আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় রবীন্দ্রনাথের প্রাসঙ্গিকতা আলােচনা করাে

আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় রবীন্দ্রনাথের প্রাসঙ্গিকতা আলােচনা করাে

উত্তর:

আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় রবীন্দ্রনাথের প্রাসঙ্গিকতা :

বর্তমান ভারতবর্ষের প্রচলিত শিক্ষারূপ—রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাদর্শন। দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত। নীচে সে-বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলােচনা। করা হল. 

[1] ভারতীয় কৃষ্টি ও আধ্যাত্নিকতা : রবীন্দ্রনাথের শিক্ষার মূল লক্ষ্য ছিল শিক্ষার্থিদের ভারতীয় সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিকতা শিক্ষাদান। প্রাচীন ভারতের নৈতিক, আধ্যাত্মিক শিক্ষার আদর্শ, উপনিষদের বাণী প্রভৃতি তার শিক্ষাব্যবস্থায় সুস্পষ্ট। 

[2] মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা : ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতে মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের পবিকল্পনা সে-যুগের সাপেক্ষে নিঃসন্দেহে এক বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। তিনি উপলদ্ধি করেছিলেন | যথার্থ শিক্ষার প্রসার কেবল মাতৃভাষার মাধ্যমে সম্ভব। 

[3] শিশুর আন্তজাতিক বিকাশ : শিশুর মধ্যে অপরিসীম সম্ভাবনা লুকিয়ে থাকে। তার ভিতরে সম্ভাবনাকে বিকাশ ঘটানােই হবে আধুনিক শিক্ষার লক্ষ্য। তার বৌদ্ধিক, প্রাক্ষোভিক, নান্দনিক সর্বদিকে উন্মেষ ঘটবে।

[4] শিক্ষার পরিবেশ ও ছাত্র-শিক্ষকের সুসম্পর্ক: শিক্ষার্থী হবে স্বাধীন, যে মুক্ত পরিবেশে শিক্ষালাভ করবে। এইভাবে তার মধ্যে শৃঙ্খলা অর্জিত হবে। শিক্ষার পরিবেশকে শিক্ষার্থীর কাছে আকর্ষণীয় ও আনন্দময় করে তােলার ব্যাপারে তিনি যত্নশীল ছিলেন। এ ছাড়া ছাত্র-শিক্ষকের মধুর সম্পর্কের কথা তিনি উল্লেখ করেন। ফলে গুরু-শিষ্যের মধ্যে জ্ঞান আদানপ্রদান সহজ হয়।

[5] শিল্পকর্মের মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা: শিল্পকর্মের শিক্ষা লাভ আধুনিক যুগে খুবই উপযােগী। সেযুগে রবীন্দ্রনাথ তা উপলব্ধি করেছিলেন। তাই রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শান্তিনিকেতনের কুটিরশিল্প, তাঁত শিল্প, কৃষিকাজ, কাঠের কাজ, উদ্যান পরিচর্যা প্রভৃতি ব্যাপারে শিক্ষা দেওয়া হয়। এ ছাড়া তাঁর কর্মভিত্তিক অন্য এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হল ‘শ্রীনিকেতন। 

[6] পল্লি উন্নয়ন : ভারতবর্ষ ছিল গ্রাম অর্থাৎ পল্লিকেন্দ্রিক। তাই তার উন্নয়ন জরুরি। শান্তিনিকেতনে শিক্ষার উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্য হল সমাজসেবা ও পল্লি উন্নয়নমুলক কাজ এবং পল্লিবাসীকে শিক্ষিত করে তােলা। রবীন্দ্রনাথের প্রতিষ্ঠিত গ্রাম্য বিদ্যালয় হল “শিক্ষাসত্র।

[7] জাতীয় সংহতি স্থাপন : ভারতীয় সমাজ, ধর্ম, ভাষা, সংস্কৃতি রীতিনীতিতে বহুধা বিভক্ত তাই তিনি শিক্ষার মাধ্যমে জাতীয় সংহতি স্থাপনের চেষ্টা করেন এবং আন্তর্জাতিক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে অভিমত প্রকাশ করেন। আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় জাতীয় সংহতি ও আন্তর্জাতিক বােঝাপড়ার বিষয়টি রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাদর্শনের বহিঃপ্রকাশ।

[8] প্রকৃত মানুষ সৃষ্টি : রবীন্দ্রনাথ তাঁর শিক্ষাদর্শনে প্রকৃতি পাঠ, শিক্ষায় আনন্দ ও প্রকৃত মানুষ সৃষ্টির বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করেন। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় জাতীয় শিক্ষানীতিতে এইসব বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। যা আজ বিশ্বশান্তি ও মৈত্রীর ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি।

উপসংহার : ভারতীয় তৎকালীন শিক্ষাব্যবস্থা ও আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা সবার মধ্যে রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাদর্শন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক মহলে তাঁর শিক্ষাদর্শন খুবই সমাদৃত। তাই শিক্ষা ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ অমর হয়ে রয়েছেন

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment