শিক্ষার লক্ষ্য সম্পর্কে গান্ধিজির মত | বুনিয়াদি শিক্ষার গুণাবলি

প্র: শিক্ষার লক্ষ্য সম্পর্কে গান্ধিজির মত | বুনিয়াদি শিক্ষার গুণাবলি
প্র: গান্ধিজির মতে শিক্ষার লক্ষ্য কী? বুনিয়াদি শিক্ষার গুণাবলি উল্লেখ করো। 3+5

উত্তর: 

শিক্ষার লক্ষ্য সম্পর্কে গান্ধিজির মত : 

শিক্ষাচিন্তা তাঁর ভাববাদী জীবনদর্শন দ্বারা প্রভাবিত। মহাত্মা গান্ধি ভারতে আধুনিক শিক্ষার বিকাশে ছিলেন আজীবন সত্যের পূজারি। তার কাছে সত্যই ছিল ঈশ্বর। ঈশ্বরকে উপলব্ধি করতে হলে সত্যাচরণ হল একমাত্র পথ (I have no God to serve but truth)। তাঁর মতে শিক্ষার লক্ষ্য হল সত্যানুসন্ধান।

গান্ধিজির মতে শিক্ষার উদ্দেশ্য হল শিশুর অন্তর্নিহিত দৈহিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক সর্বপ্রকার সত্তার বিকাশ (All round drawing out of the best in child and man-body, mind and spirit.)

গান্ধিজি শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে উপার্জন এবং উপার্জন করতে করতে শিক্ষা—এই নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। তাই তিনি বলেছেন ‘This education ought to be for them (the children) a kind of Insurance against unemployment.’

তাঁর শিক্ষার লক্ষ্য সম্পর্কে অপর মত হল—চরিত্রগঠন ও নৈতিক শিক্ষা লাভ (The End of knowledge must be the building of character.)

অপরদিকে গান্ধিজি সমস্ত শিক্ষার চরম লক্ষ্য বলে মনে করতেন—আত্মােপলব্ধি (self-realization)। 

বুনিয়াদি শিক্ষার গুণাবলি : 

গান্ধিজি ভারতীয় সংস্কৃতি অনুসরণ করে মানুষের সার্বিক উন্নয়নের জন্য শিক্ষা পরিকল্পনা রচনা করেন। ব্যাবহারিক শিক্ষার অভাবে আজও আমাদের শিক্ষা পুথিসর্বস্ব, তার পরিবর্তে বুনিয়াদি শিক্ষা উপযুক্ত। এই শিক্ষার ইতিবাচক দিক হল—

[1] সক্রিয়তাভিত্তিক শিক্ষা : গান্ধিজির নঈ-তালিম শিক্ষা ব্যবস্থাটি সক্রিয়তার ওপর গড়ে উঠেছিল। তাঁর শিক্ষা ছিল শিল্পকেন্দ্রিক ফলে তা শিক্ষার্থী আত্মসক্রিয়তার মধ্য দিয়ে লাভ করত এবং শিক্ষার্থী খুব সহজেই এই শিক্ষার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছিল। 

[2] সামাজিক গুণের বিকাশ : এই শিক্ষায় শিক্ষার্থীরা দলগত অংশগ্রহণ করে। ফলে সহযােগিতা, সহমর্মিতা ও সমবেদনা প্রভৃতি সামাজিক গুণের বিকাশ ঘটে। শিক্ষার্থীকে পরবর্তীতে সামাজিক হতে শেখায়। 

[3] নৈতিক গুণাবলির বিকাশ : নঈ-তালিম শিক্ষাব্যবস্থায় গান্ধিজি পাঠক্রমকে সত্য ও ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাই শিক্ষার্থী সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কর্মভিত্তিক শিক্ষায় অংশগ্রহণ করে। ফলে তার নৈতিক মূল্যবােধের বিকাশ ঘটে। 

[4] বৃত্তিমুখী শিক্ষা : এই শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা কোনাে একটি বৃত্তিকে কেন্দ্র করে শিক্ষালাভ করে। ফলে অল্পবয়সে বৃত্তি সম্বন্ধে ধারণা জন্মায়।

[5] সৃজনশীলতার বিকাশ : এই শিক্ষা ছিল উৎপাদনমুখী। তাই বিভিন্ন কাজ করতে করতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নানা ধরনের সৃজনশীল ক্ষমতার বিকাশ ঘটত।

[6] বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন : এই শিক্ষায় শিক্ষার্থী নিজের মাথা (Head), হাত (Hand) এবং হৃদয় (Heart)—এই তিনটি কাজে লাগানাের সুযােগ পেত। ফলে তার মধ্যে খুব সহজে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জিত হত। 

[7] অর্থনৈতিক নির্ভরতা : এই শিক্ষা গ্রামভিত্তিক কোনাে শিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠায় গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী হত এবং স্বনির্ভরতা অর্জনে সহায়ক হত।

[8] নিজ সংস্কৃতিতে আস্থা অর্জন : ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ওপর ভিত্তি করেই এই শিক্ষা পরিকল্পিত হয়। ফলে নিজ সংস্কৃতির প্রতি মর্যাদা ও জাতীয়তাবাদ বিকাশে এই শিক্ষা ছিল আদর্শ। দুর্বল ভারতীয় অর্থনীতি, সর্বজন শিক্ষার প্রসার, বুনিয়াদি শিক্ষা ছিল অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু তার যেমন সাফল্যের দিক আছে, কিছু ব্যর্থতার দিকও আছে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment