আন্তর্জাতিক যােগদিবস – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l

আন্তর্জাতিক যােগদিবস 

ভূমিকা : যােগাসন-এর জন্ম ভারতে। প্রায় ৫০০০ হাজার বছরের পুরােনাে, সিন্ধু সভ্যতায় উদ্ধার হওয়া পদ্মাসনে উপবিষ্ট ‘পশুপতি’ মূর্তি দেখে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করেন, ভারতে যােগাসনের চল ছিল। যােগের সাহায্যে শরীর ও মন—দুই সুস্থ থাকে। দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি গত বছরের সেপ্টেম্বরে রাষ্ট্রপুঞ্জে গিয়ে ‘আন্তর্জাতিক যােগদিবস’ পালনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তাঁর এই আবেদন মেনে নিয়ে ২১ জুন দিনটিকে রাষ্ট্রপুঞ্জ আন্তর্জাতিক যােগদিবস বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। 

কেন্দ্র ও রাজ্যস্তরে উদ্যোগ : ২১ জুন নেতাজি ইন্ডাের স্টেডিয়ামে অসংখ্য যোগেন্দ্র-সহ বিভিন্ন সংগঠন এবং প্রতিষ্ঠানের  প্রতিনিধিরা হাজির হয়েছিলেন। ক্রীড়া ও আয়ুষ দফতর যৌথ উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের আয়ােজন করে। স্কুল-কলেজে আন্তর্জাতিক যােগদিবস পালন নিয়ে কেন্দ্রীয় আয়ুষ মন্ত্রকের সার্কুলার, কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের তরফ স্কুলে স্কুলে পাঠানো হয় l যােগ চর্চার সঙ্গে যুক্ত কলকাতার বিভিন্ন সংগঠন এতে যােগ দেয়। রামকৃয় মিশন, আদ্যাপীঠ, ভারত সেবাশ্রম সংঘ, আর্ট অফ লিভিং এবং প্রজাপতি ব্ৰত্মকুমারীর মতাে প্রতিষ্ঠানগুলির তরফে স্কুলে স্কুলে উপস্থিত ছিলেন যােগাসনে পারদর্শী বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। বিভিন্ন স্কুলের ছেলেমেয়েরাও তাদের সঙ্গে যােগ দেয়। অনুষ্ঠানটি আরম্ভ হয়েছিল স্বামী বিবেকানন্দের বক্তৃতা দিয়ে। এরই মাঝে মাঝে মঞে দেখানাে হল রােগ প্রতিরােধক বিভিন্ন আসন। এ ছাড়াও যােগের ওপর নৃত্যনাট্য হয়। সেইসঙ্গে স্বামী যােগানন্দ, বিষ্ণুচরণ ঘােষ, নীলমণি দাস প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা জানানাে হয় এই অনুষ্ঠানে। 

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা : সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানেও যােগদিবস পালিত হয়। তারা ২০ জুন থেকেই যােগদিবস পালনে উদ্যোগী হয়েছিলেন। এই দিন ক্রীড়াভারতী নামে একটি সংগঠনের উদ্যোগে ১৬টি যােগকেন্দ্রকে নিয়ে আয়ােজিত হয় এক অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠি এবং কেন্দ্রীয় ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ মন্ত্রী সর্বানন্দ সােনতয়ান উপস্থিত ছিলেন। যােগের ভূমিকা নিয়েও আলােচনা হয়। এ ছাড়াও হাওড়ার মৌড়ীগ্রামের হরিরাম ইন্সটিটিউট, কলকাতার জে বি রায় আয়ুর্বেদিক কলেজের মতাে ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানেও পূর্ণ উদ্যমে যােগদিবস পালিত হয়েছিল।

বাংলায় যােগশিক্ষার ইতিহাস ও ঐতিহ্য : পশ্চিমবঙ্গের পাঠ্যসূচিতে ব্রতচারী এসেছে। ভালাে করে লক্ষ করলে দেখা যায় যােগ ছাড়া এই খেলাধুলা সম্পন্ন করা সহজ নয়। বিবেকানন্দের ছেলেবেলায় ধ্যান-ধ্যান খেলা আত্মমগ্নতার অনন্য উপায় ছাড়া আর কিছুই নয়। যােগ কথার অর্থই হল সংযুক্তিকরণ। শরীরের সঙ্গে মনের, বহিঃপ্রকৃতির সঙ্গে অন্তঃপ্রকৃতির নিবিড় একাত্মতা গড়ে ওঠে যােগাসনের মাধ্যমে। মানসিক একাগ্রতা, নিষ্ঠা, রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা এবং সর্বোপরি শারীরিক সক্ষমতার চূড়ান্ত নিদর্শন হল যােগাসন। মানবীয় নৈপুণ্যের সামগ্রিক বিকাশ সাধিত হয় নিয়মিত যােগাসন চর্চায়। তা যেমন মানুষের মন ও শরীরকে সুন্দর করে তােলে, তেমনই চিন্তার প্রসার ঘটায়।

উপসংহার : বাংলায় দীর্ঘকাল ধরে যােগাসনের চর্চা চলে আসছে। বাংলাকে যােগব্যায়ামের ভাবনায় অনেক দিন ধরেই যিনি এগিয়ে নিয়ে গেছেন তিনি হলেন নীলমণি দাশ। তার লেখা যােগাসন শিক্ষার বই এক অমূল্য পুস্তক। তাই সম্প্রতি যে যােগদিবস পালিত হল আশা করা যায় এই পদক্ষেপ ভারত তথা বাংলাকে সুস্থ ও সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে সহায়ক হবে, গড়ে উঠবে এক সুস্থসবল দেশ।

আরো পড়ুন

কোভিড-১৯ – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l

কন্যাশ্রী প্রকল্পের বিশ্বাখেতাব – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l

প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালাম – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l

মঙ্গল অভিযানে ভারত  – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l

পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রতিক বন্যা ও তার প্রতিকার – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l

Read More »

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment