ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যাবস্থার সীমাবদ্ধতা বা ত্রুটি সংক্ষেপে আলোচনা করো

ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যাবস্থার সীমাবদ্ধতা বা ত্রুটি সংক্ষেপে আলোচনা করো

উত্তর : 

ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা বা ত্রুটি : 

প্রাচীন ভারতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন ঘটেছিল। ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যবস্থা এই জাতীয় একটি শিক্ষাব্যবস্থা। ঐতিহাসিকদের মতে, এই শিক্ষাব্যবস্থা আদি বৈদিক শিক্ষার উন্নত রূপ। এতে প্রশাসনিক নিয়মের শৃঙ্খলা না-থাকলেও এই শিক্ষাব্যবস্থা ছিল সুসংগঠিত, সুনির্দিষ্ট এবং লক্ষ্যমুখী। এই শিক্ষার অবদান অনস্বীকার্য হলেও এতে অনেকগুলি ত্রুটি বা সীমাবদ্ধতা লক্ষ করা যায়। নীচে ব্রাহ্মণ্য শিক্ষার ত্রুটি বা সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করা হল—

[1] ধর্মকেন্দ্রিকতা : ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যবস্থা মূলত ধর্মকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল। শিক্ষার্থীরা বেশিরভাগ সময়জুড়ে বিভিন্ন ধরনের পূজার্চনা বা ধর্মাচরণে ব্যস্ত থাকত। বাস্তব জীবনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অধিকাংশ বিষয় চর্চার বাইরে থেকে যেত।

[2] ব্রাহ্মণ নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা : ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যবস্থাটি পুরােপুরি ব্রাহ্মণ সমাজের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হত। এর ফলে শিক্ষার সঠিক প্রসার ব্যাহত হত।

[3] বেদ ও যাগযজ্ঞের ওপর অধিক গুরুত্ব : ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যবস্থায় বেদপাঠ ও বেদ অনুশীলনের ওপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হত। এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা গুরুর সাথে যাগযজ্ঞের কাজেই ব্যস্ত থাকত। ফলে শিক্ষার অন্যান্য দিকগুলি পুরােপুরি অবহেলিত হত। 

[4] সংস্কারধর্মী শিক্ষা : ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যবস্থা ছিল অনুদার, সংস্কারধর্মী শিক্ষা। এটিতে কেবলমাত্র মুখস্থবিদ্যা বা কতকগুলি বিষয় মনে রাখার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হত। বিচারবিশ্লেষণ, কল্পনাশক্তি বা মেধার প্রয়ােগের ওপর কোনােরূপ গুরুত্ব দেওয়া হত না। 

[5] জীবনমুখিতার অভাব : ব্রাহ্মণ্য শিক্ষায় পাঠক্রমে জীবনমুখিতার যথেষ্ট অভাব লক্ষ করা যায়। অর্থাৎ পাঠক্রমের বিষয়গুলির বেশিরভাগ অংশই ব্যক্তিজীবনের সঙ্গে সঠিক অর্থে সম্পর্কযুক্ত ছিল না। 

[6] অগণতান্ত্রিক শিক্ষাব্যবস্থা : ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যবস্থায় কেবল ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় এবং বৈশ্যদেরকে শিক্ষার সুযােগ দেওয়া হত। শূদ্রদেরকে শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা হত। তাই এটিকে অগণতান্ত্রিক শিক্ষাপদ্ধতি হিসেবে বিবেচনা করা যায়।।

[7] বৃত্তি শিক্ষার অভাব : ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যবস্থায় বেদপাঠ ও আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিতে গিয়ে বৃত্তিশিক্ষাকে পুরােপুরি অবহেলা করা হত। অথচ মানুষের জীবনধারণের জন্য বৃত্তিমুখী শিক্ষা বিশেষভাবে প্রয়ােজনীয়। 

[8] একঘেয়েমি শিক্ষা : ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের গুরুগৃহেদীর্ঘকাল একভাবে বসবাস এবং একধরনের আচরণবিধি পালনের ফলে একঘেয়েমি মনােভাব সৃষ্টি হত। যার জন্য বহু শিক্ষার্থী পঠনপাঠনের প্রতি অনাগ্রহী হয়ে উঠত।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment