ভারত ছাড়াে আন্দোলনে নারী উদ্যোগ বর্ণনা করাে। এই প্রসঙ্গে মাতঙ্গিনী হাজরার ভূমিকা আলােচনা করাে

প্রশ্ন – ভারত ছাড়াে আন্দোলনে নারী উদ্যোগ বর্ণনা করাে। এই প্রসঙ্গে মাতঙ্গিনী হাজরার ভূমিকা আলােচনা করাে। ৫+৩ = ৮ | Class 10

উত্তর:
প্রথম অংশ : ভারত ছাড়াে আন্দোলনে নারী : জাতীয় আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে, অর্থাৎ ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট আন্দোলনে হাজার হাজার নারী পুরুষদের সঙ্গে প্রায় সমান তালে, পায়ে পা মিলিয়ে তারা পুলিশের বুলেটের সামনে রুখে দাঁড়িয়েছেন; আবার কারাযন্ত্রণাও ভােগ করেছেন। অনেক নারী আবার বাড়ির সযত্ন আশ্রয়ে রেখে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নিরাপত্তা দিয়েছেন।

নারীর যােগদান : ভারত ছাড়াে আন্দোলনে নারীদের যােগদান আইন অমান্য আন্দোলনের মতাে পরিকল্পিত ও কর্মসূচিভিত্তিক না হলেও নারীরা যেভাবে যােগদান করে তা হল

১) মধ্যবিত্ত নারীর যােগদান : এই আন্দোলনে স্কুল-কলেজের ছাত্রী-সহ শিক্ষিত মধ্যবিত্ত নারীরা প্রকাশ্য ও গােপন দু’ধরনের আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিল, যেমন—উষা মেহতা বােম্বাইয়ে গােপন। রেডিয়াে কেন্দ্র গড়ে তুলে গান্ধির করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে’ আদর্শ সহ জাতীয় আদর্শ প্রচার করতেন। 

২) নারীদের সংগঠন : নারীদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রে অরুণা আসফ আলি ও সুচেতা কৃপালিনীর ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। অরুণা আসফ আলি গােপনে জাতীয় আন্দোলন গড়ে তুলতে সচেষ্ট হন এবং ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ৯ আগস্ট বােম্বাই-এর আগস্ট ক্রান্তি ময়দানে তেরঙ্গা পতাকা উত্তোলন করেন।

৩) ভগিনী সেনা : ভারত ছাড়াে আন্দোলনের সময় বাংলার মেদিনীপুরে তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি গ্রামীণ মহিলারা ব্রিটিশ বিরােধী প্রতিরােধ সংগ্রাম চালানাের জন্য নারী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে। এইরূপ সংগঠন ‘ভগিনী সেনা’ নামে। পরিচিত। ভগিনী সেনার অনেক নারী জেলবন্দি হন ও ৮৪ জনেরও বেশি নারী ধর্ষিতা হন। 

৪) দলিত নারীদের অংশগ্রহণ : দলিত নারীরাও ভারত ছাড়াে আন্দোলনে যােগ দেন, দলিত শান্তাবাঈ ভালেরাও এবং তারাবাঈ কাম্বলে এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মহারাষ্ট্রের তারাবাঈ ভারত ছাড়াে আন্দোলনের সময়ে কয়েকজন পলাতক পুরুষ সংগ্রামীকে গােপনে নিজের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলেন বহুদিন। শান্তাবাঈ ভালেরাও গােপন খবর ও চিঠিপত্র সর্বদাই স্থান থেকে স্থানান্তরে পৌছে দিয়ে সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। জীবনের শেষ পর্বে ডাকঘর। ও পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অপরাধে তিনি কারাদণ্ড ভােগ করেছেন বােম্বাইয়ের আর্থার জেলে।

৫) রাজনৈতিক দল ও নারী : ভারত ছাড়াে আন্দোলনে বাংলা, বােম্বাই, আসাম, পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট, কর্ণাটকে অংশগ্রহণকারী নারীদের অধিকাংশই কংগ্রেস দলের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত ছিল। তুলনামূলকভাবে কংগ্রেস সােশ্যালিস্ট পার্টি এই সময় আন্দোলনের নেতৃত্বে এগিয়ে এসেছিল। তবে এই আন্দোলনে বামপন্থী মনােভাবাপন্ন ও কমিউনিস্ট দলের নারী সদস্যদের যােগদান ছিল সীমিত।

দ্বিতীয় অংশ, মাতঙ্গিনী হাজরার ভূমিকা : ভারত ছাড়াে আন্দোলনকালে বাংলায় আত্মােৎসর্গের সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত রেখেছেন। মেদিনীপুরের মাতঙ্গিনী হাজরা। 

প্রথমত, নিঃসন্তান ও বালবিধবা এই কৃষকরমণী বহুকাল কংগ্রেসি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং বিবিধ প্রকার কর্মসূচিতে নিজেকে শামিল করেছিলেন।

দ্বিতীয়ত, বহু সমাজ সেবামূলক কাজেও এই বীরাঙ্গনার। উল্লেখযােগ্য অবদান ছিল।

তৃতীয়ত, ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ২৯ অক্টোবর মাতঙ্গিনী ৭২ বয়সে একটি স্বেচ্ছাসেবী দলের নেতৃত্ব দিয়ে তমলুকের হ অধিকার করতে যান। পুলিশের নিবিচার গুলির সামনে দাঁড়িয়ে তিনি প্রাণবিসর্জন দেন কিন্তু শেষনিঃশ্বাস থাকা পর্যন্ত ভারতের জাতীয় পতাকা তার হস্তচ্যুত হয়নি।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment