আনন্দমঠ ও বৰ্ত্তমান ভারত গ্রন্থের বক্তব্য বিশ্লেষণ করাে।

আনন্দমঠ ও বৰ্ত্তমান ভারত গ্রন্থের বক্তব্য বিশ্লেষণ করাে। 8 Marks | Class 10

উত্তর) প্রথম অংশ আনন্দমঠ উপন্যাসের বক্তব্য : বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘আনন্দমঠ উপন্যাস (১৮৮২ খ্রি.) ছিল। জাতীয়তাবাদী উপন্যাস।

বিষয়বস্তু : ‘আনন্দমঠ উপন্যাসের বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ করলে। মূল বক্তব্য সম্পর্কে দেখা যায় যে—

প্রথমত, ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের সময়ে দেশের অরাজকতা ও উত্তরবঙ্গে সংঘটিত সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহের ক্ষীণ সূত্র ধরে অতীতের পটভূ মিতে বঙ্কিম এক উজ্জ্বল ও জীবন্ত চিত্র তুলে ধরেন।

দ্বিতীয়ত, স্বাদেশিকতা, আধ্যাত্মিকতা দেশােদ্ধারকারী সন্তান দলের’ প্রতিষ্ঠানের নামটিই আনন্দমঠ। এঁদের জীবনের মূলমন্ত্র ছিল, জননী ও জন্মভূমি স্বর্গের চেয়েও গরিমাময়।। 

তৃতীয়ত, সন্তানদলের প্রধান স্বামী সত্যানন্দ মহেন্দ্রকে যে মাতৃমূর্তি দেখান, তার তিনটি রূপ, যেমন— ‘মা যা ছিলেন’, ‘মা যা হইয়াছেন এবং মা যা হইবেন। দ্বিতীয় মূর্তিটি মায়ের নগ্নিকা মূর্তি। ঔপনিবেশিক শাসনকালে যা রিক্ত ও নিঃস্ব, চারিদিকে শ্মশানের। পরিবেশ ও মৃত্যুর হাহাকার; তৃতীয় রূপটি হল ঔপনিবেশিক। শাসনের অবসানে মা যে রূপটি ফিরে পাবেন, তা হল দশভূজা দুর্গার রূপ। এ

জাতীয়তাবাদ : বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসে

প্রথমত, জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ধর্মবােধকে জুড়ে দিয়েছিলেন। কারণ বাঙালির জাতীয়তাবাদের এক বড়াে অংশজুড়েই ছিল ধর্ম। 

দ্বিতীয়ত, এই গ্রন্থে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ব্যক্তিজীবনের সঙ্গে জাতীয় জীবনের, জাতীয় জীবনের সঙ্গে রাষ্ট্র ও ধর্মের সমন্বয়সাধন করেছেন। এই পূর্ণ সামঞ্জস্যবিধানের সূত্রটি তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন ফরাসি দার্শনিক কোতে-এর ‘পজিটিভজম’ নামে ইতিবাচক মতবাদের মধ্যে।

তৃতীয়ত, ‘আনন্দমঠ’-এর মাধ্যমে দেশপ্রেমের বাণী বন্দে মাতরম্ নামক অভয়চন্দ্র প্রকাশিত হয়।।

দ্বিতীয় অংশ, বর্তমান ভারত’ গ্রন্থের বক্তব্য: বিবেকানন্দের বর্তমান ভারত’ গ্রন্থটি, শুধুমাত্র ভারতবর্ষের নয় বরং সমগ্র মানবজাতির উত্থান-পতনের একটি সুচিন্তিত সমাজতাত্ত্বিক ইতিহাস। 

বর্তমান ভারত ও জাতীয়তাবাদ : এই গ্রন্থে স্বামীজি দেখিয়েছেন যে— 

১) চতুর্বর্ণের ইতিহাস : ব্রাত্মণ-ক্ষত্রিয়-বৈশ্য চক্রবৎ পর্যায়ক্রমে ভারতে আধিপত্য বিস্তার করে। বৈদিক যুগে ছিল ব্রাত্মণদের আধিপত্য, তার পরে সাম্রাজ্যবাদের যুগে, প্রতিষ্ঠিত হয় ক্ষত্রিয়দের আধিপত্য, তারপরে ভারতে এসেছে বণিক বা বৈশ্য ইংরেজদের যুগ। বিবেকানন্দের মতে, এই যুগেই ঘটবে শূদ্র জাগরণ, অথাৎ পরাধীন ভারতবর্ষের জাগরণ। তিনি বলেছেন, এমন দিন খুব শীঘ্রই আসছে যেদিন শূদ্রত্বের সহিত শূদ্রের প্রাধান্য হইবে, শূদ্ররা সমাজে একাধিপত্য লাভ করিবে, ……..

২) ভারতের বােধিলাভ : বিবেকানন্দ এ কথাই বােঝাতে চেয়েছেন যে পাশ্চাত্য শিক্ষা সভ্যতা ও সংস্কৃতির সংস্পশে। এসে ভারতবাসীর যে ‘বােধি লাভ ঘটেছে, তাতেই সৃষ্টি হয়েছে। এক নতুন ভারতীয় সমাজ যারা একদিন ভারতবর্ষকে মুক্তির পথ দেখাবে।

৩) পরানুকরণে নিষেধাজ্ঞা : বিবেকানন্দ বৰ্ত্তমান ভারত গ্রন্থে বিদেশি পাশ্চাত্য শাসনের দোষ-গুণ বিচার করে দেখিয়েছেন যে, এর সংস্পর্শে এসে দীর্ঘ সুপ্ত ভারত ধীরে ধীরে জেগে উঠেছে। আধুনিক পাশ্চাত্যের অর্থকরী বিদ্যা, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রনীতির আদর্শ ধীরে ধীরে ভারতীয় মনকে প্রভাবিত করেছে। কিন্তু নিজের আদর্শকে বিস্মৃত হয়ে আমরা যেন পরানুকরণেই প্রবৃত্ত না হই।। 

৪) নতুন ভারত গঠন : স্বামীজি ভারতবাসীর উদ্দেশ্যে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছিলেন। বিবেকানন্দের ভারতবর্ষ হল সেই ভারতবর্ষ, যা পরানুকরণহীন, স্বকীয় তেজে উদ্দীপ্ত, সর্বপ্রকারে স্বাধীন, চিন্তা-ভাবনায় চরিত্রে মননে সর্বতােভাবে। 

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment