প্রশ্ন – জমিদার সভা’ ও ‘ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসােসিয়েশন সম্বন্ধে কী জান? ৫ + ৩ | Class 10 | 8 Marks
উত্তর :
প্রথম অংশ, জমিদার সভা : উনিশ শতকে ভারতে তথা বাংলায় যে সভাসমিতি গড়ে উঠেছিল তাদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছিল জমিদার সভা (১২ নভেম্বর ১৮৩৮ খ্রি.)। এই সভার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন রাধাকান্ত দেব এবং যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন প্রসন্নকুমার ঠাকুর ও ডব্লিউ সি হ্যারি।
জমিদার সভার উদ্দেশ্য : জমিদার সভা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যগুলি ছিল—
প্রথমত, বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার জমিদার স্বার্থ রক্ষা করা ও জমিদারদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা;
দ্বিতীয়ত, জমিজমা সংক্রান্ত বিষয় এবং সরকার কর্তৃক নিষ্কর জমির বাজেয়াপ্তকরণ বিষয়ে আন্দোলন গড়ে তােলা;
তৃতীয়ত, ভারতের বিভিন্ন অঞলে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রবর্তন।
বাস্তবেও দেখা যায় যে, বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা’ নিষ্কর জমির বাজেয়াপ্তকরণ বিষয়ে যে আন্দোলন শুরু করেছিল, ‘জমিদার সভা’ আবার সেই বিষয়েই নতুন করে আলােচনা শুরু করে।
জমিদার সভার কার্যাবলি : জমিদার সভার উদ্দেশ্য ছিল। জমিদারদের স্বার্থ সুরক্ষিত করা। এই সভার কার্যাবলি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে
১) জমিদারদের মত প্রকাশ : নিষ্কর জমি বাজেয়াপ্ত করা এবং প্রশাসনের বিভিন্ন কাজকর্ম পুলিশ, আইন-আদালত, আদালতে ব্যবহৃত ভাষা, রাজস্ব ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে জমিদার সভা তার নিজস্ব মতামত প্রকাশ করতে থাকে।
২) সরকারি মর্যাদা : কিছুদিনের মধ্যেই জমিদার সভা সরকারের কাছ থেকে চেম্বার অফ কমার্সের মর্যাদা পায়। সরকারের প্রস্তাবিত আইন-কানুন চূড়ান্ত হওয়ার আগে জমিদার সভার মতামত নেওয়া হত।
3) নিষ্কর জমির ব্যবস্থা : জমিদার সভার কার্যক্রমের জন্যই প্রতি গ্রামে পাশ বিঘা জমি নিষ্কর রাখার ব্যবস্থা হওয়ায় জমিদার থেকে রায়ত সকলেই এর দ্বারা উপকৃত হয়েছিলেন।
4) নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের পুরােধা : এই সভাই প্রথম নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের পথ দেখায়। রাজেন্দ্রলাল মিত্রের মতে, জমিদার সভা ছিল ভারতের রাজনৈতিক তথা স্বাধীনতা আন্দোলনের পুরােধা। . দ্বিতীয় অংশ, ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসােসিয়েশন-এর (বাংলা নাম ব্রিটিশ ভারতবর্ষীয় সভা) প্রতিষ্ঠাকাল ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দের ২৯ অক্টোবর। ইতিপূর্বে গঠিত জমিদার সভা (১৮৩৮ খ্রি.) এবং ‘বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সােসাইটি (১৮৪৩ খ্রি.) ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে মিলিত হয় এবং এই দুই সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত হয় ব্রিটিশ ইন্ডিয়া অ্যাসােসিয়েশন। সভার প্রথম সভাপতি ছিলেন রাজা রাধাকান্ত দেব এবং সম্পাদক দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। উদ্দেশ্য : এই সভা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ শাসিত ভারতের উন্নতিসাধন এবং তার জন্য বিভিন্ন আন্দোলন পরিচালনা।
কার্যকলাপ : প্রতিষ্ঠার কিছুদিন পরেই
প্রথমত, এই অ্যাসােসিয়েশন ভারত শাসনসংস্কারমূলক একটি স্মারকলিপি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাঠায়।
দ্বিতীয়ত, অ্যাসােসিয়েশন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রাজস্ব, পুলিশ, আইন-কানুন প্রভৃতি বিষয়ে সরকারের সমালােচনাও করে;
তৃতীয়ত, এই সভা জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য বিভিন্ন প্রস্তাবের পাশাপাশি। ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে অ্যাসােসিয়েশন শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি নিয়ন্ত্রণে বাধা দেয় এবং জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার কাজে এই সভা সক্রিয় সহযােগিতা করে।
ব্রিটিশ ভারতে এই সভার কার্যকলাপ মূলত বাংলাদেশে সীমাবদ্ধ হলেও এটাই ছিল ভারতের প্রথম বৃহত্তম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।