অভিজ্ঞতাভিত্তিক পাঠক্রম বলতে কী বােঝ? অভিজ্ঞতাভিত্তিক পাঠক্রমের বৈশিষ্ট্য ও ত্রুটিগুলি লেখাে। 2 + (3+3)
উত্তর :
অভিজ্ঞতাভিত্তিক পাঠক্রম :
শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন চাহিদার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত উদ্দেশ্যমুখী বিভিন্ন অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে যে পাঠক্রম প্রণয়ন করা হয়, তাকে অভিজ্ঞতাভিত্তিক পাঠক্রম বলে।
পৃথিবীর চিরপরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে বা সার্থকভাবে অভিযােজিত হতে গেলে মানুষকে বিভিন্ন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হয়। এই ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সে নানান অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে। ওই অভিজ্ঞতাই তাকে বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সংগতিবিধানে সহায়তা করে। তাই শিক্ষার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা’ একটি অতিগুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই আধুনিক কালের শিক্ষাবিদরা বলেছেন—“শিক্ষার পাঠক্রমের উপাদান হবে কতকগুলি অভিজ্ঞতা যা ছাত্রছাত্রীকে ভাবীকালে নতুন নতুন জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে সহায়তা করবে।
অভিজ্ঞতাভিত্তিক পাঠক্রমের বৈশিষ্ট্যসমূহ :
[1] অভিজ্ঞতার সমন্বয়সাধন: অভিজ্ঞতাভিত্তিক পাঠক্রমের মধ্যে জ্ঞানমূলক, দক্ষতামূলক, বােধমূলক, কর্মমূলক ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এককথায় বিভিন্ন অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে অভিজ্ঞতাকেন্দ্রিক পাঠক্রম প্রণয়ন করা হয়।
[2] ফললাভের নীতি অনুসরণ : ফললাভের নীতি (Principle of effect)-এর ওপর ভিত্তি করে অভিজ্ঞতাভিত্তিক পাঠক্রম প্রণয়ন করা হয়।
[3] মনােবিজ্ঞানসম্মত : অভিজ্ঞতাভিত্তিক পাঠক্রম শিক্ষার্থীর চাহিদা ও প্রবণতার ভিত্তিতে প্রণয়ন করা হয়। তাই এটি মনােবিজ্ঞানসম্মত।
[4] ক্ৰম সজ্জিত : অভিজ্ঞতাভিত্তিক পাঠক্রমের অন্তর্গত বিষয়গুলিকে একটি নির্দিষ্ট ক্রম অনুযায়ী সাজানাে হয়।
[5] প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অভিজ্ঞতা লাভ : অভিজ্ঞতাভিত্তিক পাঠক্রমে শিক্ষার্থীরা প্রত্যক্ষ এবং পরােক্ষ—এই দু-ধরনের অভিজ্ঞতা লাভের সুযােগ পায়। নিজে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের দ্বারা শিক্ষার্থী যা শেখে তা হল তার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা এবং গ্রন্থপাঠের মাধ্যমে বা অন্যের অভিজ্ঞতার কথা শুনে যে জ্ঞান লাভ করে, তা হল পরােক্ষ অভিজ্ঞতা।
[6] স্বাধীনভাবে শিক্ষালাভ: অভিজ্ঞতাভিত্তিক পাঠক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থী স্বাধীনভাবে বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানলাভের সুযােগ পায়।
অভিজ্ঞতাভিত্তিক পাঠ্যক্রমের ত্রুটি :
অভিজ্ঞতাভিত্তিক পাঠক্রমের ধারণাটি সমর্থনযােগ্য হলেও এর মধ্যে কিছু ত্রুটি রয়েছে। এখানে কয়েকটি ত্রুটির উল্লেখ করা হল :
[1] সময়সাপেক্ষ : প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা লাভের মাধ্যমে জ্ঞানার্জন খুবই সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। সব কিছুই যদি প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে শিখতে হয়, তাহলে মানুষের স্বল্পকালের। জীবনে তা শেষ করা যাবে না।
[2] অর্থের প্রয়ােজনীয়তা : অভিজ্ঞতাভিত্তিক পাঠক্রমের বাস্তব রূপায়ণের জন্য প্রচুর পরিমাণ অর্থের প্রয়ােজন হয়। অর্থের অভাবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযােগ সৃষ্টি করা সম্ভব হয় না।
[3] শিক্ষকের অভাব : পরােক্ষ অভিজ্ঞতা প্রদানের জন্য। উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের দরকার হয়। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের অভাবে অনেক ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতাভিত্তিক পাঠক্রম অনুযায়ী শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা যায় না।
[4] স্বাধীনতা : অভিজ্ঞতাভিত্তিক পাঠক্রম ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষক-শিক্ষিকার পারস্পরিক অভিজ্ঞতার নিরিখে গড়ে ওঠে। এই ধরনের পাঠক্রম পরিকল্পনার ক্ষেত্রে উভয়ের সমান স্বাধীনতা থাকে। স্বাধীনতা অনেক সময় অসুবিধার সৃষ্টি করে।
[5] সব কিছু অভিজ্ঞতাভিত্তিক করা যায় না : শিক্ষার এমন অনেক বিষয় আছে, সেগুলিকে অভিজ্ঞতাভিত্তিক করা যায় না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়—ড্রাগের নেশা’ কতখানি ক্ষতিকর—তার অভিজ্ঞতা শিশুদের প্রত্যক্ষভাবে দেখানাে যায় না।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।