Bengali Bangla Prabandha Rachana বাংলা প্রবন্ধ রচনা – বিজ্ঞান ও কুসংস্কার

বাংলা প্রবন্ধ রচনা – বিজ্ঞান ও কুসংস্কার

বিজ্ঞান ও কুসংস্কার

ভুমিকা:- একবিংশ শতাব্দী হল বিজ্ঞানের জয়যাত্রার যুগ। প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে আগুনের আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞানের যে যাত্রা শুরু হয়েছে তা এখনও অব্যাহত। বিজ্ঞান আরও অনেক কিছু উন্নয়ন ঘটাবে সে বিষয়ে কোনাে সন্দেহ নেই। কিন্তু এই বিশ্বায়নের যুগে আজও মানবসমাজ নানাপ্রকার কুসংস্কারের মােহজাল থেকে বেরােতে পারছে না। বিজ্ঞানের কাজ যেখানে মানবমনের যুক্তি, বিচারবুদ্ধি এবং অনুসন্ধিৎসার  উদবােধন ঘটানাে, সেখানে কুসংস্কারের অবস্থিতি ঠিক তার বিপরীতে। কুসংস্কার মানুষকে অজানা অন্ধবিশ্বাস ও ভয়ের বাঁধনে বেঁধে রাখে। তাই আমরা বিজ্ঞাননির্ভর হলেও বিজ্ঞানমনস্ক এখনও হয়ে উঠতে পারিনি।

কুসংস্কার কী?:-  কুসংস্কার হল মানুষের যুক্তিবােধহীন অন্ধবিশ্বাস এবং মিথ্যে ধারণা, যা ইংরেজিতে ‘superstition’ নামে অভিহিত। যা বহুদিন ধরে চলে আসছে—এমন অন্ধবিশ্বাস মানুষের অজ্ঞতার কারণে কুসংস্কারে পরিণত হয়েছে। টিকটিকি ডাকলে অশুভ জ্ঞান করা, হাঁচির আওয়াজে থেমে যাওয়া কিংবা বিড়ালের রাস্তা কাটা, পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে কপালে দইয়ের ফেঁটা নিয়ে শ্রেণিকক্ষে বসা—এসব মানুষ এখনও মেনে চলে। 

আধুনিকতা ও বিজ্ঞানচেতনা:- মানুষ আদিকাল থেকেই  প্রকৃতির রহস্য ভেদ করার এবং অবাধ্য প্রকৃতিকে নিজের বশে আনার চেষ্টা করছে। এই চেষ্টার ফলেই বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানচেতনার জন্ম। যুগ যুগ ধরে বিজ্ঞানমনস্কতার ক্রমবর্ধমান প্রসার এবং গ্যালিলিওর মতাে অসামান্য মনীষীদের আপসহীন আত্মত্যাগ মানুষের অন্ধবিশ্বাসের মূলে আঘাত  হেনেছে। এইভাবেই গড়ে উঠেছিল এক নতুন মূল্যবােধ ও বিশ্বাসের। সত্যান্বেষী মানুষদের এইভাবে বিজ্ঞান বুদ্ধির প্রতি বিশ্বাস বৃদ্ধি পেল। শুধু তাই নয় চিকিৎসা, কৃষি, শিল্প, পরিবহণ, যােগাযােগ, শিক্ষা-সংস্কৃতি  প্রতিটি ক্ষেত্রে মানুষের প্রাত্যহিক জীবনকে বিজ্ঞান করে তুলল মসৃণ ও গতিময়। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত বিজ্ঞানশিক্ষার দ্বার খুলে গেছে। বিজ্ঞানের অগ্রগতির যুগে যখন দেখা যায় অন্ধবিশ্বাসের প্রতি মানুষের আনুগত্য, তখন মনে হয় আশানুরূপ বিজ্ঞানশিক্ষার প্রসার ঘটেনি। এই কারণেই কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষের কাছে বিজ্ঞানচেতনা বারবার হার মেনেছে। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন যুক্তিবাদী মানুষ এটুকু অনুভব করতে পেরেছে যে, যুক্তিতর্কের বাইরে, প্রমাণের উর্ধ্বে, অন্ধবিশ্বাসের কোনাে স্থান নেই।

কুসংস্কারের স্বরূপ:- সতীদাহপ্রথার মতাে অমানবিক প্রথা আজ বিলুপ্ত। আধুনিক ভারত যদিও আজ বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির পথে এগিয়েচলেছে তবুও ডাইনি অপবাদে হত্যা, শিশুবলির মতাে ঘটনা ভারতের বুকে প্রায়শই ঘটে চলেছে। কুসংস্কারের মিথ্যা মােহ আধুনিক সমাজকে গ্রাস করতে পারে তারই জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দের ২১ সেপ্টেম্বরের ঘটনা-গণেশ মূর্তির দুধ পান। পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় যা পৃষ্ঠটান নামে পরিচিত। তাকেই মানুষ দৈব অলৌকিকতা বলে ভক্তিভাবে মেতে ওঠে। শিক্ষিত সমাজের ছাত্র-ছাত্রী, বৈজ্ঞানিক, ডাক্তারদের হাতে তাবিজ-কবচ প্রায়ই দেখা যায়। ডাক্তারেরা নির্ভর করেন জ্যোতিষীর ওপরে। সাপে কামড়ালে ডাক্তারের কাছে না গিয়ে মানুষ ওঝার কাছে এখনও যায়। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও মানুষ এইপ্রকার কুসংস্কারগুলি বিনাদ্বিধায় আজও মেনে চলেছে। 

উপসংহার:- বিজ্ঞান ও কুসংস্কার দুই-ই মানবমনের ফসল। যুক্তিবাদী ও আলােকপ্রাপ্ত মানুষ বিজ্ঞানমনস্কতাকেই পাথেয় করে, অন্যদিকে ভীরু ও পরনির্ভরশীল মানুষের মনে বাসা বাঁধে কুসংস্কার। একমাত্র বিজ্ঞানমনস্কতার – চর্চাই পারে কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষকে এই অবান্তর সংস্কারাচ্ছন্নতার নাগপাশ থেকে মুক্ত করতে। তবেই পৃথিবী এবং মানবজাতির আলােকময় যাত্রা হবে সুনিশ্চিত—দূরীভূত হবে কুসংস্কার।

[অনুরূপে লেখা যায় : বিজ্ঞান ও কুসংস্কার, আধুনিক জীবনে বিজ্ঞান বনাম কুসংস্কার]

আরো পড়ুন

বাংলা প্রবন্ধ রচনা – বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও পরিবেশ সংরক্ষণ

পরিবেশ সুরক্ষায় ছাত্রসমাজ – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ছাত্ৰসমাজ – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

Read More »

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

2 thoughts on “বাংলা প্রবন্ধ রচনা – বিজ্ঞান ও কুসংস্কার”

Leave a Comment

error: Content is protected !!