বনসৃজন – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
“মরু বিজয়ের কেতন উড়াও।”
ভূমিকা:- মানুষের প্রাণশক্তির অন্যতম উৎস হল গাছ। অরণ্য মানুষকে দিয়েছে খাদ্য, সু-বাতাস, বাঁচার আশ্রয়। আদিম মানুষ একদিন অরণ্যে প্রাণের। সঞ্জীবনী খুঁজে পেয়েছিল। আরণ্যক মানুষ অরণ্যকে এবং অরণ্যের সম্পদ বক্ষ-লতাকে দেবতা বলে পূজা করেছে এবং অরণ্যসম্পদকে ভালােবেসে রক্ষা করেছে। কিন্তু সভ্যতা বিকাশের ফলে মানুষ নির্মমভাবে অরণ্য ধ্বংস করে শহর-বসতি নির্মাণ করেছে। ফলে অরণ্য জননীর সীমন্তে আজ ধূসরতা নেমে এসেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় পৃথিবীতে দূষণের পরিমাণ বেড়ে গেছে। জীবনধারণ আজ কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই বৃক্ষনিধন নয়, নতুন বৃক্ষ রােপণ করাই হােক আমাদের নতুন সংকল্প বাণী।
বনসম্পদ ও বনসৃজন:- মানবসভ্যতায় বৃক্ষের প্রয়ােজন অসীম। গাছ কার্বন ডাইঅক্সাইড আত্মস্থ করে ফিরিয়ে দেয় প্রাণধারণের জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেন। মানুষের জীবনের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে পরিবেশকে দূষণের হাত থেকে মুক্ত করতে, বন্যা ও ভাঙন রােধে, নানা রােগ প্রতিরােধে, আবহাওয়া ও জলবায়ুর ভারসাম্য বজায় রাখতে—বনসৃজন ও সংরক্ষণের প্রয়ােজনীয়তা অপরিসীম। গাছ প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখে। যান্ত্রিক সভ্যতার ক্রমবিস্তারে যে-হারে অরণ্যসংহার কার্য চলছে, তাকে প্রতিরােধের জন্য সুপরিকল্পিত উপায়ে বনসৃজন করা আবশ্যক।
অরণ্যের অবদান:- প্রাচীন ভারতে বনভূমিতে গড়ে-ওঠা তপােবন ছিল আশ্রমিক শিক্ষার প্রধান কেন্দ্র। জীবনদায়ী ওষুধ বলতে একদা বনের গাছগাছড়াকেই বােঝাত। বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব উন্নতিতে চিকিৎসাবিজ্ঞানে অবর্ণনীয় সাফল্য এসেছে এ কথা ঠিক, কিন্তু অ্যালােপ্যাথিক, হােমিয়ােপ্যাথিক ও আয়ুর্বেদিক ওষুধ প্রস্তুতিতে বন ও বনের গাছপালা সবচেয়ে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করছে আজও।
বৃক্ষবন্দনা:- মানুষের নিকটতম প্রতিবেশী রূপে রবীন্দ্রনাথ বৃক্ষের বন্দনা করেছেন। তার একান্ত কামনা
“দাও ফিরে সে অরণ্য লহ এ নগর,
লহ যত লৌহ, লােষ্ট্র, কাষ্ঠ ও প্রস্তর
হে নব সভ্যতা।”
বৃক্ষরােপণ :- প্রকৃতিকে শ্যামল স্নিগ্ধ জননীরূপে কল্পনা করে তাকে ভালােবেসে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আধুনিক ভারতে বৃক্ষরােপণ উৎসবের সূচনা করেন। বনসৃজন ও সংরক্ষণের রূপায়ণে ভারত সরকারও নানান পরিকল্পনা নিয়েছে। আজ দেশের সর্বত্র প্রতি বছর বাৎসরিক উৎসবের মতাে বনসৃজন সপ্তাহ’ বিপুল উৎসাহে পালিত হয়। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে জুলাই মাসে ভারত সরকার প্রথম বনমহােৎসব পালন করে।
উপসংহার:- সমাজ, দেশ ও দশের স্বার্থে সবুজায়ন আবশ্যক। আগামী দিনের শিশুর মুক্ত বায়ুতে শ্বাসগ্রহণের স্বার্থে বৃক্ষরােপণ অপরিহার্য। এ বিষয়ে সরকার ও প্রশাসনের সঙ্গে ছাত্র-শিক্ষকদেরও এগিয়ে আসতে হবে। বস্তুত প্রতিটি নাগরিককেই এই দায়িত্ব নিতে হবে। একদিকে বৃক্ষ রক্ষা, অন্যদিকে বনসৃজন—এই উভয় কাজই একসঙ্গে আমাদের করতে হবে। এটি কোনাে একজন বা এক গােষ্ঠীর কাজ নয়, এটি সকলের কাজ। প্রত্যেক মানুষের মধ্যে একটি গাছ একটি প্রাণ’—এই বােধ জাগিয়ে তুলতে হবে। নিজেদের প্রয়ােজনে ও বাঁচার তাগিদে আজ প্রত্যেককে একটি করে বৃক্ষরােপণ করতে হবে। আশার কথা, দিকে দিকে সবুজায়নের জন্য সমাজভিত্তিক বনসৃজন শুরু হয়েছে। গাছ যে অক্সিজেন দেয় তার মূল্য অপরিমেয়, এ কথা মনে রাখলে আমরা আর গাছ কাটতে পারব না। বরং উৎসাহিত হব নতুন গাছ লাগাতে। আমাদের উচিত সম্মিলিতভাবে বনসৃজনে উদ্যোগী হওয়া।
আরো পড়ুন
বিজ্ঞানের জয়যাত্রা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
প্রাত্যহিক জীবন জল – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
প্রাকৃতিক বিপর্যয় : সমস্যা ও প্রতিকার – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
আমাদের পরিবেশ : সমস্যা ও প্রতিকার – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পরিবেশরক্ষায় অরণ্য – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।