ধারণার বৈশিষ্ট্য গুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো
উত্তর :
ধারণার বৈশিষ্ট্য :
সংবেদন ও প্রত্যক্ষণের পরবর্তী স্তর বা পর্যায় হল ধারণা। ধারণা হল সাধারণীকৃত প্রত্যক্ষণ। যখন কোনাে ব্যক্তি কোনাে বিশেষ শ্রেণির অন্তর্গত একাধিক বস্তুকে দ্যাখে তখন সেগুলির মধ্যে বৈসাদৃশ্য থাকলেও যে সাধারণ গুণগুলি চোখে পড়ে, সেগুলির ভিত্তিতে একটি ধারণা গঠিত হয়। ধারণার বৈশিষ্ট্যগুলি নীচে সংক্ষেপে আলােচনা করা হল—
[1] প্রত্যক্ষণজাত অভিজ্ঞতা : অনুশীলন বা চর্চার মাধ্যমে ধারণা গঠন করা সম্ভব হলেও প্রাথমিক অবস্থায় ব্যক্তি বা শিশু প্রত্যক্ষণমূলক প্রক্রিয়ার সহায়তায় ধারণা গঠন করে থাকে। এই কারণে বলা হয়, ধারণা গঠন প্রত্যক্ষণের ওপর নির্ভরশীল প্রত্যক্ষণমূলক অভিজ্ঞতার সীমানা যত বাড়বে ধারণার পরিধিও তত বিস্তৃত হবে।
[2] বস্তুগত অভিজ্ঞতা : শৈশবে ব্যক্তির মধ্যে বস্তুগত অভিজ্ঞতার সহায়তায় ধারণা গঠনের কাজ শুরু হয়। বিভিন্ন মূর্ত বিষয়, যেমন—পশুপাখি, গাছপালা ইত্যাদি বিষয়ে ধারণার গঠনের সময় বস্তুগত অভিজ্ঞতার দরকার হয়। আবার ব্যক্তির বয়স বাড়ার পরে বিমূর্ত ধারণা, যেমন—সততা, গণতন্ত্র প্রভৃতি বিষয়কে কেন্দ্র করে ধারণা গড়ে ওঠে। তবে বিমূর্ত ধারণা গঠনের ক্ষেত্রে চিন্তাশক্তি, বিচারবিশ্লেষণ ক্ষমতা প্রভৃতি মানসিক প্রক্রিয়াগুলির দরকার হয়।
[3] ব্যক্তিগত বৈষম্য : ধারণা গঠনের ক্ষেত্রে ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে পার্থক্য লক্ষ করা যায়। দুজন ব্যক্তি একই বস্তুকে একই সময়ে পর্যবেক্ষণ করা সত্ত্বেও সেই বস্তু সম্পর্কে দুজনের ধারণার মধ্যে পার্থক্য ঘটে থাকে। এক-একজন ব্যক্তি আপন দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী ধারণা গঠন করে থাকে অর্থাৎ একই বস্তু একাধিক ব্যক্তির কাছে বিভিন্ন ধারণা তৈরি করতে পারে।
[4] যথার্থতা : ধারণার একটি বৈশিষ্ট্য হল যথার্থতা। কোনাে বিষয় বা বস্তু সম্পর্কে ধারণার যথার্থতা নির্ভর করে। অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা সেই ধারণার অর্থ ও সংজ্ঞার ক্ষেত্রে কতখানি একমত পােষণ করেছেন তার ওপর।
[5] ধারণার সঞ্চালন : ধারণার একটি অতিগুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। হল— এর সঞ্চালনশীলতা। কোনাে একটি বিষয় সম্পর্কে সঠিক ধারণা গড়ে উঠলে, ওই ধারণাটি অন্য বিষয় সম্পর্কিত সমস্যা সমাধানের জন্যেও ব্যবহৃত হয়। বাস্তবজীবনে লক্ষ করা যায় গণিত ও বিজ্ঞানের ধারণা ব্যক্তিজীবনের বহু সমস্যা সমাধানে সহায়ক হয়।
[6] জটিল প্রক্রিয়া : ধারণা গঠন একটি জটিল প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়াটি কতকগুলি পর্যায়ের মধ্য দিয়ে সংঘটিত হয়। এই পর্যায়গুলি হল পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ, তুলনা, পৃথকরণ, সামান্যীকরণ, নামকরণ ইত্যাদি। এই পর্যায়গুলি সঠিকভাবে পরস্পর সম্পাদিত না-হলে, ধারণা গঠনের কাজটি ব্যাহত হয়।
[7] শিখন যােগ্যতা : ধারণা গঠনের ক্ষেত্রে শিখন যােগ্যতার পার্থক্যও লক্ষ করা যায়। যেমন—বই, খাতা, ঘরবাড়ি, পশুপাখি ইত্যাদি বস্তু যেগুলিকে দেখা যায়। অর্থাৎ সেগুলি মূর্ত বস্তু সেগুলির ধারণা সহজে গঠিত হয়। অন্যদিকে সততা, অনুবাৎসল্য ইত্যাদি বিষয় যেগুলিকে দেখা যায় না অর্থাৎ যেগুলি বিমূর্ত বিষয় সেগুলির সম্পর্কে ধারণা গঠন করা বা শেখা সহজ নয়।
[8] ক্ষমতা : বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে কতকগুলি মৌলিক ধারণা থাকে, যেগুলি অন্যান্য ধারণা গঠনের ক্ষেত্রে সাহায্য করে। মৌলিক ধারণাগুলির অন্যান্য ধারণা গঠন করার গুণ বা বৈশিষ্ট্যকে ক্ষমতা বলা হয়।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।