ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যাবস্থার পাঠক্রম ও শৃঙ্খলা সম্পর্কে আলোচনা করো

ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যাবস্থার পাঠক্রম ও শৃঙ্খলা সম্পর্কে আলোচনা করো
অথবা, ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যবস্থায় চার বর্ণের শিক্ষার্থীদের জন্য যে-ধরনের পাঠক্রমের ব্যবস্থা ছিল—তা সংক্ষেপে আলােচনা করাে। ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যবস্থায় শিষ্য বা শিক্ষার্থীকে কী কী শৃঙ্খলা মেনে চলতে হত?  6 + 2

উত্তর : 

ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যাবস্থার পাঠক্রম : 

ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যবস্থায় সকল বর্ণের শিক্ষার্থীরা একই ধরনের পাঠক্রম অনুশীলনের সুযােগ পেতেন না। বর্ণ অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথক পৃথক পাঠক্রমের ব্যবস্থা ছিল। এখানে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্রদের জন্য নির্ধারিত পাঠক্রম বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলােচনা করা হল —

[1] ব্রাহ্মণ্য শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠক্রম : ব্রাহ্মণ্য যুগে চার বর্ণের মধ্যে ব্রাহ্মণদেরকে যজ্ঞ ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পৌরােহিত্য করতে হত। সেই কারণে ব্রাহ্মণদের বেদ, বেদাঙ্গ, বেদান্ত প্রভৃতিতে পারদর্শিতা অর্জন করার দরকার হত। এই শাস্ত্রগুলিতে পারদর্শিতা অর্জনের জন্য ছন্দ, ব্যাকরণ, জ্যোতিষ। প্রভৃতি চর্চারও প্রয়ােজন হত। শতপথ ব্রাহ্মণ’-এ পাঠক্রমের যে তালিকা পাওয়া যায়, তাতে ব্রাহ্মণ শিক্ষার্থীদের জন্য বেদ, বেদান্ত ছাড়াও পুরাণ, ইতিহাস, বিজ্ঞান, তর্কশাস্ত্র, গাথা, সর্পবিদ্যা, রক্ষবিদ্যা, অসুরবিদ্যা, পিতৃতর্পণ, রাশি, দৈব, নিধি, একায়ন, ভূতবিদ্যা, ক্ষত্রবিদ্যা, নক্ষত্রবিদ্যা, দেবযান (নৃত্য-গীতাদি কলাশাস্ত্র) প্রভৃতি বিষয়ের উল্লেখ আছে। তবে ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যবস্থায় বেশিরভাগ ব্রাহ্মণশিক্ষার্থী বেদ অনুশীলন ও যজ্ঞের আচার-আচরণ সম্পর্কিত বিষয়গুলির চর্চার মধ্য দিয়ে তাদের শিক্ষা শেষ করত। 

[2] ক্ষত্রিয় শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠক্রম : ব্রাহ্মণ্য যুগের প্রথমের দিকে ক্ষত্রিয় শিশুরা উপনয়নের পর গুরুগৃহে বসবাস শুরু করে বেদ পাঠ করত। কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের বেদ পাঠের অধিকার খর্ব করা হয়। ক্ষত্রিয় সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়—অস্ত্রবিদ্যা, যুদ্ধবিদ্যা, নীতিশাস্ত্র, অর্থশাস্ত্র, দণ্ডনীতি (রাজ্য শাসন), কৃষি, বাণিজ্য, সংগীত, কাব্য, লিখন কৌশল ইত্যাদি। 

[3] বৈশ্য শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠক্রম: ব্রাহ্মণ্য যুগে বৈশ্য সম্প্রদায়ের বৃত্তি ছিল কৃষি, গােপালন ও বাণিজ্য। তাই বৈশ্যদের জন্য শিক্ষার পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত ছিল—কৃষি, পশুপালন, বাণিজ্য, শস্যবপন, জমির গুণাগুণ নির্ণয়, বিভিন্ন প্রথায় ওজন ও ক্রয়বিক্রয়ের হিসাবনিকাশ, শস্য সংরক্ষণের উপায়, বিভিন্ন ধরনের রত্নের ও ধাতুর মূল্য নির্ধারণ করতে শেখা। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের ভাষা, মুদ্রামূল্য ও ভৌগােলিক অবস্থান সম্পর্কিত বিষয়ে জ্ঞানলাভ ইত্যাদি। তক্ষশিলা বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈশ্যদের পাঠক্রমে শল্যচিকিৎসা, চিকিৎসাবিদ্যা, কৃষি-বাণিজ্য, প্রতিমা নির্মাণ, রথ চালনাের কৌশল, নৃত্য-গীত, চিত্রকলা প্রভৃতি বিষয়ে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা ছিল। 

[4] শুদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠক্রম : ব্রাহ্মণ্য যুগের শিক্ষাব্যবস্থায় শূদ্রদেরকে পড়ার অধিকার দেওয়া হত না। শূদ্রদের বৃত্তি ছিল ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যদের সেবা করা। তাই তাদের জন্য সমাজ স্বীকৃতি, সুনির্দিষ্ট কোনাে পাঠক্রম ছিল। না। তবে ধােপা, নাপিত, কুমাের, চর্মকার প্রভৃতি সম্প্রদায়ের শিশুরা পারিবারিক সুত্রে তাদের পিতার কাছ থেকে হাতেকলমে ব্যাবহারিক জ্ঞানলাভ করত।

ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যবস্থায় শৃঙ্খলা : 

ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থী বা শিষ্যদের অনেকগুলি বিষয়ে শৃঙ্খলা মেনে চলতে হত। এখানে কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করা হল— 

(i) সকালবেলা গুরুর শয্যা ত্যাগের পূর্বে শিষ্যকে শয্যা ত্যাগ করতে হত। এ ছাড়া রাত্রিবেলা গুরুর শয্যাগ্রহণের পর শিষ্যরা শয্যাগ্রহণ করতে পারত।

(ii) গুরুগৃহে দিবানিদ্রার অনুমতি ছিল না। তাই শিষ্যরা দিবানিদ্রা পরিহার করে চলত।

(iii) গুরুপাক খাদ্যগ্রহণ ও সুগন্ধি জাতীয় দ্রব্য ব্যবহার থেকে শিষ্যদের বিরত থাকতে হত।

(iv) গুরুর নিকটে পায়ের ওপর পা তুলে বসা বা হেলান দিয়ে বসা, হাইতােলা, থুতুফেলা ইত্যাদি বারণ ছিল। 

(v) নারীর সংস্পর্শ সর্বদা এড়িয়ে চলতে হত। 

(vi) প্রয়ােজনাতিরিক্ত ভিক্ষা করাও নিষিদ্ধ ছিল। 

(vii) শিষ্যদের নৃত্য-গীত-এ অংশগ্রহণও নিষিদ্ধ ছিল। 

(viii) শিষ্যদের ভােগ ও কামনা-বাসনার বিষয়গুলি এড়িয়ে চলতে হত।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment