রবীন্দ্রনাথের গােরা’ উপন্যাসের জাতীয়তাবাদী চরিত্র বিশ্লেষণ করাে

প্রশ্ন – রবীন্দ্রনাথের গােরা’ উপন্যাসের জাতীয়তাবাদী চরিত্র বিশ্লেষণ করাে। Class 10 | 8 Marks

উত্তর) ভূমিকা : ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের বাংলা স্বদেশি আন্দোলন গােটা দেশে যে জাতীয়তাবাদের উদবােধন ঘটিয়েছিল তা ছিল। এই ‘গােরা’ উপন্যাসটির পটভূমি। 

জাতীয়তাবাদী চরিত্র : 

১) প্রেক্ষাপট : ‘গােরা’ উপন্যাসের উল্লেখযােগ্য চরিত্রগুলির (গােরা, আনন্দময়ী, পরেশবাবু, বিনয়, ললিতা, সুচরিতা ও কৃয়দয়াল) মাধ্যমে উনিশ শতকের সনাতন হিন্দুধর্ম ও ব্রাত্মধর্মের মধ্যে সংঘাতকে তিনি তুলে ধরেন। 

২) মানবতার আদর্শ: ‘গােরা’ উপন্যাসের মূল চরিত্র ‘গােরা’-র মধ্যে দিয়ে রূপ পেয়েছে রবীন্দ্রনাথের উদার প্রেমভিত্তিক বিশ্বমানবতার আদর্শ। 

৩) অরাজনৈতিক চেতনা : স্বদেশি আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে জাতির বন্ধনমুক্তির যে প্রয়াস, রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ, রবীন্দ্রনাথ। তাকে স্বাগত জানিয়েছেন। কিন্তু স্বদেশি উন্মাদনার মধ্যে দিয়ে হিংসার যে প্রকাশ ঘটে—রবীন্দ্রনাথ মেনে নিতে পারেননি। তিনি চেয়েছিলেন সমস্তরকম সংকীর্ণতা থেকে রাজনীতির মুক্তি।

৪) বন্ধনদশার মুক্তি : কোথায় আমাদের দুর্বলতা, স্বাধীনতার লাভের আগে কীভাবে আমরা আমাদের অন্তরের বন্ধনদশাকে কাটিয়ে উঠতে পারি, তার পথ খোঁজার জন্যেও আবেদন জানিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তিনি ‘গােরা’ চরিত্রের মধ্যে দিয়ে যুগয়েছেন স্বদেশিয়ানার চাইতেও অনেক বড়াে মানবতা ও মনুষ্যত্বের সাধনা।

৫) সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদের সমালােচনা : ‘গােরা’-র মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথ সংকীর্ণ জাতীয়তার তীব্র সমালােচনা করেছিলেন, হিন্দু সমাজের অন্ধ অনুদারতাকে ভৎসনা জানিয়েছিলেন। গােটা 

ভারতবর্ষের জীবনদর্শন ‘গােরা’ উপন্যাস। গােরা চরিত্রটির মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে।

রবীন্দ্রনাথের বক্তব্যের তাৎপর্য : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গােরা’ উপন্যাস যেভাবে জাতীয়তাবাদের প্রসারে সাহায্য করেছিল। তা হল

১) দেশীয় সমাজকে গুরুত্বদান : তিনি ইউরােপীয় সমাজের পরিবর্তে এদেশীয় সমাজের ওপর গুরুত্ব দান করে স্বদেশীয় আদর্শকে প্রতিষ্ঠা করেন এবং স্বদেশপ্রেমের আদর্শ প্রচার করেন। 

২) সংঘশক্তি : হিন্দুসমাজের জাতিভেদপ্রথার স্বরূপ তুলে ধরে সংঘশক্তির প্রয়ােজনীয়তাকে তুলে ধরেন।

৩) মানবধর্ম : উপন্যাসের শেষে ধর্মের পরিবর্তে মানবধর্মের ওপর গুরুত্ব আরােপ করে ভারতীয় জাতীয়তাবাদকে ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদে উন্নীত করেন। 

উপসংহার : বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠ উপন্যাসের হিংসাত্মক জাতীয়তাবাদ সম্ভবত রবীন্দ্রনাথের পছন্দ ছিল না। মনে হয়, তারই প্রতিবাদে যেন লেখা ‘গােরা’ উপন্যাসটি। গােরা’ উপন্যাসের মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ আন্তর্জাতিকতাবাদের সঙ্গে ভারতবর্ষকে মিলিয়ে দিয়েছেন।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment