শিক্ষাক্ষেত্রে সংবেদনের গুরুত্ব বা তাৎপর্য আলোচনা করো

শিক্ষাক্ষেত্রে সংবেদনের গুরুত্ব বা তাৎপর্য আলোচনা করো

উত্তর :

শিক্ষাক্ষেত্রে সংবেদনের গুরুত্ব বা তাৎপর্য :

শিক্ষাক্ষেত্রে সংবেদন-এর গুরুত্ব অপরিসীম। কোনাে শিক্ষার্থী যখন কোনাে বিষয় অধ্যয়ন করে তখন তার চক্ষু এবং কর্ণ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। মনােবিদ ও শিক্ষাবিদদের মতে, শিক্ষার্থীর শিখনের প্রায়। চুরানব্বই শতাংশ চক্ষু ও কর্ণের মাধ্যমে ঘটে থাকে। অন্যান্য ইন্দ্রিয়গুলিও সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। জ্ঞানেন্দ্রিয়গুলিকে তাই জ্ঞানের প্রবেশ দ্বার বলা হয়। চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, ত্বক এবং জিহ্বা এই পাঁচটি জ্ঞানেন্দ্রিয়ের সাহায্যেই আমরা কোনাে বস্তু সম্পর্কে প্রাথমিক অভিজ্ঞতা লাভ করি। শিক্ষাক্ষেত্রে এই প্রাথমিক অভিজ্ঞতার মূল্য, আধুনিক শিক্ষাবিদগণ উপলব্ধি করেছেন। কোনাে বস্তুধর্মী অভিজ্ঞতার জন্যে ইন্দ্রিয়গুলির উত্তেজিত হওয়া দরকার। শৈশবকালে যখন ব্যক্তির চিন্তনশক্তির সঠিক বিকাশ ঘটেনি, তখন জ্ঞান অর্জন শুধুমাত্র সংবেদন-এর দ্বারাই ঘটে থাকে। আধুনিক যুগের শিক্ষাবিদগণ তাই শিক্ষাক্ষেত্রে সংবেদন-এর গুরুত্বকে স্বীকার করেছেন। নীচে সংবেদন-এর গুরুত্ব বা তাৎপর্য আলােচনা করা হল 

[1] ইন্দ্রিয় প্রশিক্ষণ : আধুনিক শিক্ষাদান কৌশলে শিক্ষার্থীর ইন্দ্রিয়গুলিকে ব্যবহার করে শিক্ষাদানের রীতি প্রচলিত হয়েছে। তাই চার্ট, মডেল, প্রােজেক্টর প্রভৃতিকে শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। শিক্ষার্থীর ইন্দ্রিয়গুলিকে যত বেশি সক্রিয় করে তােলা যাবে, তারা তত বেশি সংবেদন গ্রহণ করবে এবং নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করবে। শিক্ষাবিদ ফ্রয়েবেল ও মন্তেসরি তাদের শিক্ষাব্যবস্থাতেও ইন্দ্রিয় প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব আরােপ করেছিলেন। 

[2] সক্রিয়তাভিত্তিক শিক্ষণ : শিক্ষায় সক্রিয়তার নীতি প্রচলিত রয়েছে। শিক্ষার্থী সক্রিয়ভাবে কোনাে বিষয়ে অংশগ্রহণ করলে তার জ্ঞানেন্দ্রিয়গুলিও সক্রিয়ভাবে কাজ করবে। সংবেদনের কাজও ত্বরান্বিত হবে। সার্বিকভাবে জ্ঞানার্জনের কাজটিও সম্পন্ন হবে। এক্ষেত্রে সংবেদন শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। ভূমিকা পালন করে।

[3] শিক্ষণ-শিখন সহায়ক উপাদান ও সংবেদন : বর্তমানে শিক্ষাক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষণ-শিখন উপাদান ব্যবহার করা হয়। এদের মধ্যে বেশি প্রচলিত হল ‘অডিও ভিস্যুয়াল এইডস। এগুলি শিক্ষার্থীর একাধিক জ্ঞানেন্দ্রিয়কে উদ্দীপিত করে সংবেদন সৃষ্টি করে। ফলে শিক্ষার্থীরা দ্রুত অভিজ্ঞতা অর্জনে সক্ষম হয়। জ্ঞানার্জন ক্রিয়াটিও সম্পন্ন হয়।

[4] বিমূর্ত চিন্তনের ক্ষেত্রে সংবেদন : সংবেদন শিক্ষার্থীর জ্ঞানার্জন প্রক্রিয়াকে প্রত্যক্ষ এবং পরােক্ষভাবে প্রভাবিত করে। এটি শিক্ষার্থীর মধ্যে আত্মসক্রিয়তা এমনভাবে বর্ধিত করে যে, তার মধ্যে বিমূর্ত চিন্তনের বিকাশ তরান্বিত হয়। 

[5] শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশের ক্ষেত্রে সংবেদন : বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষাবিজ্ঞানীরা শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশের ক্ষেত্রে সঠিক ও শক্তিশালী সংবেদনের গুরুত্ব উপলব্ধি করেছেন। শিক্ষার্থীর দৈহিক, মানসিক, প্রক্ষোভিক, সামাজিক, নৈতিক প্রভৃতি বিকাশের জন্য সঠিক সংবেদন প্রয়ােজন — এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। 

[6] শিখন সলিনের ক্ষেত্রে সংবেদন : সংবেদন শিখন সঞ্চালনের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শ্রেণিতে কোনাে বিষয় আলােচনার সময় জটিল বিষয়বস্তুকে যখন কোনাে ছবি বা মডেলের সাহায্যে শিক্ষার্থীর কাছে তুলে ধরা হয় তখন শিক্ষার্থীর মধ্যে একসঙ্গে একাধিক ইন্দ্রিয়ে সংবেদন সৃষ্টি হয়। শ্রবণের সঙ্গে দর্শনও হয়। ফলে শিখন ক্রিয়াটি দ্রুত। সম্পন্ন হয়। একটি বিষয়ের জ্ঞান অন্য বিষয়ের জ্ঞানলাভকে সহজ করে তােলে। উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, জ্ঞানার্জন-এর ক্ষেত্রে প্রথম পর্যায় বা স্তর হল সংবেদন। সংবেদন সঠিকভাবে না-হলে পরবর্তী পর্যায়গুলি যেমন প্রত্যক্ষণ ও ধারণা গঠনের কাজ ব্যাহত হয়। মােটকথা, জ্ঞান আহরণের জন্য বা সার্থক শিক্ষণের জন্য সঠিক বা উপযুক্ত সংবেদন হওয়া দরকার। শিক্ষা ক্ষেত্রে এটিই হল সংবেদন-এর অতিগুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment