বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ | মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ

উত্তর:

বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ

একসময় জীবনযাপনের ক্ষেত্রে মানুষে-পশুতে প্রভেদ ছিল বড়ােই অল্প। সর্ব অর্থে তাকে প্রকৃতির দাসত্ব করতে হত। কিন্তু ক্রমশ প্রকৃতিকে জয় করার যে প্রয়াস দেখা দিয়েছিল তার মধ্যে, প্রকৃতপক্ষে তখন থেকে বিজ্ঞানেরও সূচনা। আমাদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রােতভাবে জড়িয়ে থাকা এই বিজ্ঞান সম্পর্কে অহরহ দুটি পরস্পরবিরােধী কথা আজ শুনতে পাওয়া যায়। কেউ বলে বিজ্ঞান মানবজীবনের পক্ষে আশীর্বাদস্বরূপ। অপরপক্ষের মতে, বিজ্ঞান মানুষের জীবনকে আজ দুর্বিষহ করে তুলেছে, বিজ্ঞান অভিশাপ ছাড়া আর কিছুই নয়।

মানুষের প্রয়ােজন আর কৌতুহল থেকেই একের পর এক বিজ্ঞানের নানান আবিষ্কার সম্ভব হয়েছে। সুদূর অতীতকাল থেকে মানুষ ধারাবাহিকভাবে বিজ্ঞানের যে সাধনা করে আসছে তার প্রধান লক্ষ্য মানবকল্যাণ। প্রস্তর যুগের অবসান ঘটিয়ে উন্নত ধাতু ব্যবহারের মধ্য দিয়ে ক্রমশ সভ্যতার যে অগ্রগতি ঘটেছে তা বিজ্ঞানেরই অবদান। বিজ্ঞানের সাহায্যে মানুষ অল্প শ্রমে বেশি কাজ করার নানারকম সুবিধা লাভ করেছে। বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে যানবাহনের ক্ষেত্রে অভাবিত পরিবর্তন ঘটেছে। ঘরে ঘরে এসেছে রেডিয়াে, টেলিভিশন, টেলিফোন। স্থাপিত হয়েছে বড়াে বড়াে কলকারখানা, হাতের নাগালের মধ্যে এসেছে নানান ভােগ্যপণ্য। বিজ্ঞানের দান হিসেবে পাওয়া এরকম হাজারাে জিনিস আজ মানুষের চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে, যেগুলির সাহায্যে দূর হয়েছে জীবনযাপনের কষ্ট। মানুষের জীবনে বিজ্ঞান যে কতভাবে কল্যাণকর ভূমিকা পালন করেছে তা বলে শেষ করা যায় না।

তবু মানুষের অশুভ বুদ্ধি বিজ্ঞানের শক্তিকে ধ্বংসাত্মক কাজে ব্যবহার করতে চেয়েছে। বিজ্ঞান অজানাকে জানায়, প্রকৃতির নিয়মগুলি আমাদের চোখের সামনে তুলে ধরে, আমাদের হাতের কাছে এনে দেয় নানান তত্ত্ব। অমিত শক্তির উৎস এই বিজ্ঞানকে কীভাবে কাজে লাগানাে হবে তা নির্ভর করে বিজ্ঞানকে যারা বাস্তবক্ষেত্রে প্রয়ােগ করেন তাঁদের মানসিকতার ওপর। তাই যে বিজ্ঞানের সাহায্যে মানুষ একদিকে এক গ্রহ থেকে অন্য গ্রহে পৌঁছে যাচ্ছে, যার সাহায্যে নিরাময় ঘটছে দুরারােগ্য ব্যাধির, সেই বিজ্ঞানের সাহায্যেই মানুষ পরমাণু বােমা ফেলে হিরােসিমা-নাগাসাকিকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে, ভয়ংকর বিস্ফোরণ ঘটিয়ে অজস্র মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়। মুম্বইয়ে, নিউইয়র্কে এবং আরও কত জায়গায়। বৈজ্ঞানিকরা নিত্যনতুন আবিষ্কারের মাধ্যমে বিজ্ঞানকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। আর সেই আবিষ্কার একদিকে যেমন মানবকল্যাণে ব্যবহৃত হচ্ছে তেমনি ব্যবহৃত হচ্ছে মানুষের ক্ষতিসাধনের ক্ষেত্রে। সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার, প্রতিটি দেশ আজ নিজ নিজ শক্তি প্রদর্শনের জন্য বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে ভয়াবহভাবে আধুনিক অস্ত্রে সুসজ্জিত হওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

বিজ্ঞানকে মানবকল্যাণে ব্যবহার করার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়েও অনেক সময় মানুষ নিজেকে সংযত করতে পারে না, গ্রহণ করতে পারে না প্রয়ােজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। যার ফলে কল্যাণের পাশাপাশি অকল্যাণও ঘটে অনেক। আজকের পৃথিবীতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি পরিবেশকে দূষিত করে চলেছে মারাত্মকভাবে। প্রতিদিন বেড়ে চলেছে যানবাহনের সংখ্যা। যানবাহনের ধোয়া আর হর্নের কর্ণভেদী আওয়াজ দুষণ ঘটাচ্ছে প্রতি মুহুর্তে। বিশাল বিশাল কলকারখানা থেকে যে পরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইড এবং কার্বন মনােক্সাইড নির্গত হয় তাতে পরিবেশের ভারসাম্য বিপন্ন হয়ে উঠছে। কলকারখানার বর্জ্য পদার্থে শুধু বাতাস নয়, সমুদ্র, নদীনালাও দূষিত হচ্ছে। বিজ্ঞানের অবদান হিসেবে পাওয়া নানারকম কীটনাশক ও রাসায়নিক সার মানুষের উপকারের সঙ্গে সঙ্গে অপকারও করছে প্রচুর পরিমাণে। তাই বিজ্ঞানের এই নঞর্থক দিকগুলি যখন আমাদের চোখের সামনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে তখন বিজ্ঞানকে আর আশীর্বাদ বলে মনে হয় না।

কিন্তু ভালাে করে ভেবে দেখলে বােঝা যায়, বিজ্ঞান কোনােভাবেই অভিশাপ নয়, বিজ্ঞান আমাদের কাছে পরম আশীর্বাদস্বরুপ। অশুভ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ বিজ্ঞানকে নাশকতামূলক কাজে ব্যবহার করে থাকে বলে বিজ্ঞানকে দোষ দেওয়া যুক্তিহীন। দোষ দিতে হবে তাদের, যারা বিজ্ঞানের অপব্যবহার করে। বিজ্ঞানের পরিণামও ব্যবহারকারীর প্রবণতার ওপরেই পুরােপুরি নির্ভরশীল। তবে মানুষের শুভবুদ্ধি আজও বিলুপ্ত হয়নি। তাই ভরসা রাখা যেতে পারে, মানুষ একদিন বুঝতে পারবে যে, বিজ্ঞানের অপব্যবহার আত্মহননের নামান্তর। আমরা সেই দিনটির অপেক্ষায় থাকব, যে দিন মানুষ বিজ্ঞানকে শুধু মানবকল্যাণেই ব্যবহার করার কথা ভাববে।

আরো পড়ুন

দেশপ্রেম বনাম বিশ্বপ্রেম | মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরােধে ছাত্রসমাজের ভূমিকা | মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

ছাত্রজীবনে সৌজন্য ও শিষ্টাচার | মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

নিরক্ষরতা দূরীকরণে ছাত্রসমাজ | মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

বিশ্ব উষ্ণায়ন | মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

Read More »

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment