কংগ্রেসের অভ্যন্তরে সমাজতন্ত্র প্রসারে জওহরলাল নেহরুর ভূমিকা আলােচনা করাে। গান্ধি-নেহরু বিতর্ক কী? ৫ + ৩ = ৮ Marks/Class 10
উত্তর:-
প্রথম অংশ :
সমাজতন্ত্র প্রসারে জওহরলাল নেহরুর ভূমিকা : জওহরলাল নেহরু ছিলেন জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী ভাবধারার মূল প্রবক্তা। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের লাহাের অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে তিনি নিজেকে সমাজতন্ত্রী বলে অভিহিত করেন।
জওহরলালের সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারার উৎস : ১৯২৬-২৭ খ্রিস্টাব্দে ইউরােপ সফরের সময় নেহরু ইউরােপের বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মী ও চিন্তানায়কদের সংস্পর্শে আসেন। ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে ব্রাসেলস-এ পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ-বিরােধী আন্দোলনে শ্রমজীবী মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত সাম্রাজ্যবাদ-বিরােধী যে আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, সেখানে জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি যােগ দিয়েছিলেন। মানবেন্দ্রনাথ রায়ের চিন্তাধারাও তাকে গভীরভাবে আকৃষ্ট করেছিল।
সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারা : ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে ভারত কোন্ পথে’ নামক প্রবন্ধে জওহরলাল নেহরু শ্রেণি বৈষম্যমুক্ত সমাজগঠনের কথা ব্যক্ত করেন এবং সােভিয়েত সমাজতন্ত্রবাদকে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে ঘােষণা করেন। তার চিন্তাধারায় আকৃষ্ট হয়ে কংগ্রেসের অভ্যন্তরে একটি বামপন্থী গােষ্ঠীর বিকাশ ঘটতে শুরু করে, যার পরিণতিরূপে ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের প্রতিষ্ঠা হয়। তবে তিনি কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকলেও কোনােদিন এর সদস্যপদ গ্রহণ করেননি।
নেহরু বামপন্থী কার্যধারা : ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে লখনউ-তে কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে নেহরু বলেন—এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত যে বিশ্বের ও ভারতের সমস্ত সমস্যা সমাধানের একমাত্র চাবিকাঠি হল সমাজতন্ত্র। অচ্যুত পটবর্ধন, জয়প্রকাশ নারায়ণ, নরেন্দ্রদেবকে কংগ্রেসের কার্যকরী সমিতিতে অন্তর্ভুক্ত করলে নীতি নির্ধারণে বামপন্থী আদর্শের সংযােজন সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। কারণ এর ফলে কংগ্রেসের সংগ্রামী ভাবমূর্তি নষ্ট হয়ে যাবে।
গান্ধি-নেহরু বিতর্ক : গান্ধি-নেহরু বিবাদ বহুদিনের ডােমিনিয়ান স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে। কিন্তু লখনউ অধিবেশনে গান্ধিজির নির্দেশে নেহরুর সভাপতি হওয়া ও বামপন্থী ধ্যানধারণার আস্ফালন গান্ধিজিকে মােটেই খুশি করতে পারেনি। গান্ধিজি জওহরলালের সমালােচনা করে বলেন, জওহরের পথ আমার পথ নয়। তিনি কার্যত তার কর্মপদ্ধতি অনুমােদন করেননি। তিনি সর্বশক্তি দিয়ে শ্রেণিসংগ্রামের বিরােধিতা করবেন বলে ঘােষণা করেন। ইতিহাসে এটিই গান্ধি-নেহরু বিতর্ক হিসেবে পরিচিত।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।