আবর্তন ও বিবর্তনের যুগ্ম প্রয়ােগ বলতে কী বােঝ?  

আবর্তন ও বিবর্তনের যুগ্ম প্রয়ােগ বলতে কী বােঝ? আবর্তিতের বিবর্তন ও বিবর্তিতের আবর্তন উদাহরণ-সহ আলােচনা করাে।     Class 12 | Philosophy (দর্শন) | 8 Marks

উত্তর:-

আবর্তন ও বিবর্তনের যুগ্ম প্রয়ােগ : আবর্তন ও বিবর্তন হল অমাধ্যম অনুমানের দুটি মূল প্রক্রিয়া | একটি বচনের যেমন আবর্তন করা যায়, তেমনই তার বিবর্তনও করা যায়। আবার একটি বচনের ক্ষেত্রে যুগ্মভাবেও আবর্তন ও বিবর্তনকে প্রয়ােগ করা যায়। অর্থাৎ, একটি বচনকে প্রথমে আবর্তন করে, সেই আবর্তিতের আবার বিবর্তন করা যায়। অথবা একটি বচনকে প্রথম বিবর্তন করে, সেই বিবর্তিতের আবার আবর্তন করা যায়। আমরা যদি ক্রমান্বয়ে পরপর আবর্তন-বিবর্তন, বা বিবর্তন-আবর্তন করি, তাহলে নতুন নতুন আকারের অনেক যুক্তিগত সিদ্ধান্ত পাওয়া যেতে পারে। 

এক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার যে আবর্তন ও বিবর্তন নামক দুটি মৌলিক, প্রক্রিয়ার মধ্যে বিবর্তনকে যদি পরপর দু-বার প্রয়ােগ করা যায়, তাহলে আমরা আবার সেই মূল বচনটিতেই ফিরে আসি। অর্থাৎ এক্ষেত্রে আমাদের জ্ঞানের আকারগত অগ্রগতি স্তদ্ধ হয়ে যায়।

বাচনিক উদাহরণ

 

তর্কবাক্য:

সকল রাজনীতিবিদহন চোর (A)। (মূল

বচন)।

মূল বচনের বিবর্তন : 

∴কোনাে রাজনীতিবিদ নয় অ-চোর (E)।

(বিবর্তিত)

বিবর্তিতের বিবর্তন: : 

∴ সকল রাজনীতিবিদ হন চোর (A)। (সিদ্ধান্ত বচন)

ব্যাখ্যা 

এখানে মূল বচন এবং বিবর্তিতের বিবর্তনমূলক বচন দুটি একই বচন। ফলে, এক্ষেত্রে আমরা বিবর্তন প্রক্রিয়াকে পরপর দুবার প্রয়ােগ করে মূল বচনেই ফিরে এলাম।

সাংকেতিক উদাহরণ 

একটি সাংকেতিক উদাহরণের মাধ্যমেও বিষয়টিকে অনুরূপভাবে উপস্থাপিত করা যেতে পারে। 

 

তর্কবাক্য:   সকল S হয় P (A)। (মূল বচন) 

 

মূল বচনের বিবর্তন: ∴ কোনাে S নয় অ-P (E)।(বিবর্তিত) 

 

বিবর্তিতের বিবর্তন :  ∴ সকল S হয় P (A)। (সিদ্ধান্ত বচন)

ব্যাখ্যা

এক্ষেত্রেও যদি আমরা একটি বচনকে পরপর দুবার বিবর্তন করি, তাহলে মূল বচনেই ফিরে যাই। এইভাবে আমাদের জ্ঞানের ক্রিয়ার কোনাে অগ্রগতিই ঘটে না | এইভাবে দেখা যায়, A, E, I এবং O —এই চারটি নিরপেক্ষ বচনের ক্ষেত্রেই আমরা যদি বিবর্তন প্রক্রিয়াটিকে পরপর দুবার প্রয়ােগ ঘটাই, তাহলে আমরা মূল বচনেই ফিরে আসি। এই প্রক্রিয়াটি তাই এক ধরনের চক্রাকার পদ্ধতিরূপে গণ্য হয়। এই পদ্ধতিতে আমাদের জ্ঞানের পরিধি প্রসারিত না হয়ে সংকীর্ণ হয়ে পড়ে।

তবে আবর্তনের নিয়মকে যদি পরপর দুবার প্রয়ােগ করা যায়, তাহলে সবক্ষেত্রেই মূল বচনে ফিরে আসা যায় না। যেমন — A বচনের ক্ষেত্রে যদি পরপর দুবার আবর্তনকে প্রয়ােগ করা হয়, তাহলে মূল বচনে ফিরে যাওয়া যায় না।

উদাহরণ

 

তর্কবাক্য: 

সকল ছাত্র হয় সুবােধ (A) l (মূল বচন) 

মূল বচনের বিবর্তন:

∴ কোনাে কোনাে সুবােধ বালক হয় ছাত্র (I)। (বিবর্তিত) 

বিবর্তিতের বিবর্তন:

∴ কোনাে কোনাে ছাত্র হয় সুবােধ বালক (I)। (সিদ্ধান্ত বচন)

 

অথবা, 

তর্কবাক্য: 

সকল S হয় P (A)। (মূল বচন)

মূল বচনের বিবর্তন:

∴ কোনাে কোনাে Pহয় S (I)।(বিবর্তিত) 

বিবর্তিতের বিবর্তন:

∴ কোনাে কোনাে S হয় P (I)। (সিদ্ধান্ত

বচন)

ব্যাখ্যা

এই দুটি উদাহরণের ক্ষেত্রে দেখা যায়, মূল বচন এবং শেষ সিদ্ধান্তগত বচন দুটি এক নয়। সুতরাং আবর্তনের পরপর দুবার প্রয়ােগের মাধ্যমে A বচনের ক্ষেত্রে আর মূল বচনে ফিরে আসা সম্ভব নয়।

উদাহরণসহ আবর্তিতের বিবর্তন : তর্কবাক্যকে প্রথমে আবর্তন এবং পরে আবর্তিতের বিবর্তন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নতুনভাবে উপস্থাপিত করা যায়৷ নীচে এই প্রক্রিয়াটিকে একটি উদাহরণের মাধ্যমে উপস্থাপিত করা হল।

উদাহরণ 


তর্কবাক্য:

 

সকল S হয় P (A)। (মূল বচন)

মূল বচনের আবর্তন: 

 

∴ কোনাে কোনাে P হয় S (I)। (আবর্তিত)

আবর্তিতের বিবর্তন:

∴ কোনাে কোনাে P নয় অS (O)। (সিদ্ধান্ত বচন)

 

0 বচনের আবর্তন আর সম্ভব নয় বলে মল তর্কবাক্য (A) থেকে প্রাপ্ত (9) হল চরম সিদ্ধান্ত। 


উদাহরণ সহ বিবর্তিতের আবর্তন :
প্রক্রিয়া: তর্কবাক্যকে প্রথমে বিবর্তন করে ওই বিবর্তিতের আবার আবর্তন করে নতুন নতুন ভাবেতার্কিক আকার পাওয়া যায়। চারটি নিরপেক্ষবচনের ক্ষেত্রেই এই প্রক্রিয়াটি প্রয়ােগ করা যায়। এই প্রক্রিয়াটিকে এখন A, E, I এবং 0 এই চারটি নিরপেক্ষ বচনের ক্ষেত্রে ক্রমান্বয়ে প্রয়ােগ করে দেখানাে হল।

উদাহরণ 

তর্কবাক্য:                               সকল S হয় P (A)। (মূল বচন)

 

মূল বচনের বিবর্তন :               কোনাে S নয় অ-P (E)। (বিবর্তিত)

 

বিবর্তিতের আবর্তন :                কোনাে অ-P নয় S (E)। (আবর্তিত)।

 

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

1 thought on “আবর্তন ও বিবর্তনের যুগ্ম প্রয়ােগ বলতে কী বােঝ?  ”

Leave a Comment