জাতীয় আন্দোলনে নারীদের যােগদান আলােচোনা করাে। এই আন্দোলনে নারীদের অবদান কি স্বতঃস্ফূর্ত ছিল? অথবা, গান্ধিজির ডাকে বিভিন্ন আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণের ইতিহাস নথিবদ্ধ করাে Class 10 | 8 Marks
উত্তর:
প্রথম অংশ : প্রথমদিকে পাশ্চাত্য শিক্ষিত নারীরা মূলত নারীমুক্তি আন্দোলনের শরিক হয়েছিল এবং বিভিন্নধর্মী রচনা প্রকাশ ও নারী সংগঠন স্থাপনের মাধ্যমে নারী শক্তিকে সংহত করতে সচেষ্ট হয়েছিল। এভাবে সংহত ও জাগরিত নারীশক্তি বিশ শতকে ভারতের জাতীয় আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে।
জাতীয় আন্দোলনে নারী : বিশ শতকের জাতীয় আন্দোলনগুলিতে নারীদের যােগদান পর্যালােচনা করলে দেখা যায়—
১) বঙ্গভঙ্গ-বিরােধী আন্দোলন : বঙ্গভঙ্গ-বিরােধী আন্দোলনকালে নারীসমাজের অংশগ্রহণের ধরনগুলি হল – (১) ঘরের অভ্যন্তরে থেকেই নারীরা এই আন্দোলনে যােগ দেয়; (২) বিদেশি বস্ত্র বর্জন ও পােড়ানাে, দেশি কাপড়ের প্রচলন, অরন্ধন দিবস পালন প্রভৃতি কর্মসূচিতে নারীরা যােগ দেয়; (৩) বিপ্লবীদের আশ্রয়দান, গােপনে সংবাদ ও অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমেও নারার। আন্দোলনে অংশ নেয়।
অসহযােগ আন্দোলন : গান্ধিজি পরিচালিত জাতীয় আন্দোলনগুলিতে নারীসমাজের অংশগ্রহণ অনেক বৃদ্ধি পায়। ১৯২০-১৯২১ খ্রিস্টাব্দে অসহযােগ আন্দোলনের সময় (১) গান্ধিজি প্রাথমিকভাবে মহিলাদের সীমিত কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করার নির্দেশ দেন। এই কর্মসচির মধ্যে ছিল বিদেশি দ্রব্য বয়কট ও স্বদেশি দ্রব্য গ্রহণ। (২) ভারতীয় নারীরা এই সময় আরও সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে উদ্যোগী হয়ে ওঠেন । দেশের বহু প্রান্তে তারা পিকেটিং-এ অংশগ্রহণ করেন। ৩) ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে হাজার হাজার মহিলা প্রিন্স অব ওয়েলস্-এর ভারত ভ্রমণের বিরুদ্ধে বােম্বাই ও কলকাতা শহরে। বক্ষোভ প্রদর্শন করেন। (৪) এই সময় মহিলা নেত্রীরা গ্রামে গ্রামে। গিয়ে অসহযােগ আন্দোলনকে সফল করার জন্য প্রচার চালান।
৩। আইন অমান্য আন্দোলন : ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের আইন অমান্য আন্দোলনে মহিলারা অনেক বেশি মাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। আন্দোলন শুরু হওয়ার পর গান্ধিজি একটি বিশেষ আহ্বানের মাধ্যমে ভারতীয় নারীসমাজকে আন্দোলনে যােগদান করার জন্য উৎসাহিত করেন (ইয়ং ইন্ডিয়া, ১০ এপ্রিল ১৯৩০ খ্রি.)। ফলে— (১) দেশের বিভিন্ন প্রান্তের হাজার হাজার নারী আন্দোলনের ডাকে । সাড়া দেন লবণ আইন ভাঙা থেকে শুরু করে বিলিতি কাপড় ও মদের দোকানের সামনে পিকেটিং—এই সমস্ত কর্মসূচিতে। তারা সক্রিয়ভাবে যােগদান করেন। (২) বােম্বাই, এলাহাবাদ, লাহাের, দিল্লি প্রভৃতি শহরে মহিলারা প্রকাশ্যে বিক্ষোভ জানান। বিভিন্ন বিক্ষোভ সমাবেশে সম্ভ্রান্ত পরিবারের নারীরা বিপুল সংখ্যায় যােগদান করেন। তাদের এই স্বতঃস্ফুর্ত যােগদানে শুধুমাত্র ইংরেজ সরকারই নয়, রক্ষণশীল পুরুষ সমাজও স্তম্ভিত হয়ে যায়। (৩) এমনকি এই আন্দোলনে কৃষক পরিবারের নারীদের সক্রিয় যােগদানও উল্লেখ করার মতাে।
৪। ভারত ছাড়াে আন্দোলন : ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ভারতছাড়াে আন্দোলনকে কেন্দ্র করে জাতীয় সংগ্রামে নারীর ভূমিকা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে— (১) এই সময় স্কুল-কলেজের ছাত্রীরাও আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে; (২) নারীদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রে অরুণা আসফ আলি ও সুচেতা কৃপালিনীর ভূমিকা বিশেষ উল্লেখযােগ্য; (3) অরুণা আসফ আলি গােপনে জাতীয় আন্দোলন গড়ে তুলতে সচেষ্ট হন; (৪) উষা মেহতা গােপনে কংগ্রেসের বেতার কেন্দ্র পরিচালনা করেন; (৫) আবার এই আন্দোলনে আসিম বীরত্ব ও সাহসিকতা প্রদর্শনের জন্য মেদিনীপুরের মাতঙ্গিনী হাজরা ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে আছেন।
বিপ্লবী আন্দোলন : সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে যােগদান করেছিল। এদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছিল প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কল্পনা দত্ত, শান্তি ঘােষ, সুনীতি চৌধুরী, বীণা দাস প্রমুখ।
দ্বিতীয় অংশ, ভারতের জাতীয় সংগ্রামে নারীদের অংশগ্রহণ পর্যালােচনা করে দেখা যায় যে—
প্রথমত, প্রাথমিকভাবে নারীদের ভূমিকা ছিল পুরুষদের সহযােগীতা করা, কারণ তারা আন্দোলনের স্বতন্ত্র কোনাে ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে পারেনি।
দ্বিতীয়ত, আন্দোলনের কর্মসূচি নির্ধারণের ক্ষেত্রেও নারীদের বিশেষ কোনাে ভূমিকা ছিল না।
তৃতীয়ত, জাতীয় কংগ্রেস আন্দোলনে নারীসমাজের যােগদানকে অনুমােদন করলেও আন্দোলন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে নারীদের মতামত তেমন করে গ্রহণ করা হয়নি।
চতুর্থত, সরলাদেবী চৌধুরানি হতাশ হয়ে লিখেছিলেন, কংগ্রেস নারীদের কেবল “আইন লঙ্ঘনকারী হিসেবেই চেয়েছিলেন, আইন প্রণেতা হিসেবে নয়।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।