দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যুৎ
ভূমিকা:- গ্রিক পুরাণে বর্ণিত আছে, গ্রিক দেবতা টাইটান প্রেমিথিউস স্বর্গ থেকে আগুনকে চুরি করে এনে মানুষকে দিয়েছিল। সেই আগুনের কল্যাণেই মানবসভ্যতার বিকাশ সম্ভব হয়েছে। তাই মানুষের ইতিহাসে প্রেমিথিউস এবং আগুন চিরস্মরণীয়। তবে এর থেকেও আর কিছুকে যদি আমাদের সভ্যতার বিকাশে বিশেষভাবে মনে রাখতে হয়, তা হল ‘বিদ্যুৎ’। এই বিদ্যুৎ একদা ছিল আকাশচারী। মেঘে মেঘে ঘর্ষণে ভয়াল আকারে আকাশ বিদীর্ণ করে ঝলসে উঠত। এই ভয়ংকর বিদ্যুৎকে মাটিতে নামিয়ে আনার জন্য প্রয়ােজন হয়নি কোনাে প্রেমিথিউস-এর। অরণ্যবাসী আদিম মানুষ একদিন আগুনের আবিষ্কার করল। সেই যুগান্তকারী আবিষ্কারের পর বিজ্ঞানকে আয়ত্ত করে বিদ্যুতের আবিষ্কার হল।
বিদ্যুৎ যখন গৃহভৃত্য:- বস্তু ও গতির মধ্যেকার শক্তিপুঞ্জকে মানুষ ধীরে ধীরে গৃহপালিত পশুর মতাে বেঁধে ফেলেছে কিংবা তাকে একান্তভাবে সমাজ-ভৃত্য বা গৃহভৃত্যে পরিণত করেছে। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে আজ এই সেবক ভৃত্যকে সর্বদাই প্রয়ােজন। বন্দি বিদ্যুৎ আমাদের প্রতিনিয়তই সেবা করে চলেছে।
আলাে, পাখা :- আমাদের প্রতিদিনকার জীবনে বিদ্যুৎ নানাভাবে সেবা করে চলেছে। আমরা সকালবেলা বিছানা থেকে উঠে ঘরের যে সুইচ দুটি ‘অফ’ করি, সে দুটি হল, বিদ্যুৎচালিত আলাে এবং পাখার। রাতে মৃদু আলাে জ্বলে ঘরে। এই আলাে জ্বালায় বিদ্যুৎ। শয়নকক্ষটি যাতে গরমে দুঃসহ না-হয়, তার জন্য চলে বৈদ্যুতিক পাখা। আজকাল বিদ্যুৎ ছাড়া বিনােদন হয় না—টিভি, রেডিয়াে, সিনথেসাইজার প্রভৃতি বিদ্যুৎ ছাড়া চলে না।।
সারাদিনই বিদ্যুতের ব্যবহার, টেলিফোন ইত্যাদি:- প্রতিদিন সকালে ছাদের ওপর জলের যে-ট্যাংক রয়েছে, এই ট্যাংক ভর্তি করা হয় যে-পাম্প এবং মােটর ব্যবহার করে, তাও বিদ্যুৎচালিত। আমরা অনেকেই সকালবেলা প্রাতরাশের টেবিলে যে-খাবার খাই, তা আসে। ইলেকট্রিক ওভেন’ থেকে। বাড়িতে অতিথি আসে কলিং বেল বাজিয়ে। বলা বাহুল্, বিদ্যুৎ-ই ওই বেলকে বাজায়। টেলিফোনের মাধ্যমে আমরা যে-যােগাযােগ রক্ষা করি, তা সম্ভব হয় ইলেকট্রিককে ব্যবহার করে। প্রভাতী সংবাদপত্রগুলি আমাদের কাছে যে এসে হাজির হয়, তা সম্ভব হয় বিদ্যুতচালিত মুদ্রণযন্ত্রের সাহায্যে। আধুনিক জীবনযাত্রায় ফ্রিজকে বাদ দিয়ে চলা অসম্ভব। বিদ্যুতের সাহায্যেই সে সবরকম সবজি এবং খাবারকে রক্ষা করে।
বিদ্যুতের অপরিহার্যতা:- ঠান্ডা মাথায় একটুখানি ভাবলেই দেখা যায়, বাতাস এবং জল যেমন আমাদের জীবনে অপরিহার্য, তেমনি অপরিহার্য হল এই বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ নীরবে চালিয়ে যাচ্ছে বড়াে বড়াে কলকারখানা, বড়াে বড়াে শিল্প। ইদানীং কালে যে কম্পিউটার এবং ইলেকট্রনিক্স নিয়ে আমাদের গর্ব, মুহূর্তে তা অচল হয়ে যায়, যদি-না বিদ্যুৎ থাকে। বিদ্যুৎ ছাড়া অচল হয়ে যায় পরিবহণ ব্যবস্থাও। ট্রেন, ট্রাম চলে না বিদ্যুৎ ব্যতিরেকে। গবেষণাগারগুলিও বিদ্যুৎ ছাড়া অচল। অচল জল সরবরাহ ব্যবস্থাও। বিদ্যুৎকে বাদ দিয়ে আধুনিক জীবনযাত্রা অচল এবং কতখানি অচল, মাঝে মাঝে লােডশেডিং-এর উৎপাত তা আমাদের জানিয়ে দেয়।
উপসংহার:- আধুনিক জীবনে বিদ্যুৎশক্তি এক অপরিহার্য উপাদান। বিদ্যুৎশক্তি মানুষের জীবন ও জীবিকার সর্বস্তরে প্রভাব বিস্তার করে। বিদ্যুৎ ব্যতিরেকে আধুনিক সভ্যতার গতিময়তা থমকে দাঁড়াবে।
আরো পড়ুন
দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানমনস্কতা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
জনসাধারণের মধ্যে বিজ্ঞানচেতনার প্রসার – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।