১৯২০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের বিবর্তন উল্লেখ করাে

প্রশ্ন – ১৯২০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের বিবর্তন উল্লেখ করাে Class 10 | 8 Marks

উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে মূলত ব্রিটিশ পুঁজিপতিদের উদ্যোগে ভারতে চা, কফি, নীল, রেল, চটকল, সুতিকল, লৌহ-ইস্পাত শিল্প গড়ে উঠলে ভারতে শ্রমিক শ্রেণির উদ্ভব ঘটে। উনিশ শতকের শেষে সপ্তাহে একদিন ছুটি, মজুরি বৃদ্ধি, কারখানা আইনের প্রবর্তন প্রভৃতি দাবিকে কেন্দ্র করে শ্রমিক ধর্মঘট সংঘটিত হত।

শ্রমিক আন্দোলনের বিবর্তন : উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়ের মধ্যবর্তীকালে ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের বিবর্তন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে—

1) উনিশ শতকের ধর্মঘট : হাওড়া রেলস্টেশনে ১২০০ রেল শ্রমিকের দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলন (১৮৬২ খ্রি.) ছিল ভারতের শিল্প শ্রমিকদের প্রথম ধর্মঘট | ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে নাগপুর এমপ্রেস মিলের শ্রমিক ধর্মঘট এবং ১৮৮২-১৮৯০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মাদ্রাজ ও বােম্বাইয়ের ২৫টি ধর্মঘট ছিল খুব উল্লেখযােগ্য। 

2) স্বদেশি আন্দোলনকালে শ্রমিক ধর্মঘট : বঙ্গভঙ্গ-বিরােধী বা স্বদেশি আন্দোলন (১৯০৫-১৯১১ খ্রি.) ছিল ভারতে পেশাদারি শ্রমিক আন্দোলনের সময়পর্ব, কারণ— 

ক) বাংলা : বঙ্গভঙ্গের দিন (১৬ অক্টোবর, ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দ) হাওড়ার বার্ন কোম্পানির ১২ হাজার শ্রমিক বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে ধর্মঘট শুরু করে। এ ছাড়া কলকাতায় ‘প্রিন্টার্স অ্যান্ড কম্পােপ্রিন্টার্স লিগ’ গঠিত হয়, ইস্ট ইন্ডিয়া রেলপথের কর্মীরা দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন। দাশের নেতৃত্বে আন্দোলনে শামিল হয়, বাংলায় পাটকলগুলিতেও ধর্মঘট শুরু হয়।

খ) তামিলনাড়ু : তামিলনাড়ুর তুতিকোরিনে বাড়তি মজুরির দাবিতে চিদাম্বরম পিল্লাই-এর নেতৃত্বে ধর্মঘট চলাকালীন চিদাম্বরম পিল্লাই গ্রেপ্তার হলে শ্রমিকরা দাঙ্গা বাধায়।।

গ) বােম্বাই : বােম্বাইয়ে কংগ্রেস নেতা বালগঙ্গাধর তিলকের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বস্ত্রকলগুলিতে ধর্মঘট শুরু হয়, পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের খণ্ডযুদ্ধ হয়। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে বােম্বাই-এ ৮ হাজার শ্রমিক ধর্মঘটে শামিল হয়। 

3) অন্যান্য স্থানে : কানপুর, আমেদাবাদ, জামালপুরে রেলওয়ে ওয়ার্কশপে ধর্মঘটের দ্বারা শ্রমিকরা আন্দোলনকে সমর্থন জানায়।

4) বঙ্গভঙ্গ পরবর্তীকালের শ্রমিক আন্দোলন : বঙ্গভঙ্গ রদের (১৯১১ খ্রি.) পরবর্তীকালে উল্লেখযােগ্য ধর্মঘট না হলেও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় (১৯১৪-১৯১৮) ভারতে বেশ কিছু শ্রমিক ধর্মঘট হয়েছিল। এগুলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছিল—করাচির নর্থ ওয়েস্টার্ন রেলওয়ে কারখানা (ফেব্রুয়ারি, ১৯১৭ খ্রি.), গ্রেট ইন্ডিয়া পেনিনসুলার রেলওয়ের কারখানার ধর্মঘট (ফেব্রুয়ারি, ১৯১৭ খ্রি.), বােম্বাইয়ের ডক শ্রমিকদের ধর্মঘট (সেপ্টেম্বর, ১৯১৭ খ্রি.) এবং আমেদাবাদ বস্ত্রশিল্পের ধর্মঘট (১৯১৮ খ্রি.)। 

5) প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ধর্মঘট : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে শ্রমিক স্বার্থকে সুরক্ষিত করতে শ্রমিক সংগঠন গড়ে উঠতে থাকে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল বি পি ওয়াদিয়া কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাজ লেবার ইউনিয়ন’ (১৯১৮ খ্রি.)। এই বছরের উল্লেখযােগ্য শ্রমিক ধর্মঘট ছিল—কলকাতা পৌরসভা, বােম্বাইয়ের বস্ত্রশিল্প, খড়গপুর রেল কারখানা, মাদ্রাজের বস্ত্রশিল্প ও লক্ষৌর রেল কারখানার শ্রমিক ধর্মঘট।

6) ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ধর্মঘট : ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে ১৯১৯ ও ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের শ্রমিক ধর্মঘট ছিল খুব উল্লেখযােগ্য। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে বােম্বাই বস্ত্র শিল্পের দেড় লক্ষ শ্রমিকের ধর্মঘট এবং মাদ্রাজ, বাংলা, বিহার, আসামের রেল কারখানার বস্ত্রশিল্প ও পাটশিল্পের ধর্মঘট। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে সারা ভারতে ধর্মঘটের সংখ্যা ছিল ২০০ |

7) সর্বভারতীয় শ্রমিক আন্দোলন : ১৯১৯ এবং ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের অমৃতসর ও গয়া অধিবেশনে শ্রমিক সংগঠন গড়ে তােলার ক্ষেত্রে গৃহীত উদ্যোগের ফলশ্রুতি হিসেবে জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে গঠিত হয় সর্বভারতীয় শ্রমিক সংগঠন AITUC। লালা লাজপত রায় ছিলেন এই সংগঠনের প্রথম সভাপতি। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে সর্বভারতীয় ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের সভাপতিরূপে জওহরলাল নেহরুর নির্বাচন শ্রমিক আন্দোলনকে কংগ্রেসের। কাছাকাছি নিয়ে আসে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment