বিশ শতকের ভারতে উপনিবেশ বিরােধী আন্দোলনে বামপন্থীদের ভূমিকা আলােচনা করাে।অথবা, বিশ শতকের ভারতে উপনিবেশ বিরােধী আন্দোলনে বামপন্থী দলগুলির ভূমিকা আলােচনা করাে।

বিশ শতকের ভারতে উপনিবেশ বিরােধী আন্দোলনে বামপন্থীদের ভূমিকা আলােচনা করাে।
অথবা, বিশ শতকের ভারতে উপনিবেশ বিরােধী আন্দোলনে বামপন্থী দলগুলির ভূমিকা আলােচনা করাে।
 
Marks/Class 10

উত্তর:-

ভূমিকা : ভারতে কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শ্রমিক-কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে ওতপ্রােতভাবে জড়িয়ে ছিল এই পার্টি। তাই জাতীয় আন্দোলনে শ্রমিক ও কৃষক শ্রেণিকে শামিল করার মহান কৃতিত্বের দাবিদার ভারতে কমিউনিস্ট পার্টি। 

লেনিনের ঔপনিবেশিক চিন্তাধারা : ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে তাসখন্দে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট সম্মেলনে লেনিন পরামর্শ দেন যে, ঔপনিবেশিক দেশগুলিতে স্বাধীনতালাভের জন্য যে জাতীয় আন্দোলন চলছে কমিউনিস্টদের উচিত এই আন্দোলনে শামিল হওয়া। 

এম এন রায় দলের দুটি ভাবমূর্তি গঠনের কৌশলের কথা বলেন- (১) জাতীয় আন্দোলনের মূল স্রোতে যােগদান দ্বারা আইনগত ও বৈধভাবে আন্দোলন করা এবং (২) গােপনে শ্রমিক কৃষক সংগঠন দ্বারা দলের নিজস্ব ভিত্তি শক্ত করা। 

বামপন্থীদের ভূমিকা : উপনিবেশ-বিরােধী আন্দোলনে বামপন্থীদের অংশগ্রহণের বিভিন্ন দিকগুলি হল—

১. সাইমন-কমিশন বিরােধী আন্দোলন : ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে সাইমন কমিশন ভারতে এলে কংগ্রেসের তরফে যে ব্যাপক বিক্ষোভ কর্মসূচি নেওয়া হয়, তাতে বামপন্থীরা অংশ নেয়। এর পাশাপাশি কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে শিল্প-শ্রমিকদের ধর্মঘট ইংরেজ সরকারকে বিপাকে ফেলেছিল।

২. পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি : কমিউনিস্ট দলের সদস্যরা জাতীয় কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনে উপস্থিত থেকে ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ক্রমাগত পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি জানিয়ে এসেছিল, যা ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের লাহাের অধিবেশনে পূর্ণতা পায়।

৩. চরিত্রগত বদল : লেনিনের মৃত্যু এবং এম এন রায়ের পরিবর্তে ভারত বিষয়ক বেন ব্রাডলির দায়িত্ব গ্রহণের ফলে কমিউনিস্টরা কংগ্রেসের জনপ্রিয় নেতাদের প্রতিক্রিয়াশীল আখ্যা দিয়ে সােভিয়েত ধাঁচে বিপ্লব সংঘটিত করার দিবাস্বপ্ন দেখা শুরু করলে তারা জাতীয় আন্দোলনে যােগদানে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায়। 

৪. ফ্যাসিবাদ-সাম্রাজ্যবাদ-বিরােধী যুক্তফ্রন্ট গঠন : ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে কমিউনিস্ট দল বেআইনি ঘােষিত হয়। এই পরিস্থিতিতে ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল কমিউনিস্টদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে রাজি হয়। কমিন্টার্নের তরফ থেকে কমিউনিস্টদের ফ্যাসিবাদ-সাম্রাজ্যবাদ বিরােধী যুক্তফ্রন্ট গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়। 

৫. নৌ-বিদ্রোহে অংশগ্রহণ : ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে নৌ বিদ্রোহে একমাত্র কমিউনিস্টরাই সমর্থন জানিয়েছিল। কমিউনিস্ট নেতা ড. গঙ্গাধর অধিকারী এক বিবৃতি মারফত কংগ্রেস নেতৃবৃন্দকে এই বিদ্রোহে হস্তক্ষেপের ব্যাপারে আহ্বান জানান। 

৬. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি : বিশ্বযুদ্ধের সূচনায় কমিউনিস্টরা সাম্রাজ্যবাদের এবং যুদ্ধের বিরােধিতা করলেও যুদ্ধে রাশিয়ার যােগদানের ফলে সাম্রাজ্যবাদ-বিরােধা যুদ্ধকে কমিউনিস্টরা রাতারাতি জনযুদ্ধ আখ্যা দেয়। ভারতীয় কমিউনিস্ট দল সােভিয়েত রাশিয়ার মিত্র ব্রিটেনকে সমর্থন জানিয়ে যুদ্ধরত ব্রিটিশ সরকারকে সহযােগিতার নীতি গ্রহণ করে। 

৭.বিশ্বযুদ্ধোত্তর গণ আন্দোলনে নেতৃত্ব : বিশ্বযুদ্ধোত্তর বাংলার তেভাগা আন্দোলন বা তেলেঙ্গানা আন্দোলনগুলি কমিউনিস্ট পার্টির দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল।

মূল্যায়ন : কিছু ত্রুটিবিচ্যুতি থাকলেও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে এবং উপনিবেশ-বিরােধী আন্দোলনে বামপন্থী দলগুলির ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

1 thought on “বিশ শতকের ভারতে উপনিবেশ বিরােধী আন্দোলনে বামপন্থীদের ভূমিকা আলােচনা করাে।অথবা, বিশ শতকের ভারতে উপনিবেশ বিরােধী আন্দোলনে বামপন্থী দলগুলির ভূমিকা আলােচনা করাে।”

Leave a Comment