Bengali Bangla Prabandha Rachana আমার চোখে আমার দেশ – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

আমার চোখে আমার দেশ – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

আমার চোখে আমার দেশ 

ভূমিকা : “ভারতবাসী আমার ভাই, ভারতবাসী আমার প্রাণ, ভারতের দেবদেবী আমার ঈশ্বর, ভারতের সমাজ আমার শিশুশয্যা, আমার যৌবনের উপবন, আমার বার্ধক্যের বারাণসী…”—স্বামী বিবেকানন্দের চোখে এই দেশই আমার দেশ। দেশকে দেখার মতাে চোখ না-থাকলে অন্ধের হস্তীদর্শনের মতাে দেশ মনের অগােচরে রয়ে যায়। স্বামীজি অন্তদৃষ্টি দিয়ে দেখেছিলেন বলে দেশের সত্যস্বরূপ উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন।

দেশ বলতে কী বুঝি? : রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, “দেশ মাটি দিয়ে গড়া নয়, মানুষ দিয়ে গড়া”। এই উপলব্ধি আমারও। দেশ মানে শুধু ভূখণ্ড নয়, তার ধারকবাহক তাে দেশেরই অংশ। সামগ্রিক চেতনাই দেশকে অখণ্ডরূপে দেখতে সাহায্য করে। স্বদেশচেতনা নিজের দেশকে কেন্দ্র করে বিকশিত হয়। দ্বিজেন্দ্রলাল রায় তার মেবার পতন’ নাটকে স্বদেশচেতনাকে সংকীর্ণতা দোষে দুষ্ট বলে দেখিয়ে বিশ্বচেতনার জয় ঘােষণা করেছেন। এটা অবশ্য ঠিক যে ‘উদারচরিতানান্তু বসুবৈধ কুটুম্বক অর্থাৎ উদার চরিত্রের মানুষদের কাছে বসুন্ধরাই কুটুম্বের মতাে। বৃহৎ ভাবনা থেকে সরে এসে এ কথা বলা যায় যে, আসমুদ্রহিমাচল বিস্তৃত ভারতভূমি আমার দেশ আর এদেশের মানুষ আমার ভাই, আমার প্রাণ।

আমার চোখে আমার দেশ : আমার দেশ ভারতবর্ষ নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধানের দেশ। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যই এদেশের বৈশিষ্ট্য। জাতিধর্মবর্ণনির্বিশেষে সকল মানুষ এদেশে বাস করে। অসামান্য প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ এ দেশ। “কী বিচিত্র এই দেশ! দিনে প্রচণ্ড সূর্য এর গাঢ় নীল আকাশ পুড়িয়ে দিয়ে যায়; আর রাত্রিকালে শুভ্র চন্দ্রমা এসে তাকে স্নিগ্ধ জ্যোৎস্নায় স্নান করিয়ে দেয়। … এর বিশাল নদ নদী ফেনিল উচ্ছ্বাসে উদ্দামবেগে ছুটেছে। এর মরুভূমি বিরাট স্বেচ্ছাচারের মতাে তপ্ত বালুরাশি নিয়ে খেলা কচ্ছে।” ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাটকে সেকেন্দারের মুখে দ্বিজেন্দ্রলালের এই সংলাপই আমার চোখে আমার দেশ আমার ভারতবর্ষ। আমার দেশের সনাতন সংস্কৃতি, সভ্যতা আমার আত্মা। এদেশের মানুষ আমার প্রাণের আত্মীয়। এদেশের ধূলিকণা সােনার চেয়ে দামি। এদেশ সীতা-সাবিত্রী-দময়ন্তীর দেশ, বহু মনীষীর আবির্ভাবে পুণ্য এ দেশ, এখানে যুগে যুগে অবতার মহাপুরুষের আবির্ভাব হয়েছে। এ ভারতভূমি নেতাজি, ভগৎ সিং, বিনয়-বাদল-দীনেশ, ক্ষুদিরাম, প্রফুল্ল চাকী প্রমুখ বীর শহিদের রক্তে রঞ্জিত। এদেশ বিদেশির কাছে ‘Tagore land’ নামে পরিচিত। পুণ্যসলিলা গঙ্গা এদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত। এদেশের আকাশে-বাতাসে এদেশের মানুষের আনন্দধ্বনি ধ্বনিত হয়।

আমার দেশ পৃথিবীর বৃহত্তর গণতান্ত্রিক দেশ। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এদেশের শাসক বা প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়। সেই প্রতিনিধিদের ওপর দেশের উন্নতি, অগ্রগতি নির্ভর করে। কিন্তু বর্তমান রাজনীতিতে দুবৃত্তায়নের অনুপ্রবেশ ঘটায় দেশের সম্পদ লুঠ হচ্ছে, ক্ষমতার অপব্যবহার হচ্ছে। দলমত নির্বিশেষে সবাই এক হতে না-পারলে দেশ জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন নিতে পারবে না। আমার দেশের গরিমা অক্ষুন্ন রেখে তার সার্বিক শ্রীবৃদ্ধি করা আমাদের সকলের কর্তব্য। দিকে দিকে ন্যায়-নীতি-আদর্শের অবক্ষয়, হিংসা, হানাহানি, মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন সামগ্রিক পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে।

উপসংহার: সমস্ত নীতিবাচকতার উর্ধ্বে ইতিবাচক মনােভাব নিয়ে আমাদের স্বপ্নের দেশকে সাজিয়ে তােলার সংকল্প নিতে হবে। আমরা সকলে যেন কবিগুরুর সুরে সুর মিলিয়ে বলতে পারি—“সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে।”

আরো পড়ুন

নৌকা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

শীতের সকাল – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

একটি ফুটবল ম্যাচের স্মৃতি – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

তোমার প্রিয় ঋতু  – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

বইপড়া – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

Read More »

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

1 thought on “আমার চোখে আমার দেশ – বাংলা প্রবন্ধ রচনা”

  1. অত্যন্ত ভালো লেখা হয়েছে। আমি গল্পটি পড়ে খুব খুশি হয়েছি।👏👍😁

    Reply

Leave a Comment

error: Content is protected !!