ব্রাহ্মণ্য ও বৌদ্ধ শিক্ষার মধ্যে কী কী সাদৃশ্য বা মিল পাওয়া যায় তা উল্লেখ করো
উত্তর :
ব্রাহ্মণ্য ও বৌদ্ধ শিক্ষার সাদৃশ্য :
প্রাচীন ভারতে ব্রাহ্মণ এবং বৌদ্ধ—এই দু-ধরনের শিক্ষাই ধর্মকে কেন্দ্র করে বিস্তারলাভ করেছিল। দুটি শিক্ষাব্যবস্থাই পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী এবং পরিপূরক হিসেবে দীর্ঘদিন পাশাপাশি চলছিল। সাধারণভাবে শিক্ষার তত্ত্বগত দিক এবং প্রয়ােগের দিক থেকে এই দুই শিক্ষার মধ্যে বিশেষ কোনাে পার্থক্য ছিল না। ঐতিহাসিকদের মতে, বৌদ্ধ শিক্ষা ব্রাহ্মণ্য শিক্ষারই পরিবর্তিত রূপ। সুতরাং, এই দুই শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে বহু সাদৃশ্য বা মিল বর্তমান। এখানে কতকগুলি সাদৃশ্য বা মিল উল্লেখ করা হল—
[1] শিক্ষার লক্ষ্যের ক্ষেত্রে : ব্রাহ্মণ্য শিক্ষার মূল লক্ষ্য মােক্ষলাভ এবং বৌদ্ধ শিক্ষার মূল লক্ষ্য পরিনির্বাণ। এই দুই বিষয়ই কিন্তু সংসার জীবনের বন্ধন ও দুঃখ থেকে মুক্তির উপায়কে সূচিত করে।
[2] বিদ্যারম্ভের ক্ষেত্রে অনুষ্ঠান : ব্রাহ্মণ্য শিক্ষার ক্ষেত্রে উপনয়ন এবং বৌদ্ধ শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রব্রজ্যা’ নামক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর পঠনপাঠন শুরু হত। মােটকথা উভয় শিক্ষাতেই শিক্ষা শুরুটি একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ঘটত।
[3] শিক্ষা সমাপ্তি ক্ষেত্রে অনুষ্ঠান : ব্রাহ্মণ্য শিক্ষার ক্ষেত্রে ‘সমাবর্তন অনুষ্ঠান এবং বৌদ্ধ শিক্ষার ক্ষেত্রে উপসম্পদা নামক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সমাপ্তি ঘােষণা করা হত। এর অর্থ উভয় শিক্ষাব্যবস্থাতেই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষা সমাপ্তি ঘােষণা হত।
[4] আবাসিক শিক্ষার ব্যবস্থা : ব্রাহ্মণ্য শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে গুরুগৃহে থাকতে হত এবং বৌদ্ধ শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে মঠ বা বিহার বা সংঘে থাকতে হত। অর্থাৎ উভয় শিক্ষাব্যবস্থাই ছিল আবাসিক।
[5] ধর্মভিত্তিক শিক্ষা : ব্রাহ্মণ্য এবং বৌদ্ধ এই শিক্ষাব্যবস্থাই ধর্মকে কেন্দ্র করে প্রসারলাভ করেছিল। দুটি ধর্মের মধ্যে ধর্মীয় আদর্শ, রীতিনীতি ও আচার-আচরণগত বহু মিল পাওয়া যায়।
[6] অবৈতনিক শিক্ষাব্যবস্থা : ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যবস্থা এবং বৌদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে কোনােটিতেই শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অনুদান গ্রহণ করা হত না। বিত্তবান ব্যক্তি, রাজন্যবর্গ বা সমাজ উভয় শিক্ষার ব্যয়ভার গ্রহণ করত। শুধু তাই নয় উভয় ক্ষেত্রেই তারা শিক্ষাব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করত না।
[7] শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে সম্পর্ক : ব্রাহ্মণ্য এবং বৌদ্ধ উভয় শিক্ষাব্যবস্থাতেই শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত মধুর, অনেকটা পিতা-পুত্রের সম্পর্কের মতাে।
[8] সংযম ও শৃঙ্খলা : ব্রাহ্মণ্য ও বৌদ্ধ উভয় শিক্ষাব্যবস্থাতেই শিক্ষার্থীদের যথেষ্ট সংযম এবং কঠোর নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলতে হত।
[9] ভিক্ষাবৃত্তিতে অংশগ্রহণ : ব্রাহ্মণ্য এবং বৌদ্ধ উভয় শিক্ষাব্যবস্থাতেই শিক্ষার্থীদের আবশ্যিক ধর্মীয় কর্তব্য ছিল ভিক্ষাবৃত্তি।
[10] বৃত্তি ও পেশাগত শিক্ষা : ব্রাহ্মণ্য এবং বৌদ্ধ উভয় শিক্ষার ক্ষেত্রেই বৃত্তিমুখী ও পেশাগত শিক্ষাগ্রহণের সুযােগ ছিল।
[11] নারীশিক্ষার ব্যবস্থা : ব্রাহ্মণ্য এবং বৌদ্ধ উভয় শিক্ষাব্যবস্থাতেই নারীশিক্ষার প্রচলন লক্ষ করা যায়।
[12] শিক্ষাদান পদ্ধতি : ব্রাহ্মণ্য এবং বৌদ্ধ উভয় শিক্ষাব্যবস্থাতেই মৌখিক পদ্ধতিতে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা ছিল। এ ছাড়া উভয় ক্ষেত্রেই আলােচনা ও বিতর্কের মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়ার রীতি অনুসৃত হয়।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।