প্রশ্ন – তেভাগা আন্দোলনের সূচনা ও পরিণতি আলােচনা করাে। 8 Marks | Class 10
উত্তর) ভূমিকা : ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কিষানসভার উদ্যোগে এবং কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে বাংলার বিস্তীর্ণ অঞলে ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলন শুরু হয়।।
তেভাগা কেন ? : কমিউনিস্ট দলের নেতৃত্বে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কিষানসভা ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে তেভাগা আন্দোলনের প্রস্তাব গ্রহণ করে। মূল দাবি ছিল—(১) উৎপন্ন ফসলের ২/৩ ভাগ কৃষকের প্রাপ্য এবং মালিক পাবে ১/৩ অংশ; (২) জমিতে ভাগচাষিকে দখলিস্বত্ব দিতে হবে; (৩) ১২ ১/২শতাংশ-এর বেশি সুদ মহাজন। বা জমিদাররা দাবি করতে পারবে না; (৪) কোনাে কাজে কর। (আবওয়াব) আদায় করা যাবে না; (৫) ফসলের ভাগ নিয়ে রসিদ দিতে হবে; (৬) ভাগচাষির খামারে ধান তুলতে হবে; (৭) “আধি নয়, তেভাগা চাই, কর্জ ধানের সুদ নাই’; এবং (৮) ১ মণে ৫ সের-এর বেশি সুদ নেওয়া যাবে না।
প্রসার : তেভাগা আন্দোলন বাংলার প্রায় সব জেলায় শুরু হয়েছিল—দিনাজপুর, ময়মনসিং, কাকদ্বীপ, রংপুর, বগুড়া, জলপাইগুড়ি, যশাের, খুলনা ছিল তাদের মধ্যে অন্যতম। বাংলার প্রায় ৬০ লক্ষ কৃষক এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এই বিদ্রোহের। চরিত্রগত স্বাতন্ত্র উল্লেখ করে ঐতিহাসিক ধনাগারে লিখেছেন, ” was the first consciously attempted revolt by a politicised Peasantry in Indian History.’
নেতৃবৃন্দ : তেভাগা আন্দোলনে উল্লেখযােগ্য নেতা, নেত্রার হলেন—গুরুদাস তালুকদার, ভবানী সেন, অবনী রায়,” সেন, চারু মজুমদার, সমর গাঙ্গুলী, সুশীল সেন, জলপাইগুড়ির রাজবংশী বৃদ্ধা মহিলা বুড়িমা প্রমুখ।
পরিণতি : সরকারের কঠোর দমননীতি, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা, সাবিক ঐক্যের অভাব ইত্যাদি কারণে আন্দোলন ব্যর্থ হলে পরবর্তীকালে বর্গাদার আইন, বাংলা ভূমিস্বত্ব আইন, জমিদারি উচ্ছেদ প্রসঙ্গে তেভাগা আন্দোলনের প্রভাবকে অস্বীকার করা যায় না। এগুলি হল—
১। দাবির স্বীকৃতি : তেভাগা আন্দোলনের ব্যাপকতায় পশ্চিমবঙ্গ সরকার একটি অর্ডিন্যান্স জারি করে তেভাগার দাবি মেনে নেয়। (অক্টোবর, ১৯৪৯ খ্রি.)।
২। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি : এই আন্দোলনে হিন্দু তথাকথিত নিম্নবর্গের হিন্দু (রাজবংশী, নমঃশূদ্র), আদিবাসী ও মুসলিম ঐক্যবদ্ধভাবে অংশ নিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির সৃষ্টি করেছিল।.
৩। সংগ্রামী চেতনা : এই আন্দোলন কৃষকদের সংগ্রামী চেতনাকে তুলে ধরে কৃষক আন্দোলন ও শ্রেণি সংগ্রামের নজির তুলে ধরেছিল।
৪। কমিউনিস্ট দলের প্রভাব : কমিউনিস্ট পার্টি এই আন্দোলনের কর্মসূচি ও রণকৌশল নির্ধারণ করে আন্দোলনকে সফল করেছিল এবং বাংলার কৃষক সমাজের ওপর প্রভাব স্থাপনে সমর্থ হয়েছিল।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।