ব্রাহ্মণ্য শিক্ষার অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো

ব্রাহ্মণ্য শিক্ষার অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো

উত্তর : 

ব্রাহ্মণ্য শিক্ষার অবদান : 

ব্রাহ্মণ্য শিক্ষা ছিল বৈদিক শিক্ষার একটু উন্নত রুপ। মূলত ব্রাহ্মণ্যধর্মকে কেন্দ্র করে এই শিক্ষা গড়ে উঠেছিল। এই শিক্ষার সঙ্গে জীবনের যােগ ছিল অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। ব্যক্তির বিকাশে এবং সমাজের উন্নয়নে এই শিক্ষাব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। নীচে সেই বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলােচনা করা হল— 

[1] ব্যক্তিকেন্দ্রিক শিক্ষা : ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যবস্থায় গুরুরা তাদের শিষ্যদের চাহিদা, সামর্থ্য, প্রবণতা, রুচি প্রভৃতিকে গুরুত্ব দিয়েই শিক্ষাদান করতেন। ফলে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের বিকাশ খুবই যথাযথ হত। 

[2] শিক্ষার্থীদের সার্বিক বিকাশে সহায়তা : ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্মভিত্তিক শিক্ষাদানের মাধ্যমে শিষ্যদের আধ্যাত্মিক চেতনার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে তাদের সুপ্ত গুণাবলির সার্বিক বিকাশেও সহায়তা করা হত। 

[3] মানসিক ধৈর্য ও আত্মসংযমের শিক্ষা : ব্রাহ্মণ্য শিক্ষার অপর একটি অবদান হল গুরুগৃহে শিষ্যদের কঠোর ব্ৰম্মচর্য ও আত্মসংযমের মধ্য দিয়ে শিক্ষালাভ করতে হত। ফলে প্রতিটি শিক্ষার্থীর মধ্যে মানসিক ধৈর্য ও আত্মসংযমের গুণের বিকাশ ঘটত। একজন ভালাে মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে গেলে ধৈর্য, আত্মসংযম প্রভৃতি গুণগুলি অপরিহার্য। 

[4] গুরু-শিষ্যের মধ্যে সুসম্পর্ক গঠন : ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা গুরুর বাড়িতে তথা গুরুগৃহে দীর্ঘকাল অতিবাহিত করায় গুরুর সাথে পিতা-পুত্রের মতাে সম্পর্ক গড়ে উঠত। এই নিবিড় ও প্রীতিপূর্ণ সম্পর্ক গঠনের অভ্যাস শিক্ষার্থীকে পরবর্তী জীবনে সমাজের অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষদের সাথে সহাবস্থানে বিশেষভাবে সাহায্য করত। 

[5] চরিত্রবান মানুষ সৃষ্টি : ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যবস্থায় গুরুগৃহের আচার-আচরণ ও কর্মপদ্ধতির মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের সৎ ও চরিত্রবান মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। সৎ-চরিত্রবান মানুষ সৃষ্টি যে-কোনাে শিক্ষার মূল লক্ষ্য।

[6] শৃঙ্খলা বা নিয়মানুবর্তিতার পার্ট : ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদেরকে গুরুগৃহের যাবতীয় নিয়মকানুন যথাযথভাবে মেনে চলতে হত। নিয়মানুবর্তিতাতে ঘাটতি দেখলে, গুরু সেই শিষ্যকে গুরুগৃহ থেকে বিতাড়িত করতেন। ফলে শিষ্য বা শিক্ষার্থীদের মধ্যে শৃঙ্খলা বা নিয়মানুবর্তিতা মেনে চলার অভ্যাস গড়ে উঠত।

[7] অবৈতনিক শিক্ষা : ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের থেকে কোনাে প্রকার অর্থ বা বেতন গ্রহণ করা হত না। ফলে বহু দরিদ্র শিক্ষার্থী পঠনপাঠনের সুযােগ পেত। 

[8] প্রাকৃতিক পরিবেশে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা : ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদেরকে প্রাকৃতিক পরিবেশে শিক্ষাদান করা হত। প্রাকৃতিক পরিবেশে পঠনপাঠন শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে খুব উপযােগী।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!