অহিংস অসহযােগ আন্দোলন ও বাংলার ছাত্রসমাজ বিষয়ে একটি নিবন্ধ রচনা করাে

প্রশ্ন – অহিংস অসহযােগ আন্দোলন ও বাংলার ছাত্রসমাজ বিষয়ে একটি নিবন্ধ রচনা করাে। ৮ Marks | Class 10

উত্তর: ভারতের জাতীয় আন্দোলনে মহাত্মা গান্ধির উত্থান ও তার পরিচালনায় অসহযােগ আন্দোলনে (১৯২০-২২ খ্রি.) ছাত্রদের অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযােগ্য ঘটনা। তিনি ঘােষণা করেন যে, ভারতের লক্ষ্য স্বরাজ এবং সেই স্বরাজ অর্জনের পথ হল অহিংস অসহযােগ। 

বাংলার ছাত্রসমাজ : অসহযােগ আন্দোলনে বাংলার ছাত্র। সমাজের ভূমিকা ব্যাখ্যা করলে দেখা যায় যে— 

১। স্বদেশি শিক্ষা : সরকারি বা সাহায্যপ্রাপ্ত বিদ্যালয়ের বদলে। জাতীয় স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠল স্বদেশি শিক্ষার দাবি। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ২৫ ডিসেম্বর নাগপুরে লালা লাজপত রায়ের নেতৃত্বে যে সর্বভারতীয় কলেজ ছাত্র সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল তাতে অসহযােগ ও স্কুল-কলেজ বয়কট সংক্রান্ত প্রস্তাব বিপুল ভােটে গৃহীত হলেও দেখা গেল, বাংলা ও পাঞ্জাব ছাড়া অন্য কোথাও এই প্রস্তাব তেমন করে কার্যকর হয়নি। 

২। স্কুল-কলেজ বর্জন : ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে। কলকাতার কলেজের ছাত্ররা ব্যাপকভাবে স্কুল-কলেজ বর্জন করে অসহযােগ আন্দোলনে শামিল হন। বঙ্গবাসী, বিদ্যাসাগর, সুরেন্দ্রনাথ ও সিটি কলেজের ছাত্ররা ছিল এর প্রথম সারিতে। 

৩। স্বেচ্ছাসেবক : বাংলার ছাত্রদের অনেকে স্বেচ্ছাসেবকরূপে এই আন্দোলনে যােগদান করে এবং কংগ্রেস দলের জন্য চাঁদা সংগ্রহ করে, গঠনমূলক কাজ ও চরকার ব্যবহারের কথা প্রচার করেছিল। 

৪। প্রিন্স অব ওয়েলসের বিরােধিতা : ভারতে প্রিন্স অব ওয়েলস-এর আগমনকালে কলকাতায় তাকে সংবর্ধনা দেওয়ার প্রস্তুতির জন্য আলােচনা শুরু হলে ছাত্ররা তার বিরােধিতা করেছিল। 

৫। সভাসমিতি : ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের ১৬ জানুয়ারি দুপুরের মধ্যে। শ্ৰদ্ধানন্দ পার্কে ছাত্ররা সমবেত হয়। বক্তব্য রাখেন, দেশবন্ধু। চিত্তরঞ্জন দাশ, শ্যামসুন্দর চক্রবর্তী ও ওয়ালিদ হাসান। ২০ জানুয়ারি শ্ৰদ্ধানন্দ পার্কে ছাত্রদের আর একটি সভা হয়েছিল। সেই সভায়। ছাত্রদের অংশগ্রহণ ছিল ব্যাপকতর। 

৬। মহাত্মা গান্ধির অভিনন্দন : ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জানুয়ারি মহাত্মা গান্ধি কলকাতায় এসে ছাত্রদের অভিনন্দন জানান। কলকাতার ছাত্রদের এই আন্দোলন দ্রুত বাংলার বিভিন্ন মফস্সল। শহরে ছড়িয়ে পড়ে।

 ব্যর্থতা : ছাত্ররা অসহযােগ আন্দোলনে যােগ দিয়ে শপথ নিয়েছিল যে, স্বরাজ অর্জন না করে তারা তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ফিরে যাবে না। কিন্তু প্রথমত, চৌরিচৌরায় হিংসার অজুহাতে অসহযােগ আন্দোলন প্রত্যাহার করা হলে ছাত্রদের মধ্যে বেশ। হতাশা দেখা যায় এবং গান্ধিজির আন্দোলনে তাদের আস্থা কমে। আসে। দ্বিতীয়ত, এর ফলে বিপ্লবী আন্দোলনের প্রতি তাদের। আগ্রহ বাড়ে এবং সেইসঙ্গে বাংলাদেশে বামপন্থী জঙ্গি আন্দোলন তাদের মধ্যে ঘাঁটি গাড়তে থাকে ।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment