জনসাধারণের মধ্যে বিজ্ঞানচেতনার প্রসার – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

জনসাধারণের মধ্যে বিজ্ঞানচেতনার প্রসার 

ভূমিকা:- 

“বিজ্ঞান চায় সবার মাঝে প্রাণের কথা বলতে,
অন্ধ আবেগ সরিয়ে দিয়ে আলাের পথে চলতে।” 

একটি আলােকশিখা যেমন অন্ধকার কক্ষকে আলােকিত করে, ঠিক তেমন জীবনকে আলােকিত করে তােলে বিজ্ঞানের আলােকশিখা। এই আলােকশিখাই হল বিজ্ঞানচেতনা যা মানুষকে করেছে যুক্তিবাদী, জীবনকে করেছে বাস্তবমুখী। এযুগে বিজ্ঞান অন্ধজনে দিয়েছে আলাে, মৃতজনে দিয়েছে প্রাণ। 

জীবনে নানা ধরনের অসুখ: বিজ্ঞানচেতনার অভাব:- অজ্ঞতা, অশিক্ষা, কুসংস্কারের অন্ধত্ব আমাদের জীবনকে যে কতভাবে বঞ্চিত করেছে তার উদাহরণ অনেক। আমাদের জীবনের পদে পদে রয়েছে। নানা ধরনের অসুখবিসুখ-কলেরা, বসন্ত, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, কালাজ্বর ইত্যাদি। গ্রামের-পর-গ্রাম উজাড় হয়ে যেত এইসব অসুখে। আমাদের অজ্ঞতা ও বিজ্ঞানচেতনার অভাবে আমরা এগুলিকে ভগবানের রুদ্র রােষ বলে বিবেচনা করতাম। বসন্তের হাত থেকে রেহাই পেতে ‘মা শীতলার’ শরণ নিতাম। দুরারােগ্য অসুখ সারানাের জন্য ব্যবহার করতাম কবচ, তাবিজ, ফকিরের জলপড়া ইত্যাদির। দৌড়ােতাম ঠাকুরের কাছে একটুখানি চরণামৃতের জন্য। সাপের কামড় থেকে বাঁচতে ‘মা মনসা’-র কাছে গিয়ে ধরনা দিতাম। শনি ঠাকুরেরও আমরা শরণ নিতাম গ্রহশান্তির জন্য। কিন্তু পরে যখন বিজ্ঞানের ক্রমােন্নতিতে চিকিৎসাশাস্ত্রের উন্নতি হল, তখন দেখা গেল এসবই ভ্রান্তধারণা। 

ভয় ও কুসংস্কার থেকে নিরাময়:- বিজ্ঞানচেতনা আমাদের কেবল শারীরিক অসুখ থেকে বাঁচায় না, নানারকম মানসিক রােগেরও পরাময় ঘটিয়ে থাকে। আমাদের মনে জাঁকিয়ে বসে আছে নানা ধরনের অলৌকিক বিশ্বাস, কুসংস্কার। আমাদের অনেকেই ভূতপ্রেত বিশ্বাস করে। এখনও ডাইনি-তন্ত্র দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আমাদের দেশে মন্ত্রতন্ত্র, ঝাড়ফুকে আজও অনেকে বিশ্বাস করেন। কালাে বিড়াল, হাঁচি-টিকটিকি, নবজাত শিশুকে পেঁচোয় পাওয়া ইত্যাদিকে আমরা অশুভ ব্যাপার বলে চিহ্নিত করে থাকি। হাই উঠলে তুড়ি দিই, বা ক্রশ আঁকা হয়, যাতে শয়তান না মুখের ভিতর ঢুকে পড়ে। বাঘের হাতে মৃত্যুকে এড়াবার জন্য আজও সুন্দরবন অঞলে ‘বনবিবি’-র পুজো দেওয়া হয়। এগুলি সব কুসংস্কার। এইসব কুসংস্কার থেকে মুক্তির জন্য চাই বিজ্ঞানসচেতনতা অর্থাৎ যুক্তিবাদী বিচারবােধ। বিজ্ঞানচেতনা হল যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে সত্যের প্রতিষ্ঠা। যুক্তির বহির্ভূত কোনাে কিছুকে মেনে নেওয়া মানে অন্ধবিশ্বাসের শিকার হওয়া এ কথা বুঝতে হবে।

বিজ্ঞানচেতনা ও বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার:- বিজ্ঞানচেতনা আমাদের শিক্ষাকে কতখানি পরিপূর্ণতা এনে দিতে পারে, তার প্রমাণ বিশেষভাবে পাওয়া যায় চিকিৎসাবিজ্ঞানে, মহাকাশ গবেষণায়, শস্য উৎপাদনে, কৃষিপণ্য সংরক্ষণে, সমুদ্র গবেষণায়, নতুন নতুন যানবাহনের উৎপাদনে। চিকিৎসা এখন সর্বৈব বিজ্ঞাননির্ভর। মানবদেহের সবরকম জটিল ব্যাধিকে যন্ত্র মুহূর্তে উদঘাটিত করে চিকিৎসার পথ বাতলে দিচ্ছে। মহাকাশ এখন আমাদের কাছে অনেকটাই রহস্যমুক্ত। কৃষি ও শস্য উৎপাদনে আমাদের বিজ্ঞানচেতনা বিপ্লব এনে দিয়েছে। আমাদের বিজ্ঞানচেতনায় সঞ্জাত শিক্ষা গােটা পৃথিবীটাকেই এনে দিয়েছে হাতের মুঠোর ভিতর। বিজ্ঞানচেতনা একইসঙ্গে আমাদের সংস্কার ভেঙেছে এবং শিক্ষার উৎকর্ষ সাধিত করেছে।

উপসংহার:- বিজ্ঞানচেতনা আমাদের মানবসভ্যতা বিকাশের চাবিকাঠি। কুসংস্কার, অজ্ঞতা, ভয় এবং নানা ধরনের অলৌকিক নির্ভরতা আমাদের নানাভাবে ক্ষতি করে থাকে। বিজ্ঞানচেতনা থাকলে এইসব ব্যাপারগুলাে মুহূর্তে কেটে যায়। আগুনের আবিষ্কার যেমন একদিন মানুষকে বন্যপশুর হাত থেকে বাঁচিয়েছিল, শিখিয়েছিল অন্ধকারকে দূর করতে, লােহা-পিটিয়ে অস্ত্র বানাতে, তেমনি এই বিজ্ঞানচেতনা প্রতি মুহূর্তে অন্ধত্ব ও অজ্ঞতার অবসান ঘটিয়েছে।

আরো পড়ুন

মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

বিজ্ঞানের জয়যাত্রা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

বনসৃজন – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

প্রাত্যহিক জীবন জল – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

Read More »

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment