বাংলায় কমিউনিস্ট আন্দোলনের সূচনা ও প্রসার আলােচনা করাে।

বাংলায় কমিউনিস্ট আন্দোলনের সূচনা ও প্রসার আলােচনা করাে।   ৩+৫=৮ Marks/Class 10

উত্তর:-

প্রথম অংশ : সূচনা ও প্রসারে বাংলার ভূমিকা ছিল খুব উজ্জ্বল। 

আন্দোলনের সূচনা : বাংলায় কমিউনিস্ট আন্দোলনের সূচনাপর্বে দেখা যায় যে— 

১. এম. এন. রায়ের ভূমিকা : বাঙালি বিপ্লবী ও রাজনৈতিক তাত্ত্বিক মানবেন্দ্রনাথ রায়ের হাত ধরেই রাশিয়ার তাসখন্দে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল (১৯২০ খ্রি.)। আবার তিনিই ভারতের অভ্যন্তরে কমিউনিস্ট আন্দোলন গড়ে তােলার জন্য নলিনী গুপ্ত ও শওকত ওসমানীর মাধ্যমে অনুশীলন সমিতির বিপ্লবীসহ অন্যান্য বিপ্লবীদের সঙ্গে যােগাযােগ স্থাপন করেন (১৯২১ খ্রি.)। 

২. বাংলার কমিউনিস্ট গােষ্ঠী : রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ও তার আদর্শের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ভারতে কলকাতা, মাদ্রাজ, বােম্বাই, লাহাের প্রভৃতি শহরে সাম্যবাদী মতাদৰ্শযুক্ত গােষ্ঠী গড়ে ওঠে। কলকাতায় এরূপ একটি কমিউনিস্ট গােষ্ঠীর নেতা ছিলেন। মুজাফ্ফর আহমেদ। তিনি ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে কানপুর বলশেভিক ষড়যন্ত্রে অভিযুক্ত হন ও চার বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। 

৩. কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা : ভারতের বিক্ষিপ্ত কমিউনিস্ট গােষ্ঠীগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করতে ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে কানপুরে প্রথম সর্বভারতীয় কমিউনিস্ট সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এবং এখানেই সিঙ্গারাভেলু চেট্টিয়ার সভাপতিত্বে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়।

দ্বিতীয় অংশ : কমিউনিস্ট আন্দোলনের প্রসার : ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠার পর যেভাবে এই আন্দোলনের প্রসার ঘটে তা হল—

১. শ্রমিক-কৃষক পার্টি : বাংলার কমিউনিস্টরা (মুজাফফর আহমেদ, কাজি নজরুল ইসলাম, হেমন্তকুমার সরকার প্রমুখ) শ্রমিক ও কৃষককে সংগঠিত করে সাম্যবাদী আন্দোলন পরিচালনার জন্য বাংলার ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস্ পার্টি গঠন করে (১৯২৫ খ্রি.)। এই পার্টির অনুকরণে বােম্বাই, পাঞ্জাব ও যুক্তপ্রদেশেও অনুরূপ পার্টি গড়ে ওঠে এবং ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে কেন্দ্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস্ পার্টি। 

২. মীরাট ষড়যন্ত্র মামলা : ব্রিটিশ সরকার কমিউনিস্ট দমনের জন্য ৩২ জন কমিউনিস্ট নেতা বা শ্রমিক নেতাকে গ্রেপ্তার করে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা শুরু করেন (১৯২৯ খ্রি.)। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, এই অভিযুক্তদের মধ্যে ছিলেন বাংলার মুজাফফর আহমেদ, কিশােরীলাল ঘােষ, ধরণী গােস্বামী, গােপেন চক্রবর্তী, রাধারমণ মিত্র, গােপাল বসাক ও শিবনাথ মুখােপাধ্যায় প্রমুখ। 

৩. কলকাতা কমিটি : মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার পর আব্দুল হালিম প্রমুখ কমিউনিস্ট নেতা বাংলায় কমিউনিস্ট আন্দোলনের ধারাকে বজায় রাখেন। আব্দুল হালিমের নেতৃত্বে গঠিত হয় ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির কলকাতা কমিটি’ (১৯৩১ খ্রি.)।

৪. ভূপেন্দ্রনাথ দত্তের উদ্যোগ : স্বামী বিবেকানন্দের ভাই ড. ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত ও বঙ্কিম মুখােপাধ্যায়ের উদ্যোগে গড়ে ওঠে। ইন্ডিয়ান প্রােটোরিয়ান রেভােলিউশনারী পার্টি (১৯৩১ খ্রি.)। পরবর্তীকালে এই পার্টি কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়।

উপসংহার : উপরের আলােচনা থেকে দেখা যায় যে, বাংলার কমিউনিস্ট আন্দোলন ছিল ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনের গােড়াপত্তনের অন্যতম প্রধান অংশীদার।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment