঃ-

১৯৩০ – এর আইন অমান্য আন্দোলনের সময়ে ব্রিটিশ সরকার একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করে কেন্দ্র ও রাজ্যে দায়িত্বশীল সরকার গঠন করার প্রস্তাব দিয়েছিল। এই শ্বেতপত্রের নীতিকে কার্যকর করতে লিনলিখগো কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটির সুপারিশ অনুসারে ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ভারত শাসন আইন রচিত হয়েছিল। এই আইনের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি ছিল নিম্নরূপ –

যুক্তরাষ্ট্র গঠনঃ

১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইন অনুসারে কেন্দ্রে একটি যুক্তরাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব করা হয়। ব্রিটিশ ভারতের রাজ্যগুলির সঙ্গে দেশীয় রাজ্যগুলির এতে যোগদান বাধ্যতামূলক ছিল না। আবার বলা হয় ৫০ শতাংশ দেশীয় রাজ্য যোগ না দিলে যুক্তরাষ্ট্র গঠিত হবে না। এ ছাড়া ভারতের শাসনভার গভর্নর জেনারেল ও একটি মন্ত্রীসভাকে প্রদান করা হয়। বলা হয় মন্ত্রীরা আইনসভার সদস্যদের মধ্যে থেকেও গভর্নর জেনারেলের দ্বারা মনোনীত হবেন।. অন্যদিকে আইনসভার কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন। 

কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থাঃ

কেন্দ্রীয় সরকারের কাজকর্মকে দুটি ভাগে বিভক্ত করা হয়। যথা- সংরক্ষিত ও হস্তান্তরিত বিষয়। দেশরক্ষা, ধর্ম, অর্থ, সৈন্যবাহিনী, বিদেশনীতি প্রভৃতি বিষয়গুলিকে সংরক্ষিত বিষয় বলা হয়। এই বিষয়গুলির শাসন পরিচালনার দায়িত্ব গভর্নর জেনারেল এবং তিনজন উপদেষ্টাকে প্রদান করা হয় বাকি বিষয়গুলি ছিল হস্তান্তরিত বিষয়। বলা হয় এগুলি গভর্নর জেনারেল দশজন মন্ত্রীর সাহায্য নিয়ে পরিচালনা করবেন।

আইন প্ৰণয়নঃ

১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের মাধ্যমে ভারতবর্ষের আইন প্রণয়নের দায়িত্ব গভর্নর জেনারেল এবং দুই কক্ষযুক্ত আইনসভার হাতে অর্পণ করা হয়। নিম্নকক্ষের সদস্য সংখ্যা ৩৭৫ এবং উচ্চকক্ষের সদস্য সংখ্যা ২৬৮ জন করা হয়েছিল। দেশীয় রাজ্য ও ব্রিটিশ ভারতের রাজ্যসমূহ থেকে সদস্যদের নির্বাচিত করার কথা বলা হয়। তেমনই গভর্নর জেনারেলের মনোনীত সদস্য দুটি কক্ষে থাকত। স্থির হয় উভয় কক্ষের অনুমোদিত বিল গভর্নর জেনারেলের অনুমোদন না পেলে পাস হবে না। এ ছাড়া জরুরি অবস্থায় গভর্নর জেনারেলকে মন্ত্রীসভার পরামর্শ ছাড়া কাজ করার অধিকার দেওয়া হয়েছিল। 

প্রাদেশিক শাসনঃ

এই আইনে প্রদেশগুলিকে স্বায়ত্তশাসনের অধিকার দেওয়া হয়। প্রদেশের শাসনের কেন্দ্রে ছিলেন গভর্নর। স্থির হয় প্রতিটি প্রদেশে একটি করে মন্ত্রীসভা থাকবে। বাংলা, পাঞ্জাব ও বোম্বাই-সহ ১১টি প্রদেশকে স্বায়ত্তশাসনের অধিকার দেওয়া হয়েছিল। প্রাদেশিক আইনসভাগুলি ছিল এক বা দুইকক্ষ বিশিষ্ট। এগুলির মেয়াদ ছিল পাঁচ বছর। প্রদেশগুলির গভর্নরকে আইনসভা আহ্বান করা বা বিলোপ ঘটানোর অধিকার দেওয়া হয়েছিল। সাথে সাথে দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা বাতিল করা হয়।

বিচারব্যবস্থাঃ

১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইন অনুসারে ভারতে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত স্থাপন করা হয়। এই আদালত ভারতের সমস্ত অঞ্চলে বিচারের অধিকার পায়। তা ছাড়া এই আইনে ভারতসচিবের পরিবর্তে ইংল্যান্ডের রাজার হাতে ভারতের সমস্ত অধিকার প্রদান করা হয়। আর্থিক ক্ষেত্রে রিজার্ভ ব্যাংক স্থাপন করা হয়।

ব্রিটিশ সরকারের উপর্যুক্ত ভারত শাসন আইন ভারতের বহু দল গ্রহণ করেনি। মুসলিম লিগ, জাতীয় কংগ্রেস এবং দেশীয় রাজ্যগুলি বিভিন্ন বিষয়েবিরোধিতা করে। ফলে শেষপর্যন্ত ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের এই ভারত শাসন আইন সফল হয়নি। তবে কংগ্রেস ও লিগ প্রাদেশিক সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল এবং নির্বাচনে কংগ্রেস বিপুলভাবে জয়লাভ করেছিল

Read Also

ভারতের সংবিধান প্রস্তাবনার গুরুত্ব বা তাৎপর্য আলোচনা করো

জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন | Non-Aligned Movement in Bengali

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment