বিশ শতকের ত্রিশ ও চল্লিশের দশকে জাতীয় রাজনীতিতে বামপন্থী প্রবণতা বৃদ্ধির কারণ কী? মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা কী?

বিশ শতকের ত্রিশ ও চল্লিশের দশকে জাতীয় রাজনীতিতে বামপন্থী প্রবণতা বৃদ্ধির কারণ কী? মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা কী ৫+৩=৮ Marks/Class 10

উত্তর:-

প্রথম অংশ : ত্রিশ-চল্লিশ দশকে বামপন্থী প্রবণতা বিশ শতকের ত্রিশ ও চল্লিশের দশকে জাতীয় রাজনীতিতে বামপন্থী ঝোক প্রবল হয়ে ওঠে।

প্রেক্ষাপট : জাতীয় রাজনীতিতে বামপন্থী প্রবণতা বৃদ্ধির কারণগুলি হল— (১) রুশ বিপ্লবের প্রভাব ও সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারার প্রাধান্য, (২) প্রথম বিশ্বজনিত অর্থনৈতিক মন্দা, (৩) শ্রমিক-কৃষক ও সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশায় কংগ্রেস নেতৃত্বের উদাসীনতা ও জাতীয় আন্দোলনের প্রতি মােহভঙ্গ, (৪) কমিউনিস্ট কার্যকলাপের প্রভাব, (৫) জওহরলাল নেহর ও সুভাষচন্দ্র বসুর বামপন্থী চিন্তাধারা প্রভৃতি। এমনকি কংগ্রেসের অভ্যন্তরেও একটি বামপন্থী গােষ্ঠী গড়ে ওঠে।

বামপন্থী প্রবণতা : ভারতে বামপন্থী প্রবণতার বিভিন্ন দিকগুলি হল—

১. কমিউনিস্ট পাটি : ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় কমিউনিস্টদের উদ্যোগে কানপুরে প্রতিষ্ঠিত হয় ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি। এই পার্টি শ্রমিক ও কৃষকদের আন্দোলন সংগঠিতকরণের মাধ্যমে জাতীয় আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিল। 

২. কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল গঠন : কংগ্রেসের ভিতরে বামপন্থী প্রবণতাকে সুসংবদ্ধ রূপ দিয়ে সাম্রাজ্যবাদ-বিরােধী আন্দোলনকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে আচার্য নরেন্দ্রদেব, জয়প্রকাশ নারায়ণ, রামমনােহর লােহিয়া, অচ্যুত পটবর্ধন, ইউসুফ মেহের আলি প্রমুখের নেতৃত্বে কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল প্রতিষ্ঠিত হয়। 

৩. কমিউনিস্ট পার্টির কার্যকলাপ : ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে কমিউনিস্ট পার্টি অবৈধ ঘােষিত হওয়ায় কমিউনিস্টরা প্রত্যক্ষভাবে রাজনৈতিক কার্যকলাপ চালাতে না পারায় পরবর্তীকালে তারা জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে যৌথভাবে গণ আন্দোলন গড়ে তােলার কর্মপন্থা গ্রহণ করে। 

৪. কৃষকসভা : এই সময় কমিউনিস্ট পার্টি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্ট গঠনের আহ্বান করলে নিখিল ভারত কৃষক সভা ও নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসে কমিউনিস্ট দলের প্রভাব বৃদ্ধি পায়। এর ফলে ভারতে শ্রমিক ও কৃষক তৎপরতা বৃদ্ধি পেতে থাকে।

দ্বিতীয় অংশ :
মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা : ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ২০ মার্চ ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযােগে ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৩২জন কমিউনিস্ট নেতাকে গ্রেপ্তার করে তাদের বিরুদ্ধে যে মামলা রুজু করা হয়, তা শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা নামে খ্যাত।

প্রেক্ষাপট : ভারতে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সূচনা, কমিউনিস্ট পার্টি গঠন এবং শ্রমিকশ্রেণির রাজনৈতিক সচেতনতার ফলে ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে শ্রমিক আন্দোলন জঙ্গি চরিত্র ধারণ করে। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে এস এ ডাঙ্গে, মিরাজকর প্রমুখ শ্রমিক নেতার নেতৃত্বে বােম্বাই গিরনি কামগার ইউনিয়নের দেড় লক্ষ শ্রমিক ছমাস ব্যাপী বােম্বাই-এর বস্ত্ৰকলে ধর্মঘট চালায়। এই আন্দোলনের বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে ‘Public Safety Act’ এবং ‘Trade disputes Act’ (এপ্রিল ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দ) প্রণয়ন করা হয়, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল শ্রমিক আন্দোলনের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে AITUC-র ঝরিয়া অধিবেশনে এই আইনের তীব্র নিন্দা করা হয়।

নেতৃত্বের গ্রেপ্তার : ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ২০ মার্চ ‘Public Safety Act’ এবং Trade Disputes Act’ -এর দ্বারা মুজাফফর আহমেদ, এস. বি. ঘাটে, এস. এ. ডাঙ্গে, পি. সি. যােশী, মিরাজকর, ধরণী গােস্বামী, গঙ্গাধর অধিকারী-সহ ৩০ জন শ্রমিক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এঁদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছিলেন। 

পরিণতি : দীর্ঘ সাড়ে চার বছর মামলা চলার পর মােট ২৭জন বন্দির বিভিন্ন মেয়াদে অত্যধিক কঠোর দণ্ডাদেশ হয় । ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দের ৩ আগস্ট এই মামলা সমাপ্ত হয়। ব্রিটিশ শ্রমিক দল এই মামলার রায়কে ‘Judicial Scandal’ বলে নিন্দা করে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment