বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানমনস্কতা
ভূমিকা:-
“বিজ্ঞানের যুগে চাই, বিজ্ঞানী-মন,
সচেতনে খুঁজে পায়, আলাের ভুবন।”
মানুষের বিজ্ঞানচেতনা মানুষকে এনে দিয়েছে মুক্তির আনন্দ। সত্যের স্বরূপ উদ্ঘাটিত করার জন্য, রহস্যের মায়াজাল উন্মােচিত করার জন্য যুক্তির শাণিত অস্ত্রে মানুষ কার্যকারণ সম্পর্কের ব্যাখ্যা করেছে। কোনাে “আপ্তবাক্য”, কোনাে অন্ধবিশ্বাসকে গ্রহণ করতে চায় না। বিজ্ঞানমনস্কতা বিজ্ঞানের যুগে বাস করার ছাড়পত্র বা Passport। বিজ্ঞানমনস্কতা দৈবনির্ভর সংস্কারাচ্ছন্ন মনকে মুক্তি দিয়ে যুক্তির কষ্টিপাথরে যাচাই করে গড়ে তােলে।
বিজ্ঞানমনস্কতার সেকাল ও একাল:- বিজ্ঞানমনস্কতার শুভ সূচনা হয়েছিল সেদিন থেকে, যেদিন প্রথম আদিম মানুষ আগুন জ্বালাবার কৌশল আয়ত্ত করে তার ব্যবহার শিখেছিল। একসময় মানুষ সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ, খাদ্য-অখাদ্য নির্ণয়, ধর্ম—সমস্ত বিষয়কেই ভ্রান্ত কুসংস্কারাচ্ছন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে যুক্তিহীনভাবে গ্রহণ করত। এযুগের বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ বাস্তব অভিজ্ঞতা, কার্যকারণ যােগসূত্র, পরীক্ষানিরীক্ষা ব্যতিরেকে কোনাে কিছু গ্রহণ করে না। এই দৃষ্টিই যথার্থ বৈজ্ঞানিক দৃষ্টি। আজ জড়জগৎ, প্রকৃতি, জীবন, মহাশূন্য, মানুষের সামাজিক, রাজনৈতিক অবস্থান ও অধিকার—সব কিছুই বিজ্ঞানচেতনার দ্বারা বিশ্লেষিত হচ্ছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও বিজ্ঞানচেতনার প্রসার ঘটেছে। আমরা চেষ্টা করছি বিশুদ্ধ পানীয় জল পান করতে। আমরা প্রত্যহ স্নান করছি সাবান ব্যবহার করে। আমরা কাচা পরিচ্ছন্ন পােশাক পরতে সচেষ্ট। আমরা যে খাদ্যগ্রহণ করি, তার বিশুদ্ধতা সম্পর্কেও সচেতন। এই বিজ্ঞানমনস্কতার জন্য অসুখ হলে দৌড়ে যাই। সুযােগ্য চিকিৎসকের কাছে, কোনাে হাতুড়ের কাছে নয়।
বৈজ্ঞানিক বােধ বনাম বিজ্ঞানচেতনা:- নিছক বিজ্ঞান পড়লেই কিন্ত বৈজ্ঞানিক বােধ বা বিজ্ঞানমনস্কতা জন্মায় না। যে-শিক্ষা মনের ক্ষুদ্রতা ও ভ্রান্তির আবরণ সরিয়ে দিয়ে যথার্থ সত্যকে চেনাতে সাহায্য করে, সেই শিক্ষা ও মানসিকতাই হল বৈজ্ঞানিক বােধ। সেই বিজ্ঞানমনস্কতা বিকাশের জন্য নানা পরিকল্পনা করা হয়েছে। পঠনপাঠনে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রকে নানাভাবে প্রসারিত করা হচ্ছে। বিজ্ঞানচেতনার প্রসারে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞানমঞ্চ ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদেরও সদর্থক ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। চারপাশে কোনাে কুসংস্কার দেখলেই মানুষকে সেবিষয়ে সচেতন করতে হবে। এজন্য সরকার ও প্রশাসনকেও বিজ্ঞানের মাধ্যমে। ইতিবাচক ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। জনগণকে বিজ্ঞানচেতনাসম্পন্ন করে তােলার জন্য জনবিজ্ঞান আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এই উদ্দেশ্যে গঠিত হয়েছে ‘ভারত জনবিজ্ঞান জাঠা’। এরা গ্রামে গ্রামে, শহরে শহরে পরিক্রমা করে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও আলােচনার মাধ্যমে দীর্ঘদিনের কুসংস্কার থেকে সাধারণ মানুষকে মুক্ত করতে সচেষ্ট হয়েছে।
উপসংহার:- প্রশাসনের গদাইলস্করী চালের থেকেও বড়াে মানুষে বিজ্ঞানচেতনার অভাব, অভাব সৎ সাহসের। পুথিগত শিক্ষা শুধু নয়, মানসিক শিক্ষাই হবে সংগ্রামের দিশারী। মানুষের মনের অন্তর্জ্ঞানের আলোকে প্রজ্জ্বলিত করে যেদিন কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে পারবে সেদিন হবে বিজ্ঞানের জয়যাত্রা। বিজ্ঞানচেতনার দ্বারা মানুষের মনের অন্ধকার দূর করা সম্ভব। বিজ্ঞানের আলােয় অন্ধমনের গুহান্ধকার দূর হয়। বিজ্ঞানহীন, যুক্তিদ্রোহী জীবন, আলােকশূন্য অন্ধকারময় জীবন। একমাত্র বিজ্ঞানই পারে মানুষের কূপমণ্ডুকতা দূর করতে। একমাত্র বিজ্ঞানমনস্কতা মানুষকে সত্যালােকের দিকে নিয়ে যেতে পারে। বিজ্ঞানলব্ধ জ্ঞান নিয়ে একদিন সমস্ত জীবন ও জগতে সত্যকে নির্বিকল্প দৃষ্টিতে দেখতে পাওয়া যাবে। সেই দৃষ্টিই হল প্রকৃত বিজ্ঞানীর দৃষ্টি।
আরো পড়ুন
দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যুৎ – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
জনসাধারণের মধ্যে বিজ্ঞানচেতনার প্রসার – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
বিজ্ঞানের জয়যাত্রা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।
Good Analysis