বাংলা শিশু-কিশোর সাহিত্যের বিভিন্ন চরিত্র – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

বাংলা শিশু-কিশোর সাহিত্যের বিভিন্ন চরিত্র

ভূমিকা : শিশুমাত্রই ভাবুক ও কল্পনাবিলাসী। শিশুমন কল্পনায় ভেসে ভেসে মনের মাঝে গড়ে তােলে এক কল্পলােকের সব পেয়েছির দেশ। কখনও রাক্ষস-খােক্ষস, কখনও ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমি, আবার কখনও রূপকথার রাজা-রানি-মৎস্যকন্যা-জলপরিরা ভিড় করে থাকে তাদের মনে। ছােটো শিশু কাগজের নৌকা বানিয়ে পাড়ি দেয় নতুন নতুন দেশ। এই শিশুদের নিয়ে সমগ্র বিশ্বসাহিত্যে লােককথা-রূপকথা যেমন অনেক, তেমনই কালজয়ী লেখকদের ছড়া-কবিতা-গল্প ও উপন্যাসের সংখ্যাও প্রচুর। প্রথমে পাঠ্যবইয়ের প্রয়ােজনে নীতিশিক্ষামূলক গল্প দিয়ে এর আরম্ভ হলেও পরে ধীরে ধীরে শিশুমনের উপযােগী বাংলা মৌলিক রচনার জন্ম হয়েছিল।

শিশু-কিশাের সাহিত্যের চরিত্রেরা : বাংলা শিশুসাহিত্যের চরিত্রগুলিকে মূলত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। একদিকে রূপকথা-লােককথার বিভিন্ন চরিত্র, আর-এক দিকে শিশুদের জন্য ভিন্ন স্বাদের মৌলিক গল্পের নানান চরিত্রেরা। এই রূপকথায় আমরা পাই রাজপুত্রের জয়, রাজকন্যাকে উদ্ধার ও দুখিনী সুয়ােরানি-দুয়ােরানির গল্প। বুদ্ধভূতম, বাঁদর ও প্যাঁচা, রাজার ছেলে এরাই হল গল্পের চরিত্র। এই রূপকথার রাজ্যের লালকমল-নীলকমল হীরামন পাখি, এদেরকে নিয়েই বসেছে গল্পের আসর। ঠাকুরমার ঝুলি’, (দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদারের)-র চরিত্রগুলিকে আমরা কখনােই ভুলতে পারি না। সুকুমার রায়ের ‘পাগলা দাশু’, ‘হ য ব র ল’-এর ‘ন্যাড়া’, ‘প্রােফেসর হিজিবিজবিজ’, খগেন্দ্রনাথ মিত্রের ‘ভােম্বল সর্দার’, প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘ঘনাদা’ কিংবা গল্পবাজ আশুতােষ মুখােপাধ্যায়ের ‘গাঁজাখুরি’-র, ‘পিণ্ডিদা’-কে শিশুমন স্থায়ী আসন দিয়েছে। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘টেনিদা’, শিবরাম। চক্রবর্তীর ‘হর্ষবর্ধন’ ও ‘গােবর্ধন’-কে আমরা ভুলি কি করে! 

বাংলা সাহিত্যের গােয়েন্দারা : আজকাল গােয়েন্দানায়কেরা বাংলা শিশুসাহিত্যে বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। প্রতিটি নায়কদের মধ্যে লুকিয়ে আছে এক অনন্য বাঙালিয়ানা। এদের মধ্যে বাংলা ও বাঙালির ঐতিহ্যকে খুব সুন্দরভাবে খুঁজে পাওয়া যায়। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ব্যোমকেশ’, নীহাররঞ্জন গুপ্তের ‘কিরীটী রায়’, সৈয়দ মুস্তফা সিরাজের কর্নেল’, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কাকাবাবু ও সন্তু’, সমরেশ বসুর ‘গােগােল, বিমল করের ‘কিকিরা’ এদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য। বিশেষত সত্যজিৎ রায়ের ‘ফেলুদা’ অধুনা কিশােরদের মনে বিশেষ এক স্থান করে নিয়েছে।

সুকুমার রায় ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে ‘সন্দেশ পত্রিকার জন্য নিজস্ব অননুকরণীয় ভঙ্গিতে লিখেছিলেন ‘বুঝবার ভুল’ নামে ছয় লাইনের একটি কবিতা, যার প্রতি দুই লাইনের মাথায় ছিল একটি করে ছবি। মনে হয়, এই ন্যারেটিভ ফর্মে লেখা বুঝবার ভুল’ দিয়েই বাংলা কমিকসের সূত্রপাত। পরবর্তীতে নারায়ণ দেবনাথের আঁকা ও লেখায় হাঁদাভোদা’, বাঁটুল দি গ্রেট’, ‘নন্টে ফন্টে বাংলার কমিকসের চরিত্র হিসেবে আমাদের মনে অবিস্মরণীয় হয়ে রয়েছে। এরপরে ময়ূখ চৌধুরী, পূর্ণেন্দু পত্রী ও চণ্ডী লাহিড়ীর সৃষ্ট কমিকসের বিভিন্ন চরিত্রও আমাদের মনে চিরকালীন ছাপ রেখে গেছে।

উপসংহার : অজস্র আশ্চর্য ও বৈচিত্র্যপূর্ণ চরিত্রের সাক্ষ্য বহন করছে বাংলা শিশু-কিশাের সাহিত্য। এখানে উল্লেখ্য বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘অপু’ কিংবা শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের শ্রীকান্ত’-এর ইন্দ্রনাথের মতাে চরিত্রের, সমগ্র বিশ্বসাহিত্যেই যার জুড়ি মেলা ভার। বাঙালির বহুবিচিত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে এইসব চিত্রগুলি আমাদের সামনে এসে হাজির হয়। তাই এদের মধ্যে কখনও আমরা নিজেদের খুঁজে পাই, আবার কখনও নিজেদের অজ্ঞাতে এদের মতাে হওয়ার চেষ্টা করি। তাই তাে এরা চিরকালের সার্থক।

আরো পড়ুন

পশ্চিমবাংলার হস্তশিল্প – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

বইমেলা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

ভারতের জাতীয় সংহতি – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

আমাদের দেশ – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

বাংলার লোকসাহিত্য ও সমাজজীবন  – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

Read More »

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!