ওয়াহাবি আন্দোলনের ওপর একটি প্রবন্ধ লেখাে।

প্রশ্ন – ওয়াহাবি আন্দোলনের ওপর একটি প্রবন্ধ লেখাে। 8 Marks | Class 10

উত্তর – ভূমিকা : উনিশ শতকের প্রথমার্ধে ভারতে শাহ ওয়ালিউল্লাহ ও তাঁর পুত্র আজিজ এবং রায়বেরিলির সৈয়দ আহম্মদ ব্রেলভি ভারতে ওয়াহাবি আদর্শের ভিত্তিতে ইসলাম ধর্মের শুদ্ধি আন্দোলন শুরু করেন। বাংলার তিতুমিরের নেতৃত্বে এই আন্দোলন ধর্মীয়, আর্থসামাজিক ও শেষে ব্রিটিশ-বিরােধী আন্দোলনে পরিণত হয়।

আন্দোলনের উদ্দেশ্য : (১) ইসলামের শুদ্ধিকরণ ও ইসলাম ধর্মের কুসংস্কার দূর করে তরিকা-ই-মােহম্মদিয়া প্রতিষ্ঠা করা; (২) ভারতকে ‘দার-উল-হারব’ বা বিধর্মীর দেশ থেকে দার-উল-ইসলাম’ বা ইসলামের দেশে পরিণত করা এবং এই উদ্দেশ্যে শিখ ও ইংরেজ বিরােধিতা করা; (৩) অত্যাচারী সামন্তদের শােষণ থেকে কৃষকদের মুক্ত করা; (৪) নিম্নবর্গের মানুষদের আর্থিক সংকট থেকে মুক্ত করা এবং (৫) ইংরেজি শিক্ষা ও সরকারি উচ্চপদগুলিতে ইংরেজদের একচেটিয়া আধিপত্যের বিরােধিতা করা।

সৈয়দ আহম্মদের ভূমিকা : শাহ ওয়ালিউল্লাহ ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলনের সূচনা করলেও এই আন্দোলনের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রায়বেরিলির সৈয়দ আহম্মদ ব্রেলভি (১৭৬৬-১৮৩১ খ্রিস্টাব্দ)। তিনি এই আন্দোলনের বিস্তার ঘটাতে

প্রথমত, ভারতের নানা স্থানে বিশেষ করে কলকাতায় আবদুল ওয়াহাবের বাণী প্রচার করেন এবং পাটনায় ওয়াহাবিদের প্রধান। কেন্দ্র স্থাপন করেন।

দ্বিতীয়ত, চার খলিফা বা আঞ্চলিক শাসকদের মাধ্যমে ভারতে এর সংগঠন বিস্তৃত হয়। ব্রিটিশের বিরুদ্ধে জেহাদের মাধ্যমে তিনি ভারতকে ‘দার-উল-ইসলাম’-এ পরিণত করতে চান। | 

তৃতীয়ত, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে তার প্রভাব বৃদ্ধি পায়। ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে শিখদের বিরুদ্ধে বালাকোটার যুদ্ধে তাঁর মৃত্যু হয়।

তিতুমিরের ভূমিকা : বাংলার ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রাণপুরুষ তিতুমির এই আন্দোলনের বিস্তার ঘটাতে

প্রথমত, মহাজন, জমিদার, নীলকর ও তাদের সহযােগী ইংরেজদের অত্যাচার ও দমননীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।।

দ্বিতীয়ত, তিনি নারকেলবেড়িয়ায় বাঁশের কেল্লায় সদর দপ্তর স্থাপন করে আশপাশের জমিদারদের কাছে কর দাবি করেন। | তৃতীয়ত, ইংরেজ শাসনের অবসানের কথা ঘােষণা করে তিতুমির নিজেকে ‘বাদশাহ’ রূপে তুলে ধরেন।

চতুর্থত, শেষপর্যন্ত ইংরেজ সেনাবাহিনীর কামানের আঘাতে বাঁশের কেল্লা ধ্বংস হয় এবং তিতুমিরের মৃত্যু হয়।

অন্যত্র আন্দোলনের প্রসার : ওয়াহাবি আন্দোলনকে এনাজাত আলি ফরিদপুর, নদিয়া, রাজশাহী ও পাটনায় ছড়িয়ে দেন। যশাে ঢাকা, ফরিদপুর, নদিয়া, পাবনা, রংপুর, নােয়াখালি, ময়মনসিংত ত্রিপুরা ও শ্রীহট্টে এই আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে।

ব্যর্থতার কারণ : গঠনমূলক কর্মসূচির অভাব, উপযুক্ত সংগঠনের অভাব, ধর্মীয় আন্দোলন হিসেবে শুরু হলেও ক্রমশ এই আন্দোলনের রাজনৈতিক রূপ পরিগ্রহ করা, আন্দোলনে হিন্দু সমাজের যােগদান না করা, আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের অভাব, অভিজাত শ্রেণির সাহায্য না পাওয়া, সরকারের দমননীতি ও বিভেদ নীতি ইত্যাদি কারণে এই আন্দোলন শেষপর্যন্ত ব্যর্থ হয়। 

গুরুত্ব : পরবর্তী আন্দোলনগুলির ওপর ওয়াহাবি আন্দোলনের যথেষ্ট প্রভাব পড়েছিল, যেমন— প্রথমত, এই আন্দোলনের হাত ধরেই ভারতে সর্বপ্রথম মুসলিম সমাজের সংস্কার শুরু হয়।  দ্বিতীয়ত, ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে মতাদর্শ গড়ে তুলে এটি ব্রিটিশ বিরােধী সশস্ত্র রূপ পরিগ্রহ করে, যা আগামী দিনের নতুন পথের সন্ধান দিয়েছিল।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment