বিশ শতকের কিষান আন্দোলনের সঙ্গে জাতীয় কংগ্রেস ও বামপন্থীদের সম্পর্ক আলােচনা করাে।

প্রশ্ন – বিশ শতকের কিষান আন্দোলনের সঙ্গে জাতীয় কংগ্রেস ও বামপন্থীদের সম্পর্ক আলােচনা করাে। 8 Marks | Class 10

উত্তর) ভূমিকা : বিশ শতকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে যে কিষান আন্দোলনগুলি ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সংগঠিত হয়েছিল, সেগুলির ওপর জাতীয় কংগ্রেসের প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষ প্রভাব থাকলেও চল্লিশের দশকে এই কিষান আন্দোলনগুলি কমিউনিস্ট নিয়ন্ত্রণাধীন হয়ে পড়ে।

কিষান আন্দোলনের সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্ক : 

১) কৃষক আন্দোলন সম্পর্কে দ্বিমুখী নীতি : জাতীয় কংগ্রেস কৃষক আন্দোলনকে জাতীয় সংগ্রামের মূল স্রোতের সঙ্গে বেঁধে রাখতে বদ্ধপরিকর ছিল। কৃষকদের জন্য এবং কৃষকদের নেতৃত্বে কোনােরকম শ্রেণি সংগ্রাম গড়ে তােলার ইচ্ছা কংগ্রেস নেতাদের ছিল না।

২) কৃষক আন্দোলনের নিয়ন্ত্রক : কৃষক আন্দোলনে সামান্যতম। হিংসার প্রকাশ পেলে কংগ্রেস কৃষকদের উৎসাহ উদ্দীপনার রাশ টেনে ধরত। এর ফলে ভারতের কৃষক আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

৩) গান্ধিজির চিন্তাধারা : অনেকে মনে করেন, শ্রেণিসংগ্রামের পরিবর্তে শ্রেণি-সহযােগিতায় বিশ্বাসী গান্ধিজি শ্রেণিসংগ্রামের পথ এড়িয়ে গ্রাম পুনর্গঠন ও খাদি আন্দোলনের মাধ্যমে কৃষকদের। স্বনির্ভর করে তুলতে চেয়েছিলেন। 

৪) গান্ধিজির প্রতি কৃষকদের আস্থা : কৃষকরা অন্তর থেকে বিশ্বাস করত যে, ইংরেজ শাসনের অবসানের পর ভারতে গান্ধিরাজ প্রতিষ্ঠিত হবে এবং তাদের দুঃখের দিন শেষ হবে। এজন্য গান্ধিজি পরিচালিত আন্দোলনগুলিতে কৃষকদের অকুণ্ঠ সমর্থন ছিল | 

মূল্যায়ন – কংগ্রেস কৃষক আন্দোলনের স্বতঃস্ফূর্ত ও স্বপ্রণােদিত। ধারাকে রাজনৈতিক স্বার্থে কাজে লাগানাের চেষ্টা করলেও কংগ্রেসি নেতাদের আপস নীতি ও অহিংসা নীতি কৃষক সমাজকে কংগ্রেসের প্রতি বিমুখ করে তােলে। গান্ধিবাদী বাবা রামচন্দ্র কংগ্রেসি নীতিতে বিরক্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত লেনিন ও রাশিয়ার প্রশংসা করতে থাকেন।

কিষান আন্দোলনের সঙ্গে বামপন্থীদের সম্পর্ক : কংগ্রেসি আন্দোলনে হতাশ হয়েই অনেক কৃষক নেতা বামপন্থীদের দিকে ঝুঁকলেও কমিউনিস্টদের পক্ষে কৃষকদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করা কঠিন কাজ ছিল। 

১) শ্রেণিসংগ্রাম গড়ে তােলার প্রতিবন্ধকতা : আদিবাসী কৃষক, বর্গাদার, দরিদ্র ও ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে কমিউনিস্টদের ব্যাপক প্রভাব থাকলেও আঞ্চলিক বৈষম্য, ধর্মীয় বিভেদ, জাতিভেদ। প্রথা অর্থাৎ, গ্রামীণ সমাজের কাঠামােগত জটিলতা শ্রেণিসংগ্রাম গড়ে তােলার পথে অন্তরায়ের সৃষ্টি করেছিল।

২) কমিউনিস্টদের কর্মাবিধি নিয়ন্ত্রণ : সােভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টি প্রভাবিত কমিন্টার্নের নির্দেশে ভারতীয় কমিউনিস্টদের কর্মবিধি নিয়ন্ত্রিত হত বলে তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারত না। 

3) কৃষকদের ওপর কমিউনিস্টদের প্রভাব : বাংলা ও বিহারে কমিউনিস্টরা কংগ্রেসের কিষান আন্দোলনের বিকল্প হিসেবে নিজেদের একটা ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল—যা কংগ্রেসের কাছে মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়ায়। এই কারণে ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে ডিসেম্বর মাসে কংগ্রেস তাদের কর্মীদের কিষান সভার কার্যাবলি থেকে দূরে থাকতে নির্দেশ দিয়েছিল। 

৪) বিশ্বযুদ্ধোত্তর কৃষক আন্দোলন নেতৃত্ব : বিশ শতকের চল্লিশের দশকে স্বাধীনতার প্রাক্কালে যেসব কৃষক আন্দোলন (যেমন—তেভাগা, তেলেঙ্গানা, পুন্নাপ্রা-ভায়লার) সংগঠিত হয়েছিল সেগুলি কমিউনিস্ট নেতৃত্বাধীন পরিচালিত হয়েছিল।

মূল্যায়ন : পরিশেষে বলা যায় যে, কৃষক আন্দোলনকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে নিয়ে যাওয়ার জন্য কৃষকদের অনেকেই কিষান সভা ও কংগ্রেসের সদস্যপদ নিয়েছিল—যা আন্দোলনকে দীর্ঘস্থায়ী ও মজবুত করতে সাহায্য করেছিল পণ।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment