এ জীবন চলতে চলতে | মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

এ জীবন চলতে চলতে – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

এ জীবন চলতে চলতে

উত্তর:

এ জীবন চলতে চলতে

জীবন গতিশীল। সে নদীর স্রোতের মতােই নিজস্ব লয়ে বয়ে চলে। কোনােকিছুই সময়ের গতিকে স্তন্ধ করতে পারে না। জীবন এগিয়ে চলে তার নিজের ছন্দে। এ জীবন চলতে চলতে তাই নিত্যনতুন মানুষ, নিত্যনতুন অভিজ্ঞতার মুখােমুখি হয় মানুষ। আর জীবন-সায়াহ্নে এসে সেই স্মৃতিতেই সে খোঁজে হারিয়ে যাওয়া রঙিন জীবনের উত্তাপ।

স্মৃতির সরণি বেয়ে তাই হেঁটে চলে নস্টালজিক মানুষ। তার জীবনযাপনে ভবিষ্যতের ভাবনা, অদম্য লড়াই-এর মনােভাব। কিন্তু নিজস্ব মুহূর্তে সে স্মৃতিকাতর। যখনই ‘একলা হতে চাইছে সময়’ তখনই চলে স্মৃতির গভীরে ডুব দেওয়া। ফেলে আসা স্কুলজীবন, বন্ধুদের স্মৃতি ফিরে ফিরে আসে।

“হঠাৎ রাস্তায় অফিস অঞ্চলে
হারিয়ে যাওয়া মুখ চমকে দিয়ে বলে
বন্ধু, কী খবর বল, কতদিন দেখা হয় নি।”

সেই কবে মার হাত ধরে টলমল পা-এ গিয়েছিলাম নার্সারি স্কুলে। | চারপাশে আমারই মতাে কচিকাচারা। সবাই সবকিছু দেখছে, কিন্তু কেউই কিছুই বুঝছে না। এরই মধ্যে একটা ছেলের সঙ্গে ভাব হল—সায়ক। আমার জন্মদিনে ওকে নিমন্ত্রণ করল মা। আমিও গেলাম ওর বাড়িতে। কিন্তু প্রথম বন্ধুত্বের আলপনা মুছে যেতে সময় লাগল না। আমি চলে। গেলাম একটা নতুন স্কুলে। অনেক বড়াে স্কুল, অনেক সহপাঠী। তখনকার অনেক ছােটো আমি যেন আরও ছােটো হয়ে গেলাম। এরই মধ্যে একটি ছেলে—স্বাগত নাম, এসে আমার হাত ধরল। বলল, চল মাঠে যাইসবাই যাচ্ছে। আস্তে আস্তে আরাে কত বন্ধু হল—সুর্যায়ন, তমােগ্ন, শ্রেয়ান। তাদের অনেকেই আজও আমার বন্ধু। কিন্তু অনেকেই তাে হারিয়েও গিয়েছে। গত দুর্গাপুজোয় যােধপুর পার্কের পুজো প্যান্ডেলে একটা হাত হঠাৎই আমার কাঁধ ছুঁলাে। ফিরে তাকালাম কিন্তু ঠিক চিনলাম না। —“আমি শাহিল।”মুহূর্তের মধ্যে মনে পড়ল ক্লাস টু অবধি আমাদের সঙ্গে পড়েছিল। তারপরে খারাপ রেজাল্টের জন্য অন্য স্কুলে চলে যায়। এরকমই কত মুখ হারিয়ে গেছে। বাবাকে দেখি, দেখি, মাঝে। মাঝে স্মৃতির ঝাপি উজাড় করে দেন। বুঝি নদীর মতােই এগিয়ে চলে আমাদের জীবন।

শুধু কী বন্ধুরা ! ক্লাস ওয়ানে আমাদের ক্লাস টিচার ছিলেন যে সুনীতি স্যার—মাস ছয়েক আগে শুনলাম তিনি মারা গিয়েছেন। চোখে জল চলে। এল। কতদিন তার হাত আমার মাথা ছুঁয়েছিল। সনাতন স্যারের ব্যারিটোন কণ্ঠস্বর, পড়া না পারলে বিজয় স্যারের রাম ঠ্যাঙানি—এসব ভুলি কেমন করে। এঁরা আজ অবসর নিয়ে অনেক দুরে। আমার ক্রমশ বাড়তে থাকা জীবন এঁদের স্মৃতিকে মনে করেই ছায়া খোঁজে,শীতল হতে চায়।

ছােটোবেলায় আমাদের বাড়িতে কাজ করত যে রহিমা পিসি—তার কোলেই তাে কেটেছে আমার অনেকগুলাে দিন। ক্লাস ফাইভে পড়ার সময়। কয়েকদিন তাকে আর আসতে দেখি না। মা একদিন বলল, রহিমা পিসি আকাশের তারা হয়ে গেছে। সেদিন না বুঝলেও আজ বড়াে হয়ে তারা হয়ে যাওয়ার মানে বুঝেছি আমি। কিন্তু আজও আকাশের তারায় আমি খুঁজি ছােটোবেলার রহিমা পিসিকে।

গরমের বা পুজোর ছুটিতে দেশের বাড়িতে গেলে আমি থাকতাম দোতলার একটা ঘরে। সে ঘরের মেঝে ছিল টুকটুকে লাল রঙের। জানালা দিয়ে “জীবনস্মৃতি’র শিশু রবির মতােই দেখতাম নীচের পুকুরকে। বাড়ির সংস্কার করতে গিয়ে সে ঘর আজ ভাঙা হয়ে গেছে। কিন্তু আমার অনেক দুরন্তপনা আর নিজস্ব মুহূর্তের সঙ্গে যুক্ত দোতলার সেই ঘর আজও আমার স্মৃতিতে অমলিন। এভাবেই প্রথম সাইকেল, প্রথম খেলনা, প্রথম উপহার পাওয়া বই আজও আমার স্মৃতিজুড়ে রয়েছে। অপ্রয়ােজনীয় ভেবে এদের অনেকেরই বিদায় ঘটেছে বাড়ি থেকে। কিন্তু আজও আমি স্বপ্নে আমার সেই গােলাপি রঙের সাইকেলে বাড়ির সামনে চক্কর দিই।

এভাবেই জীবন এগােয়। জীবনের পড়ে থাকা জিনিসকে কুড়ােতে কুড়ােতে এগিয়ে যাই আমরা। ভবিষ্যতের স্বপ্নময়তার মধ্যে এই স্মৃতির সঞয় থাকে আমাদের জীবনজুড়ে।

আরো পড়ুন

বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ | মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

ছাত্রজীবনে সৌজন্য ও শিষ্টাচার | মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

নিরক্ষরতা দূরীকরণে ছাত্রসমাজ | মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

বিশ্ব উষ্ণায়ন | মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

র‍্যাগিং এবং ছাত্র সমাজ | মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

Read More »

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment