১৯২৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির কার্যকলাপ বর্ণনা করাে।

১৯২৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির কার্যকলাপ বর্ণনা করাে।  Marks/Class 10

উত্তর:-

ভূমিকা : রুশ বিপ্লবের সাফল্য ও সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে প্রভাবিত করে, যার ফলশ্রুতি হিসেবে ভারতেও বামপন্থী চিন্তাধারার আনাগােনা শুরু হয়। 

কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা : রাশিয়ার তাসখন্দে অনুষ্ঠিত কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনালের দ্বিতীয় অধিবেশনে পরাধীন দেশগুলির স্বাধীনতার প্রশ্নে গুরুত্ব দেওয়া হলে ভারতবাসীও সাম্যবাদী আন্দোলনের শরিক হওয়ার জন্য আগ্রহী হয়ে ওঠে। নরেন্দ্রনাথ রায় এবং অপরাপর কতিপয় প্রবাসী ভারতীয় বিপ্লবী এ অক্টোবর ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে এখানে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা করে। 

ভারতে কমিউনিস্ট গােষ্ঠীর বিস্তার : এদিকে ভারতে বাংলায় মুজাফফর আহমেদ, বােম্বাই-এ এস এ ডাঙ্গে, মাদ্রাজে সিরাভেলু চেট্টিয়ার, লাহােরে গােলাম হােসেন-সহ বহু নিবেদিত শ্রমিক কর্মী ও বিপ্লবী নিজ নিজ ইচ্ছায় কমিউনিস্ট গােষ্ঠী গড়ে তােলার চেষ্টা করেন। গান্ধিনীতিতে আস্থা হারিয়ে মার্কসবাদে আচ্ছা জ্ঞাপনকারী এইসব নেতাদের সঙ্গে যােগাযােগের জন্য এম. এন. রায়, নলিনী গুপ্ত ও শওকত উসমানীকে ভারতে পাঠান। 

কানপুর ষড়যন্ত্র মামলা : ভারতে কমিউনিস্ট আদর্শকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দেওয়ার জন্য শওকত উসমানী, নলিনী গুপ্ত, মুজাফফর আহমেদ, এস এ ডাঙ্গে প্রমুখের বিরুদ্ধে কানপুর ষড়যন্ত্র মামলা রুজু করা হলে সদ্য প্রতিষ্ঠিত কমিউনিস্ট আন্দোলন জোর ধাক্কা খায়।

ভারতে কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা : ভারতের কমিউনিস্ট গােষ্ঠীগুলিকে ঐক্যবদ্ধ রূপ দেওয়ার জন্য ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ডিসেম্বরে ভারতের সমস্ত কমিউনিস্ট গােষ্ঠী কানপুরে এক সর্বভারতীয় কমিউনিস্ট সম্মেলনে মিলিত হয়। এখানে সিঙ্গারাভেলু চেটিয়ার-এর সভাপতিত্বে প্রতিষ্ঠিত হল ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (১৯২৫ খ্রি.)।

সিঙ্গারাভেলু চেটিয়ার 

কার্যকলাপ : ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির কার্যকলাপের বিভিন্ন দিককে এভাবে চিহ্নিত করা যায় —

১. ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি গঠন : কংগ্রেসের সমাজতন্ত্রী ব্যক্তি এবং কমিউনিস্টদের প্রচেষ্টায় ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে বাংলা, বােম্বাই ও পাঞ্জাব ও যুক্তপ্রদেশে গঠিত হয় ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি’। বাংলার লাঙল’, বােম্বাই-এ ক্রান্তি’, লাহােরে কীর্তি কিষাণ’ ও ‘ইনক্লাব’, মাদ্রাজে ‘ওয়ার্কার’ প্রভৃতি বেশ কিছু পত্রপত্রিকা কমিউনিস্ট আদর্শ প্রচারে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করে। শ্রমিক আন্দোলনে এই সংগঠন সাফল্য পেলেও কৃষক আন্দোলনে তেমন কোনাে দিশা দেখাতে পারেনি। 

২. মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা : শ্রমিক আন্দোলনে কমিউনিস্ট প্রভাব বৃদ্ধি পেতে থাকলে কমিউনিস্ট তৎপরতা দমনের উদ্দেশ্যে ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কমিউনিস্ট নেতাদের গ্রেপ্তার করে ৩২জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা রুজু করা হয়—যা ‘মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা’ বলে খ্যাত। সাড়ে চার বছর ব্যাপী এই মামলা চলার পর ২৭ জনের দীর্ঘমেয়াদি দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। 

৩. কমিউনিস্টদের অগ্রগতি : কমিউনিস্টদের অন্তর্দ্বন্দ্ব, মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা, কমিউনিস্ট পার্টিকে বেআইনি বলে ঘােষণা এই আন্দোলনকে খানিকটা পিছিয়ে দেয়। তবে জওহরলাল নেহরু ও সুভাষচন্দ্র বসুর মতাে নেতার সমাজতন্ত্রবাদের প্রতি সমর্থন ও কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের প্রতিষ্ঠার ফলে ভারতে কমিউনিস্ট আন্দোলনের গতি অব্যাহত থাকে। 

৪. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কমিউনিস্ট প্রসার : বিশ শতকে ত্রিশের দশকে শ্রমিক ও কৃষক আন্দোলনগুলি বামপন্থী ঘেঁষা হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে কমিউনিস্ট দলের ওপর বেআইনি তকমা তুলে নেওয়া হয় এবং কমিউনিস্ট জাতীয় আন্দোলনে চরিত্র বদল করে সাম্রাজ্যবাদ-বিরােধী যুদ্ধকে জনযুদ্ধ আখ্যা দিয়ে। ব্রিটিশদের প্রতি সহযােগিতার নীতি নেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সরকার কমিউনিস্ট দলের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। এই অবস্থার সুযােগ নিয়ে কমিউনিস্টরা দ্রুত শক্তি বৃদ্ধি করতে সচেষ্ট হয়।

মূল্যায়ন : ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি আত্মপ্রকাশ করলেও ভারতীয় পরিস্থিতির সঙ্গে রাশিয়ার ফারাক থাকায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত এই দল কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি। তবুও নানা সীমাবদ্ধতা ও প্রতিকূলতার মধ্যে এই দল ভারতের আপামর জনমানসে ছাপ ফেলতে পেরেছিল।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment