আদাব গল্পের প্রশ্ন উত্তর | সমরেশ বসু | Adab Class 8 Bengali Question Answer | Wbbse

প্রিয় শিক্ষার্থীরা, এখানে আমরা অষ্টম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যবইয়ের থেকে সমরেশ বসুর লেখা আদাব গল্পের প্রশ্ন উত্তর তুলে ধরেছি। গল্পের শেষে দেওয়া অনুশীলনীর সমাধান আমরা এখানে উপস্থাপন করছি। ভালো লাগলে বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।

আদাব

সমরেশ বসু


সমরেশ বসু (১৯২৪ – ১৯৮৮) : আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম ছোটোগল্পকার ও ঔপন্যাসিক। জীবনযাপনের বিভিন্ন পর্বে তিনি বিচিত্র পেশা অবলম্বন করে নানান অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছিলেন। ফেরিওয়ালা থেকে চটকলের শ্রমিক, বস্তির এঁদো ঘর থেকে সুরম্য দালান – সর্বত্রই ছিল তাঁর অনায়াস বিচরণ। তাঁর উপন্যাসগুলির মধ্যে বি টি রোডের ধারে, গঙ্গা, শেকল ছেঁড়া হাতের খোঁজে, জগদ্দল, মহাকালের রথের ঘোড়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। কালকূট ছদ্মনামে তিনি অনেক ভ্রমণ কাহিনিও লিখেছেন।

আদাব গল্পের প্রশ্ন উত্তর

১.১ সমরেশ বসুর ছদ্মনাম কী?
উত্তর :
সমরেশ বসুর দুটি ছদ্মনাম ছিল: কালকূট

১.২ তাঁর লেখা দুটি উপন্যাসের নাম লেখো।
উত্তর : সমরেশ বসুর লেখা দুটি বিখ্যাত উপন্যাসের নাম হলো: বি টি রোডের ধারে ও জগদ্দল l

২. নীচের প্রশ্নগুলির একটি বাক্যে উত্তর দাও :

২.১ কোন সময়পর্বের কথা গল্পে রয়েছে?
উত্তর :
সমরেশ বসুর লেখা ‘আদাব’ গল্পটিতে ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের একদম শেষ দিকে হিন্দু – মুসলিম দাঙ্গার সময়পর্বের কথা রয়েছে।

২.২ ‘ডাস্টবিনের দুই পাশে দুটি প্রাণী’ – প্রাণীদুটির পরিচয় দাও?
উত্তর :
সমরেশ বসু রচিত ‘আদাব’ গল্পে উল্লিখিত ডাস্টবিনের দুই পাশে প্রাণীদুটি হল, একজন নৌকার মাঝি ও আরেকজন সুতাকলের মজুর।

২.৩ ‘ওইটার মধ্যে কী আছে?” – বক্তা কীসের প্রতি ইঙ্গিত করে?
উত্তর :
সমরেশ বসু রচিত ‘আদাব’ গল্প থেকে নেওয়া প্রশ্নোদ্ধৃত উক্তির মাধ্যমে বক্তা সুতাকলের মজুর মাঝির বগলের পুটুলির প্রতি ইঙ্গিত করে।

২.৪ গল্পে কোন নদীর প্রসঙ্গ রয়েছে?
উত্তর :
সমরেশ বসু রচিত ‘আদাব’ গল্পে বুড়িগঙ্গা নদীর প্রসঙ্গ রয়েছে।

২.৫ ‘সুতা-মজুরের ঠোটের কোণে একটু হাসি ফুটে উঠল …’ – তার এই হাসির কারণ কী?
উত্তর :
সমরেশ বসু রচিত ‘আদাব’ গল্পে সুতামজুর কল্পনা করে মাঝি ফিরলেই, মরণের হাত থেকে বেঁচে বাড়ি ফিরেছে বলে বিবি কান্নায় আর সোহাগে মিয়াসাহেবের বুকে ভেঙে পড়বে। একথা ভেবেই সুতা মজুরের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল।

৩. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো:

৩.১ ‘শহরে ১৪৪ ধারা আর কারফিউ অর্ডার জারী হয়েছে।’ – লেখকের অনুসরণে গল্পঘটনার রাতের দৃশ্য বর্ণনা করো।
উত্তর :
সমরেশ বসু রচিত ‘আদাব’ গল্পে ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের শেষ পর্বে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গার সময়কার কথা বর্ণিত হয়েছে।যে রাতের কথা লেখক গল্পে তুলে ধরেছেন তখন শহরে ১৪৪ ধারা আর কারফিউ অর্ডার জারি হয়েছে। হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে দাঙ্গা বেঁধেছে।দা, সড়কি, ছুরি, লাঠি নিয়ে মুখোমুখি লড়াই চলছে।গুপ্তঘাতকের দল অন্ধকারকে আশ্রয় করে চোরাগোপ্তা হানছে। লুঠেরা – রা তাদের অভিযানে বেরিয়েছে।বস্তিতে বস্তিতে জ্বলছে আগুন । মৃত্যুকাতর নারী – শিশুর চিৎকার স্থানে স্থানে আবহাওয়াকে বীভৎস করে তুলেছে।আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করতে সৈন্যবাহিনী দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে গুলি ছুঁড়ছে।

এমন পরিস্থিতির মধ্যে ঘটনাচক্রে এক মুসলমান মাঝি ও সুতাকলের হিন্দু মজুরের সাক্ষাৎ হয়।ধর্মের দিক দিয়ে আলাদা হলেও তারা একে অপরের প্রতি সহমর্মী ও সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠে।

৩.২ ‘হঠাৎ ডাস্টবিনটা একটু নড়ে উঠল।’— ‘ডাস্টবিন নড়ে ওঠা’র অব্যবহিত পরে কী দেখা গেল?
উত্তর :
সমরেশ বসু রচিত ‘আদাব’ গল্পটি ১৯৪৬ সালের হিন্দু মুসলিম দাঙ্গার প্রেক্ষাপটে লেখা হয়েছে। গল্পে দেখা যায় দুটো গলির মাঝখানে খানিকটা ভাঙাচোরা অবস্থায় একটা ডাস্টবিন উল্টে এসে পড়েছে। সেটাকে আড়াল করে গলির ভিতর থেকে বেরিয়ে আসে একটি লোক।মাথা না তুলে সে ভয়ে নির্জীবের মতো পড়ে থাকে।শুনতে থাকে দূরের অপরিস্ফুট কলরব। হঠাৎ ডাস্টবিনটা নড়ে ওঠায় সে ভয় পেয়ে যায়।শিরশিরিয়ে ওঠে তার দেহের সমস্ত শিরা উপশিরা। দাঁতে দাঁত চেপে সে আসন্ন বিপদের প্রতীক্ষা করে।তারপর কুকুর মনে করে তাড়া দেওয়ার জন্য ডাস্টবিনটা একটু ঠেলে দিলে ডাস্টবিনটা আবার নড়ে ওঠে।ভয়ে ও কৌতূহলে লোকটি মাথা তুলে দেখে ওপাশ থেকেও উঠে এসেছে তেমনি একটি মাথা। অর্থাৎ সে মানুষ l

৩.৩ হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতির আবহ গল্পে কীভাবে রচিত হয়েছে তা বিশ্লেষণ করো।
উত্তর :
সমরেশ বসু রচিত ‘আদাব’ গল্পে ১৯৪৬ সালের হিন্দু মুসলিম দাঙ্গার সময়কার কথা বর্ণিত হয়েছে।ঘটনাচক্রে গল্পে দেখা হয় এক নৌকার মাঝি ও এক সুতাকলের মজুরের।ভয়ে তারা কেউই নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় স্বীকার করতে চায় না।বিড়ি ধরানোর জন্য দেশলাই কাঠি জ্বালানোর প্রসঙ্গে জানা যায় মাঝি মুসলমান।ভূত দেখার মতো চমকে ওঠে হিন্দু সুতামজুর। সাময়িক ভয় কাটিয়ে উঠলে তারা বুঝতে পারে তাদের ধর্ম আলাদা হলেও দুজন দুজনের থেকে বিপদের কোনো সম্ভবনা নেই।তাদের একটাই পরিচয় বড়ো হয়ে ওঠে, তারা দুজনেই অসহায়, প্রাণ ভয়ে ভীত।মাঝি ও সুতামজুর উভয়েই দাঙ্গার পরিস্থিতি নিয়ে নিজেদের মতামত জানায় । তাদের মতে দাঙ্গায় তাদের মতো সাধারণ মানুষরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।তারা দাঙ্গা চায়না তারা শান্তি চায়।কিছু সময়ের জন্য নিজেদের এই সাক্ষাতে মুসলমান মাঝি ও হিন্দু সুতামজুর ধর্মীয় বিভেদ ভুলে একে অপরের প্রতি সহমর্মী ও সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠে।তাইতো মাঝির জন্য ভগবানের কাছে প্রার্থনা করতে দেখা যায় সুতামজুরকে।মাঝির মৃত্যুতে ব্যথিত হয় সে। এভাবেই গল্পে মাঝি ও সুতামজুরের মাধ্যমে হিন্দু মুসলমান সম্প্রীতির আবহ রচিত হয়েছে। ফুটে উঠেছে ধর্মীয় বিভেদ ভুলে মনুষ্যত্বের ঐক্যের ছবি।

৩.৪ ‘মুহূর্তগুলিও কাটে যেন মৃত্যুর প্রতীক্ষার মতো।’ —সেই রুদ্ধ উত্তেজনাকর মূহূর্তগুলির ছবি গল্পে কীভাবে ধরা পড়েছে তা দৃষ্টান্তসহ আলোচনা করো।
উত্তর :
 সমরেশ বসু রচিত ‘আদাব’ গল্প থেকে আলোচ্য তাৎপর্যপূর্ণ উদ্ধৃতিটি নেওয়া হয়েছে।গল্পে দেখা যায় শহরে ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে।হিন্দু ও মুসলমানে দাঙ্গা বেঁধেছে।এমনই মৃত্যু বিভীষিকাময় অন্ধকার রাতে ডাস্টবিনের আড়ালে দেখা হয় এক নৌকার মাঝি ও সুতাকলের মজুরের।একে অপরের ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে উৎকণ্ঠিত হয়ে ওঠে তারা, একে অপরকে খুনি ভাবতে থাকে।অন্যদিকে বাইরের দাঙ্গাও তাদের ওপর সমানভাবে প্রভাব ফেলে তারা দুজনেই ভয় পায়।বাধ্য হয়েই অবিশ্বাস সত্ত্বেও দুজনকে কাছাকাছি থাকতে হয়।একটা সময় বাইরে দাঙ্গার শোরগোল মিলিয়ে গেলে চারপাশ “মৃত্যুর মতো নিস্তব্ধ হয়ে আসে”।লেখকের মতে সেই নিস্তব্ধ মুহূর্তগুলোই যেন দুজনের কাছে মৃত্যুর প্রতীক্ষার মতো কাটে।সেই মুহূর্তে ডাস্টবিনের দুই পাশে দুই প্রাণী ভাবছিল নিজেদের বিপদের কথা, ঘরের কথা, মা- বৌ, ছেলেমেয়েদের কথা। প্রাণ নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবে কিনা তা নিয়েও তাদের মনে সংশয় জাগছিল।

৩.৫ ‘এমনভাবে মানুষ নির্মম নিষ্ঠুর হয়ে ওঠে কী করে?’— উদ্ধৃতিটির আলোকে সেই সময়ের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটটি আলোচনা করো।
উত্তর :
সমরেশ বসু রচিত ‘আদাব’ গল্প থেকে আলোচ্য তাৎপর্যপূর্ণ উদ্ধৃতিটি নেওয়া হয়েছে।ডাস্টবিনের আড়ালে বসে থাকা মাঝি ও সুতামজুরের মনে এই প্রশ্নটি জেগেছিল।

গল্পটি ১৯৪৬ সালের হিন্দু মুসলিম দাঙ্গার প্রেক্ষাপটে রচিত। ইংরেজরা দেশ ছাড়ার আগে কৌশলে ভারতবর্ষের হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিভেদ তৈরি করে। যার ফলস্বরূপ শুরু হয় দাঙ্গা। হিংসার আগুনে জ্বলতে থাকে দেশ।খুন, গুপ্তহত্যা মানুষকে আতঙ্কিত করে তোলে।হিন্দু – মুসলিম একে অপরের বিনাশে মেতে ওঠে।দাঙ্গা থামানোর জন্য জারি হয় ১৪৪ ধারা, ছোড়া হয় গুলি। প্রাণভয়ে মানুষ মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। এমনই এক বীভৎস পরিস্থিতিতে মাঝি ও সুতামজুরের চরিত্রের মাধ্যমে লেখক যেন তৎকালীন সময়ের সাধারণ মানুষের মানসিক পরিস্থিতির চিত্র এঁকেছেন।যারা শান্তিতে থাকতে চায় ৷

৪. নিম্নলিখিত বাক্যগুলির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো:

৪.১ ‘রাত্রির নিস্তব্ধতাকে কাঁপিয়ে দিয়ে মিলিটারি টহলদার গাড়িটা একবার ভিক্টোরিয়া পার্কের পাশ দিয়ে একটা পাক খেয়ে গেল।’
উত্তর : উৎস:-
উদ্ধৃত অংশটি সমরেশ বসু রচিত ছোটোগল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।

তাৎপর্য:- গল্পে দেখা যায় ১৯৪৬ -এর ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চিত্র ফুটে উঠেছে । শহরে ১৪৪ ধারা আর কারফিউ অর্ডার জারি হয়েছে। দাঙ্গা বেধেছে হিন্দু আর মুসলমানে। মুখোমুখি দা, সড়কি, ছুরি, লাঠি নিয়ে লড়াই চলছে। এছাড়াও চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়েছে গুপ্তঘাতকের দল। চোরাগোপ্তা হানছে অন্ধকারকে আশ্রয় করে। এই সুযোগে লুঠেরা-রা বেরিয়েছে তাদের অভিযানে। মৃত্যুকাতর নারী-শিশুর চিৎকার স্থানে স্থানে আবহাওয়াকে বীভৎস করে তুলেছে। এই কোলাহল যখন সাময়িকভাবে থামে তখন ভিক্টোরিয়া পার্কের পাশ দিয়ে রাত্রির নিস্তব্ধতাকে কাঁপিয়ে দিয়ে মিলিটারি টহলদার গাড়িটা একটা পাক খেয়ে যায়। আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখতে তারা দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে গুলিও ছোড়ে কখনো। এখানে রাত্রির নিস্তব্ধতাকে কাঁপিয়ে দেওয়ার সাথে মিলিটারির ভয়ে মানুষের হৃদয়ের কম্পনকে যেন বোঝাতে চেয়েছেন লেখক।

৪.২ ‘ডাস্টবিনের দুইপাশে দুটি প্রাণী, নিস্পন্দ নিশ্চল।’
উত্তর : উৎস:-
উদ্ধৃত অংশটি সমরেশ বসু রচিত ‘আদাব’ ছোটোগল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।

তাৎপর্য:- গল্পে দেখা যায় ১৯৪৬ -এর ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চিত্র ফুটে উঠেছে। শহরে ১৪৪ ধারা আর কারফিউ অর্ডার জারি হয়েছে। দাঙ্গা বেধেছে হিন্দু আর মুসলমানে। মিলিটারিরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে কখনো কখনো গুলি ছুড়ছে। এইরকম পরিস্থিতিতে দুটো গলির মাঝখানে উল্টে পড়ে থাকা একটা ভাঙ্গাচোরা ডাস্টবিনকে আড়াল করে দুপাশে দুজন মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। একজন নাওয়ের মাঝি আরেকজন সুতাকলের মজুর। কিছুক্ষণ পর দুজনেই ভয়ে ভয়ে মাথা তুলে একে অপরের অস্তিত্ব উপলব্ধি করে। উভয়েই উভয়ের থেকে যেন আক্রমণের প্রতীক্ষা করতে থাকে। অবিশ্বাসে, ভয়ে, অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কায় দুজনেই যেন নিস্পন্দ নিশ্চল হয়ে যায়।

৪.৩ ‘স্থান-কাল ভুলে রাগে-দুঃখে মাঝি প্রায় চেঁচিয়ে ওঠে।”
উত্তর : উৎস:-
উদ্ধৃত অংশটি সমরেশ বসু রচিত ‘আদাব’ ছোটোগল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।

তাৎপর্য:- গল্পে দেখা যায় ১৯৪৬ -এর ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চিত্র ফুটে উঠেছে। শহরে ১৪৪ ধারা আর কারফিউ অর্ডার জারি হয়েছে। দাঙ্গা বেধেছে হিন্দু আর মুসলমানে। এইরকম পরিস্থিতিতে ডাস্টবিনের দুইপাশে লুকিয়ে থাকা নাওয়ের মাঝি এবং সুতাকলের মজুরের সাক্ষাৎ হয়। যেহেতু তখনো তারা নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় জানেনা তাই তাদের দুজনের মনেই একে অপরের প্রতি অবিশ্বাস এবং ভয় ছিল। এরপর হঠাৎ কাছে দাঙ্গার আওয়াজ পাওয়া গেলে সুতা মজুরের কণ্ঠে আতঙ্ক ফুটে ওঠে। মাঝি সেখান থেকে চলে যেতে চাইলে তবে বিপদের আঁচ বুঝে সুতা মজুর মাঝিকে বাধা দেয়। তবে মাঝি বারে বারে সেখান থেকে চলে যেতে চায়। তখন সুতা মজুরের মনেও সন্দেহ জাগে। সুতা মজুর বলে মাঝি হয়তো তার দলবল ডেকে এনে সুতা মজুরকে মারতে চায় । এমন কথা শুনে স্থান- কাল ভুলে রাগে দুঃখে মাঝি প্ৰায় চেঁচিয়ে ওঠে।

৪.৪ ‘অন্ধকারের মধ্যে দু জোড়া চোখ অবিশ্বাসে উত্তেজনায় আবার বড়ো বড়ো হয়ে উঠল।
উত্তর : উৎস:-
উদ্ধৃত অংশটি সমরেশ বসু রচিত ‘আদাব’ ছোটোগল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।

তাৎপর্য:- গল্পে দেখা যায় ১৯৪৬ -এর ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চিত্র ফুটে উঠেছে। শহরে ১৪৪ ধারা আর কারফিউ অর্ডার জারি হয়েছে। দাঙ্গা বেধেছে হিন্দু আর মুসলমানে। এইরকম পরিস্থিতিতে ডাস্টবিনের দুইপাশে লুকিয়ে থাকা নাওয়ের মাঝি এবং সুতাকলের মজুরের সাক্ষাৎ হয়। যেহেতু তখনো তারা নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় জানেনা তাই তাদের দুজনের মনেই একে অপরের প্রতি অবিশ্বাস এবং ভয় ছিল। এরপর দুজন যখন বুঝতে পারে একে অপরের থেকে আক্রমণের ভয় নেই তখন তারা সহজ হয়ে কথাবার্তা শুরু করে। কিন্তু ঘটনাচক্রে বিড়ি ধরানোর প্রসঙ্গে জানা যায় নাওয়ের মাঝি মুসলমান। তখন ভূত দেখার মত চমকে ওঠে সুতা মজুর। কারণ সে হিন্দু, মাঝি মুসলমান। সুতামজুরের ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে বিড়ি পড়ে যায়। অন্ধকারের মধ্যে দুজনার চোখ অবিশ্বাসে উত্তেজনায় আবার বড়ো বড়ো হয়ে ওঠে। হিন্দু- মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা তখন কতটা ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছিল তা এই দুজনের মানসিক পরিস্থিতি থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়।

৪.৫ ‘সুতো-মজুরের বুকের মধ্যে টনটন করে ওঠে।’
উত্তর : উৎস:-
উদ্ধৃত অংশটি সমরেশ বসু রচিত ‘আদাব’ ছোটোগল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।

তাৎপর্য:- গল্পে দেখা যায় ১৯৪৬ -এর ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চিত্র ফুটে উঠেছে। এরই মাঝে রয়েছে সাম্প্রদায়িকতার উর্ধ্বে সাধারণ খেঁটে মানুষের প্রতিনিধি নাওয়ের মাঝি ও সুতাকলের মজুরের কাহিনি। যারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতীক। এই দুজনের আলাপ প্রাথমিকভাবে অবিশ্বাসের, ভয়ের হলেও লেখক সুচারু লেখনীর দ্বারা বুঝিয়েছেন মুসলমান মাঝি ও হিন্দু সুতাকলের মজুর অভিন্ন। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় দুজনেই ক্ষতিগ্রস্ত। এক রাতের কিছুক্ষণের আলাপে তারা একে অপরের প্রতি টান অনুভব করে। তাইতো গল্পের শেষ দিকে যখন মাঝিকে পুলিশে গুলি করে তখন সুতামজুরের কষ্ট হয়। মাঝি ঈদের দিন বাড়ি ফিরতে চেয়েছিল। তার পোটলায় ছেলেমেয়েদের জন্য জামা এবং বিবির জন্য শাড়ি ছিল । সেগুলো নিয়ে আর তার বাড়ি ফেরা হবে না। এটা ভেবেই সুতা মজুরের বুকের ভেতর কষ্টে টনটন করে ওঠে।

৪.৬ ‘ভুলুম না ভাই এই রাত্রের কথা।’
উত্তর :
উৎস:- উদ্ধৃত অংশটি সমরেশ বসু রচিত ‘আদাব’ ছোটোগল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।

তাৎপর্য:- গল্পে দেখা যায় ১৯৪৬ -এর ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চিত্র ফুটে উঠেছে। এরই মাঝে রয়েছে সাম্প্রদায়িকতার সাধারণ খেঁটে মানুষের প্রতিনিধি নাওয়ের মাঝি ও সুতাকলের মজুরের কাহিনি। যারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতীক। এই দুজনের আলাপ প্রাথমিকভাবে অবিশ্বাসের, ভয়ের হলেও লেখক সুচারু লেখনীর দ্বারা বুঝিয়েছেন মুসলমান মাঝি ও হিন্দু সুতাকলের মজুর অভিন্ন। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় দুজনেই ক্ষতিগ্রস্ত। এক রাতের কিছুক্ষণের আলাপে তারা একে অপরের প্রতি টান অনুভব করে। পথে মৃত্যুর ভয় থাকলেও ছেলেমেয়ে এবং বিবির টানে মাঝি বাড়ি যেতে উদ্যত হয়। যাওয়ার আগে সুতামজুরকে সে বলে এই রাতের কথা সে কখনোই ভুলে যাবে না। কপালে যদি থাকে তাহলে তাদের আবার দেখা হবে।

শব্দার্থ : আন্দাইরা গলি – অন্ধকার গলি। অসবুর — অধৈর্য। সুঁই – সূঁচ। ভগবানের কিরা – ভগবানের দিব্য বা শপথ। রায়ট – দাঙ্গা। পোলামাইয়া – ছেলেমেয়ে। ছাওয়াল – ছেলে। দুশমন — শত্ৰু। তাগো – তাদের l

৫. নীচের বাক্যগুলি থেকে অব্যয় পদ খুঁজে নিয়ে কোনটি কোন শ্রেণির অব্যয় তা নির্দেশ করো:

৫.১ শহরে ১৪৪ ধারা আর কারফিউ অর্ডার জারি হয়েছে।
উত্তর :
আর – সংযোজক অব্যয় l

৫.২ তারা গুলি ছুঁড়ছে দিগবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখতে।
উত্তর :
ও – সংযোজক অব্যয় l

৫.৩ উভয়েই একটা আক্রমণের প্রতীক্ষা করতে থাকে, কিন্তু খানিকক্ষণ অপেক্ষা করেও কোনো পক্ষ থেকেই আক্রমণ এল না।
উত্তর :
কিন্তু – সংকোচ অব্যয়

৫.৪ তোমার মতলবড়া তো ভালো মনে হইতেছে না।
উত্তর :
 তো – আলংকারিক অব্যয় l

৫.৫ মাঝি এমনভাবে কথা বলে যেন সে তার কোনো আত্মীয়বন্ধুর সঙ্গে কথা বলছে।
উত্তর :
যেন – সংশয়সূচক অব্যয় l

৬. নীচের বাক্যগুলি থেকে সন্ধিবদ্ধ পদ খুঁজে নিয়ে তাদের সন্ধিবিচ্ছেদ করো:

৬.১ তা ছাড়া চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়েছে গুপ্তঘাতকের দল।
উত্তর :
 চতুর্দিক – চতুঃ + দিক ।

৬.২ মৃত্যু-বিভীষিকাময় এই অন্ধকার রাত্রি তাদের উল্লাসকে তীব্রতর করে তুলেছে।
উত্তর :
 উল্লাস – উৎ + লাস ।

৬.৩ নির্জীবের মতো পড়ে রইল খানিকক্ষণ।
উত্তর :
নির্জীব – নিঃ + জীব ।

৬.৪ দাঁতে দাঁত চেপে হাত পা-গুলোকে কঠিন করে লোকটা প্রতীক্ষা করে রইল একটা ভীষণ কিছুর জন্য।
উত্তর :
প্রতীক্ষা – প্রতি + ঈক্ষা ।

৬.৫ সমস্ত অঞ্চলটার নৈশ নিস্তব্ধতাকে কাঁপিয়ে দুবার গর্জে উঠল অফিসারের আগ্নেয়াস্ত্র
উত্তর :
নিস্তব্ধ – নিঃ + স্তব্ধ, আগ্নেয়াস্ত্র – আগ্নেয় + অস্ত্র ।

৭. ব্যাসবাক্যসহ সমাসের নাম লেখো :

চোরাগোপ্তা, পথনির্দেশ, নির্জীব, দীর্ঘনিশ্বাস, পোলামাইয়া।

উত্তর :

চোরাগোপ্তা – যা চোরা তাই গোপ্তা। (সাধারণ কর্মধারয় সমাস) l

পথনির্দেশ – পথের নির্দেশ। (সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস) l

নির্জীব – নয় জীব। (না – তৎপুরুষ সমাস) l

দীর্ঘনিশ্বাস – দীর্ঘ যে নিশ্বাস। (কর্মধারয় সমাস) l

পোলামাইয়া – পোলা ও মাইয়া। (দ্বন্দ্ব সমাস) l

৮. নিম্নরেখাঙ্কিত অংশের কারক-বিভক্তি নির্দেশ করো :

৮.১ দুদিক থেকে দুটো গলি এসে মিশেছে এ জায়গায়
উত্তর : জায়গায় –
অধিকরণকারকে ‘য়’ বিভক্তি।

৮.২ সন্দেহের দোলায় তাদের মন দুলছে।
উত্তর : সন্দেহের –
সম্বন্ধপদে ‘এর’ বিভক্তি।

৮.৩ নিষ্ফল ক্রোধে মাঝি দু হাত দিয়ে হাঁটু দুটোকে জড়িয়ে ধরে।
উত্তর : ক্রোধে –
করণকারকে ‘এ’ বিভক্তি।

৮.৪ আমাগো কথা ভাবে কেডা?
উত্তর : আমাগো –
সম্বন্ধপদে ‘গো’ (আঞ্চলিক ভাষায়) বিভক্তি,
কেডা – কর্তৃকারকে শূন্য বিভক্তি।

৮.৫ মুহূর্তগুলি কাটে রুদ্ধ নিশ্বাসে
উত্তর : নিশ্বাসে –
করণকারকে ‘এ’ বিভক্তি।

৯. নীচের শব্দগুলিতে ধ্বনি পরিবর্তনের কোন কোন নিয়ম কাজ করেছে লেখো :

হেইপারে, নারাইনগঞ্জ, ডাইকা, আঙুল, চান্দ।

উত্তর :

হেইপারে – সেইপারে > হেইপারে (বর্ণবিপৰ্যাস)।

নারাইনগঞ্জ – নারায়ণগঞ্জ > নারাইনগঞ্জ (বর্ণবিকার) l

আঙুল – আঙ্গুল > আঙুল (ব্যঞ্জনলোপ) l

ডাইকা – ডাকিয়া > ডাইকা (অপিনিহিতি) l

চান্দ – চন্দ্ৰ > চান্দ (ধ্বনিলোপ) l

১০. নির্দেশ অনুযায়ী বাক্য পরিবর্তন করো :

১০.১ রাত্রির নিস্তব্ধতাকে কাঁপিয়ে দিয়ে মিলিটারি টহলদার গাড়িটা একবার ভিক্টোরিয়া পার্কের পাশ দিয়ে একটা পাক খেয়ে গেল। (জটিল বাক্যে)
উত্তর :
উত্তর:- রাত্রির যে নিস্তব্ধতা, তাকে মিলিটারি টহলদার গাড়িটা কাঁপিয়ে একবার ভিক্টোরিয়া পার্কের পাশ দিয়ে একটা পাক খেয়ে গেল।

১০.২ খানিকক্ষণ চুপচাপ। (না-সূচক বাক্যে)
উত্তর :
খানিকক্ষণ কোনো শব্দ নেই।

১০.৩ পরিচয়কে স্বীকার করতে উভয়েই নারাজ। (প্রশ্নবোধক বাক্যে)
উত্তর :
পরিচয়কে স্বীকার করতে উভয়েই নারাজ নয় কি?

১০.৪ শোরগোলটা মিলিয়ে গেল দূরে। (যৌগিক বাক্যে)
উত্তর :
শোরগোলটা উঠল এবং দূরে মিলিয়ে গেল।

১০.৫ মাঝি বলল, চল যেদিক হউক। (পরোক্ষ উক্তিতে)
উত্তর :
মাঝি যেদিকে হোক চলে যাওয়ার কথা বলল ।

১১. ক্রিয়ার কাল নির্দেশ করো :

১১.১ কান পেতে রইল দূরের অপরিস্ফুট কলরবের দিকে।
উত্তর :
সাধারণ অতীত ।

১১.২ সন্দেহের দোলায় তাদের মন দুলছে।
উত্তর :
ঘটমান বর্তমান ।

১১.৩ ধারে-কাছেই য্যান লাগছে।
উত্তর :
পুরাঘটিত বর্তমান ।

১১.৪ অশান্ত চঞ্চল ঘোড়া কেবলি পা ঠুকছে মাটিতে।
উত্তর :
ঘটমান বর্তমান ।

১১.৫ বাদামতলির ঘাটে কোন অতলে ডুবাইয়া দিছে তারে
উত্তর :
পুরাঘটিত বর্তমান ।

১২. নীচের শব্দগুলির শ্রেণিবিভাগ করো :

মজুর, লীগওয়ালো, পুলিশ, নসিব, রাত্রি।

উত্তর :

মজুর – বিদেশি শব্দ (ফারসি) ।

লীগওয়ালো – মিশ্র শব্দ ।

পুলিশ – বিদেশি শব্দ (ইংরেজি) ।

নসিব – বিদেশি শব্দ (ফারসি) ।

রাত্রি – তৎসম শব্দ ।

আরো পড়ুন

বোঝাপড়া কবিতার প্রশ্ন উত্তর | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | Bojhapora Question Answer | Class 8 | Wbbse

অদ্ভুত আতিথেয়তা প্রশ্ন উত্তর | Advut Atitheota Question Answer | Class 8 | Wbbse

বনভোজনের ব্যাপার প্রশ্ন উত্তর | নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় | Bonbhojoner Bapar Question Answer | Class 8 | Wbbse

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment