গান্ধিজির শিক্ষাচিন্তা ও কাজকর্ম সংক্ষেপে আলােচনা করাে।
উত্তর:
গান্ধিজির শিক্ষাচিন্তা ও কাজকর্ম
ভারতবর্ষের ইতিহাসে গান্ধিজি একদিকে যেমন রাজনীতিবিদ অপরদিকে তিনি বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ। তিনি শিক্ষাক্ষেত্রে এক গতিশীল দার্শনিক চিন্তার পথপ্রদর্শক। তাঁর শিক্ষাদর্শন, শিক্ষা চিন্তা ও শিক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় এখানে আলােচনা করা হল।
[1] শিক্ষার সংজ্ঞা : শিক্ষার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে গান্ধিজি বুঝিয়েছেন শিক্ষা বলতে আমি বুঝি— শিশুর অন্তর্নিহিত দৈহিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক সর্বপ্রকার সত্তার বিকাশ (‘All round drawing out of the best in child and man body, mind and spirit’)। তার মতে শিক্ষা শুধু আক্ষরিক অর্থে জ্ঞান অর্জনকে বােঝায় না। ব্যক্তিত্বের শিক্ষাই (literacy of the personality) হল প্রকৃত শিক্ষা।
[2] শিক্ষাদর্শন : তাঁর শিক্ষাদর্শনে ভাববাদ, প্রকৃতিবাদ ও প্রয়ােগবাদের সমন্বয় পরিলক্ষিত হয়। তিনি অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা, শিক্ষার মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযােগের সৃষ্টির ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়েছেন। গান্ধিজি সর্বোদয় সমাজদর্শনে বিশ্বাসী ছিলেন।
[3] শিক্ষা চিন্তার প্রায়োগিক দিক : তৎকালীন সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে গান্ধিজি যে শিক্ষা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন— তা ‘বুনিয়াদি শিক্ষা’ বা ‘নঈ-তালিম’ শিক্ষা নামে পরিচিত। এর গুরুত্বপূর্ণ দিক হল— (i) 7 থেকে 14 বছরের বয়স্ক ছেলেমেয়েদের জন্য শিক্ষা হবে বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক। (ii) শিক্ষা হবে শিল্পকেন্দ্রিক ও উৎপাদনমুখী। (iii) শিক্ষার্থীদের উৎপাদিত দ্রব্য বিক্রি করে শিক্ষার ব্যয় বহন করতে হবে। (iv) মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান করতে হবে।
[4] শিক্ষা স্তর : নঈ-তালিম শিক্ষার চারটি স্তর হল (i) প্রাক্-বুনিয়াদি — 7-এর কমবয়সি শিশুরা শিক্ষালাভ করবে। (ii) বুনিয়াদি — 7 থেকে 14 বছর বয়সিরা এই শিক্ষা লাভ করবে। (iii) উত্তর বুনিয়াদি — এই স্তরে 14 বছরের বেশি বয়সিরা শিক্ষালাভ করবে। (iv) প্রাপ্তবয়স্ক — এই স্তরে প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার্থীরা শিক্ষালাভ করবে।
[5] পাঠক্রম : বুনিয়াদি শিক্ষার পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলি হল (i) মূল হস্তশিল্প (Basic Craft) যথা—কৃষিকাজ, তাঁত বোনা, সুতা কাটা, কাঠের কাজ ইত্যাদি। (ii) গণিত যা দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজন (iii) চারুশিল্প (Art) সংগীত, অঙ্কন (v) মেয়েদের জন্য গার্হস্থ্যবিজ্ঞান।
[6] শিক্ষণপদ্ধতি : গান্ধিজি বুনিয়াদি শিক্ষাব্যবস্থায় সক্রিয়তার নীতি ও অনুবন্ধ নীতি অনুসরণ করেন। এই পদ্ধতির মূলকথা হল— একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে অন্যান্য বিষয়ের শিক্ষা লাভ।
[7] শৃঙ্খলা : গান্ধিজি আত্মসংযম (Self Control)-এর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্ত শৃঙ্খলার পথ অনুসরণ করবে, তা অবশ্যই হবে শিক্ষকের তদারকিতে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, গান্ধিজির শিক্ষাদর্শন মনোবৈজ্ঞানিক ও সমাজবৈজ্ঞানিক দিক থেকে অত্যন্ত অর্থবহ। তাঁর শিক্ষাদর্শন মনোবৈজ্ঞানিক কেন-না সক্রিয়তার নীতির ভিত্তি এবং হাতেকলমে কাজের ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত আবার তাঁর শিক্ষাদর্শন সমাজবৈজ্ঞানিক কেন-না তিনি শিক্ষার মধ্য দিয়ে অহিংস, সত্য, সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন এবং শিল্পের মাধ্যমে শিক্ষা এইরূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন, যা গ্রামীণ ভারতের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে। তার শিক্ষাদর্শনের মধ্যে লুকিয়ে আছে ভারতীয় সমাজ থেকে বৈষম্য দূরীকরণের পথ।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।