ভারতে জাতীয়তাবাদের উন্মেষে বিবেকানন্দের ‘বৰ্ত্তমান ভারত’ গ্রন্থের অবদান কী ছিল? 4 Marks/Class 10
উত্তর:–
ভূমিকা : বিবেকানন্দ প্রকাশ্য রাজনীতি না-করলেও ‘বর্তমান ভারত’ গ্রন্থের ন্যায় তাঁর বিভিন্ন রচনার মাধ্যমে প্রাচ্যের ও পাশ্চাত্যের শ্রেষ্ঠ ভাবধারার সমন্বয়ে জাতীয়তাবাদী নবভারত গঠনের আদর্শ প্রচার করেন।
জাতীয়তাবাদের উন্মেষে ‘বর্তমান ভারত’-এর ভূমিকা :
১) স্বদেশচেতনা : “ভারতবাসী আমার ভাই, ভারতবাসী আমার প্রাণ, ভারতের দেবদেবী আমার ঈশ্বর, ভারতের মৃত্তিকা আমার শিশুশয্যা, আমার যৌবনের উপবন, আমার বার্ধক্যের বারাণসী—বল ভাই ভারতের মৃত্তিকা আমার স্বর্গ, ভারতের কল্যাণ আমার কল্যাণ”-বর্তমান ভারত’ গ্রন্থে এই উক্তির মাধ্যমে বিবেকানন্দ দেশবাসীর মধ্যে স্বদেশচেতনা ও দেশপ্রেম জাগ্রত করতে চেয়েছিলেন।
২) সামাজিক সংহতি : সমাজের অস্পৃশ্যতা ও জাতিভেদপ্রথা দূর করে সামাজিক সংহতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতীয়তাবাদকে শক্তিশালী করে তুলতে বিবেকানন্দ (বর্তমান ভারত’-এ) বলেছেন, “…ভুলিও না নীচ জাতি, মুখ, দরিদ্র, অজ্ঞ, মুচি-মেথর তােমার রক্ত, তােমার ভাই।”
৩) আত্মনির্ভরশীলতা : স্বামী বিবেকানন্দ এই গ্রন্থে পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণের পরিবর্তে দেশজ সংস্কৃতিকে অনুসরণ করার কথা বলে দেশবাসীর মধ্যে স্বদেশি চেতনা ও আত্মনির্ভরশীল হওয়ার কথা প্রচার করেন।
৪) দেশের জন্য আত্মত্যাগের আহ্বান : ‘বর্তমান ভারত’ গ্রন্থে বিবেকানন্দ দেশবাসীকে দেশের জন্য আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ করে বলেছেন, “হে ভারত-ভুলিও না—তুমি জন্ম হইতেই মায়ের জন্য বলিপ্রদত্ত, ভুলিও না—তােমার সমাজ যে বিরাট মহামায়ার ছায়ামাত্র। হে বীর, সাহস অবলম্বন কর, সদর্পে বল—আমি ভারতবাসী, ভারতবাসী আমার ভাই।”
উপসংহার : বিবেকানন্দ ‘বর্তমান ভারত’-এ দেশকে মাতৃরূপে কল্পনা করে তার মুক্তির জন্য আত্মােৎসর্গের আদর্শ তুলে ধরেছিলেন—তাতে উচ্চনীচ, ধনী-নির্ধন কেউই বাদ পড়েনি। তাঁর প্রেরণাতেই দেশপ্রেম ধর্মের বিকল্প হয়ে উঠেছিল এবং তার আদর্শ ও চিন্তাধারার ছাপ পরবর্তীকালে জাতীয় আন্দোলনে ছাপ ফেলেছিল।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।